Logo
Logo
×

ক্যাম্পাস তারুণ্য

সাফল্যের পথে

ধারাভাষ্যে স্বপ্ন বুনছেন ইকবাল

Icon

শরীফুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাঠে খেলা দেখতে দেখতে অনেক ছেলেই স্বপ্ন দেখে একদিন ফুটবলার হবে। কিন্তু কেউ কেউ খেলার উত্তেজনা, দর্শকদের থমকে যাওয়া মুহূর্ত আর সবুজ মাঠের আবেগ নিজের কণ্ঠে পৌঁছে দিতে চায় মানুষের কাছে। সেই স্বপ্নই বড় হয়ে উঠেছে ইকবাল মাহমুদের জীবনে। ছোটবেলার টানাপোড়েন, সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়েই বড় হয়েছেন তিনি। দিনভর মাঠে খেলা আর রাতে টিভির সামনে খেলা দেখা-এভাবেই গড়ে উঠেছে তার শৈশব। সেই গভীর অনুরাগই ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে গেছে ধারাভাষ্যকার হওয়ার পথে। শৈশব-কৈশোরের নানা বাধা পেরিয়ে আজ তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ভাইভাটা ছিল তার কাছে শেষ সুযোগ-ব্যর্থ হলে হয়তো স্বপ্নই বদলে যেত। কিন্তু সব চাপ সামলে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন নিজের কাঙ্ক্ষিত বিভাগে, যেখানে খুলেছে তার নতুন পথচলার দুয়ার।

স্কুলজীবনেই শুরু হয় তার ধারাভাষ্যের যাত্রা। নওগাঁর কালিকাপুর চক-কালিকাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্বাধীনতা দিবসের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম মাইক্রোফোন হাতে নেন তিনি। স্থানীয় টুর্নামেন্টে নিয়মিত কথা বলতে বলতে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাস। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের পরিচিত ধারাভাষ্যকার প্রফেসর আবদুস সালামের নজরে আসা তার জীবনের বড় মোড় ঘোরানো মুহূর্ত; তার উৎসাহ ও দিকনির্দেশনা ইকবালকে সামনে এগোতে আরও সাহস জুগিয়েছে। তবে কলেজে ওঠার পর পড়াশোনার চাপ বাড়ায় ধারাভাষ্যে কিছুটা বিরতি এলেও মাঠে যারা শুনতেন, তারাই জানতেন ইকবালের কণ্ঠের শক্তি।

রাজশাহীতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার টুর্নামেন্টে ধারাভাষ্য করতেন। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল। শৈশবের বন্ধু সুমনের হাত ধরে তিনি প্রথমবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আয়োজিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ধারাভাষ্য দেওয়ার সুযোগ পান। চট্টগ্রাম আবাহনী বনাম ফর্টিস এফসির সেই ম্যাচের ধারাভাষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বিশাল প্রশংসা মেলে। এরপর আসতে থাকে একের পর এক ডাক। দক্ষতা বাড়াতে তিনি নিয়মিত দেশি-বিদেশি ফুটবল, পরিসংখ্যান ও খেলোয়াড়দের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়েও সম্প্রসারিত হয় তার জ্ঞান।

২০২৪ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যুক্ত হয় সাংবাদিকতার চর্চা। দেশের শীর্ষ কয়েকটি গণমাধ্যমে ক্রীড়া নিয়ে লেখা শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে ধারাভাষ্যও চলতে থাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় টুর্নামেন্ট, বাফুফের অনূর্ধ্ব-১৭ ও আন্তঃকলেজ ফুটবল, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কাপ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুর্নামেন্ট-সব জায়গায়ই শোনা গেছে তার কণ্ঠ। ময়মনসিংহ টি-১০ টেপ-টেনিস ক্রিকেটেও তিনি ধারাভাষ্য দিয়েছেন। এমনকি একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের স্পোর্টস প্রোগ্রামের ভাইভাতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, যদিও চাকরির স্থান দূরে হওয়ায় যোগ দেননি।

ইকবাল এখনই কমেন্ট্রি বা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে চূড়ান্ত ক্যারিয়ার হিসাবে ঘোষণা করতে চান না। তবে খেলাধুলা তার প্যাশন, আর এ ক্ষেত্রের প্রতি ভালোবাসা তাকে ধীরে ধীরে এগোতে অনুপ্রাণিত করে। বিপিএলে নিয়মিত ধারাভাষ্য করা, মোহামেডান-আবাহনীর মতো ঐতিহ্যবাহী ম্যাচে কথা বলা-এসব রয়েছে তার ইচ্ছার তালিকায়। আর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন-যেদিন বাংলাদেশ কোনো বড় টুর্নামেন্টে জিতবে, সেদিন তার কণ্ঠে দেশ উদযাপন করবে সেই গৌরবময় জয়। পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়েও জাতীয় পর্যায়ে কাজ করতে চান তিনি। নতুন প্রজন্মের ক্রীড়ামনস্ক এক তরুণ হিসাবে ইকবাল স্বপ্ন দেখেন-নিজের কণ্ঠ আর ভালোবাসা দিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াকে আরও দূরে এগিয়ে নেওয়ার।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম