সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন
রাকিবুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর জল-জঙ্গলের মায়াবী ডাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জবিসাস) সদস্যরা ঘুরে এলেন টাঙ্গুয়ার হাওড় ও মেঘালয়ের পাদদেশে ঘেরা তাহিরপুর। স্থানীয়দের কাছে ‘নয় কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত এ হাওড়ের জলরাশি আর তাহিরপুরের পাহাড়ি সৌন্দর্য তাদের এ ভ্রমণকে করে তুলেছে স্মরণীয়। নৌকায় হাওড় পাড়ি দেওয়া, জলে গোসলের আনন্দ আর তাহিরপুরের প্রাকৃতিক নিসর্গ উপভোগের মাধ্যমে জবিসাসের সদস্যরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন।
হাওড়ের অপরূপ সৌন্দর্য
টাঙ্গুয়ার হাওড়, সুনামগঞ্জের একটি রামসার সাইট, তার বিশাল জলরাশি আর সবুজের সমারোহে বিখ্যাত। এ হাওড়ের জলের মাঝে ভাসমান গাছপালা, দূরে পাহাড়ের রেখা আর পাখির কলকাকলি যেন একটি জীবন্ত পেইন্টিং।
জবিসাসের সদস্যরা নৌকায় চড়ে হাওড়ের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখেন। ওয়াচ টাওয়ারের কাছাকাছি জায়গাটি ছিল তাদের প্রথম গন্তব্য। এখানে জলের ওপর ভাসমান গাছের সারি আর সূর্যের আলোর ঝিকিমিকি দৃশ্য ছিল মনোমুগ্ধকর। এ ছাড়া লাকমা বিলের কাছে গিয়ে তারা দেখেন স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, যা হাওড়ের জীবনযাত্রার একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে।
টাঙ্গুয়ার হাওড়ের স্বচ্ছ জলে গোসল ছিল এ ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ। নৌকা থেকে নেমে জবিসাসের সদস্যরা হাওড়ের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জলের শীতল স্পর্শ আর চারপাশের প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য তাদের মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। কেউ কেউ জলে ভেসে গান গাইছিলেন, কেউবা ক্যামেরায় বন্দি করছিলেন সেই মুহূর্ত। জবিসাসের সদস্য ও সহ-সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘হাওড়ের জলে গোসল করার সময় মনে হচ্ছিল, যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে গেছি।’ সূর্যের আলোয় জলের ঝকঝকে রূপ আর সঙ্গীদের হাসি-আনন্দ এ মুহূর্তগুলোকে আরও রঙিন করে তুলেছিল।
পাহাড়-জলের তাহিরপুরে
হাওড় ভ্রমণের পর জবিসাসের দল পৌঁছে যায় তাহিরপুরে। যেখানে মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য উজাড় করে রেখেছে। তাহিরপুরের একটি জনপ্রিয় স্পট হলো বড়হিল; যেখানে পাহাড় আর জলের মিলন একটি অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করে। এখানে দাঁড়িয়ে সদস্যরা মেঘালয়ের পাহাড়ের রূপ উপভোগ করেন। এ ছাড়া তাহিরপুরের স্থানীয় বাজারে তারা স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেন। নানা বাহারি পিঠা আর স্থানীয় চা তাদের ভ্রমণের স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা আর তাদের জীবনযাত্রার সরলতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। জবিসাসের সভাপতি ইমরান হুসাইন এ ভ্রমণ সম্পর্কে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওড় আর তাহিরপুরের এ ভ্রমণ আমাদের সবার জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির এত কাছাকাছি এসে আমরা শুধু তার সৌন্দর্যই উপভোগ করিনি, আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধনও আরও গভীর হয়েছে। হাওড়ের জলে গোসল, তাহিরপুরের পাহাড়ি পথে হাঁটা আর স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে আমরা জীবনের সত্যিকারের আনন্দ খুঁজে পেয়েছি।’
জীবন রাঙাই নতুন রঙে
ভ্রমণটি শুরু হয় রাতে, যখন জবিসাসের সদস্যরা সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। সকালে পৌঁছিয়ে সেখান থেকে তারা নৌকায় চড়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখেন। লাকমা বিল আর বড় হাওড়ের বিভিন্ন কোণে তারা সময় কাটান। দুপুরে হাওড়ের জলে গোসল আর নৌকায় বসে স্থানীয় খাবার উপভোগ করেন। এরপর তারা তাহিরপুরে পৌঁছে বড় হিলের কাছে পাহাড়ি পথে হাঁটেন এবং স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যার দিকে তারা ফিরতি পথে রওয়ানা দেন। রাতে হাওড়ের দৃশ্য ম্লান চাঁদের আলোয় অনন্য হয়ে ওঠে। টাঙ্গুয়ার হাওড় ও তাহিরপুরের এ ভ্রমণ জবিসাসের সদস্যদের জন্য ছিল প্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে যাওয়ার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। হাওড়ের পানি, তাহিরপুরের পাহাড় আর সঙ্গীদের হাসি-আনন্দ মিলে এ যাত্রা হয়ে উঠেছে এক অমূল্য স্মৃতি। জবিসাসের এ ভ্রমণ প্রমাণ করে প্রকৃতির কাছাকাছি এলে মনের সব ক্লান্তি দূর হয়, আর জীবন নতুন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে।
