৫০০ কোটি পাউন্ডের বিটকয়েন নিয়ে পালানো সেই ‘ক্রিপ্টোকুইনের’ বিলাসী জীবন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
৫০০ কোটি পাউন্ডের বিটকয়েন নিয়ে পালানো ‘ক্রিপ্টোকুইন’ চিয়ান ঝিমিন। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চীনা পুলিশ হাজারও প্রবীণ নাগরিকের পেনশন লুটের অভিযোগে যে নারীকে অভিযুক্ত করেছে, তিনি এখন যুক্তরাজ্যে মানি লন্ডারিং মামলার রায় শোনার অপেক্ষায় আছেন। তার নাম চিয়ান ঝিমিন, বয়স ৪৭ বছর। চীনে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন এবং উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় একটি বিলাসবহুল প্রাসাদবাড়ি ভাড়া নেন, মাসিক ভাড়া প্রায় ১৭ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২২ হাজার ৭০০ ডলার)। এক বছর পর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ করে—যা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো জব্দ অভিযান হিসেবে বিবেচিত হয়।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, চীনের এক লাখেরও বেশি মানুষ তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন। কোম্পানির নাম ছিল লানতিয়ান গেরুই। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করতো, তারা উচ্চপ্রযুক্তির স্বাস্থ্যপণ্য তৈরি করছে এবং বিটকয়েন মাইনিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেবে। কিন্তু বাস্তবে সব অর্থই আত্মসাৎ করা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করলে তিনি পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি নিজেকে ‘অ্যান্টিকস ও হীরার ব্যবসায়ী ধনকুবের উত্তরাধিকারিণী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি ওয়েন জিয়ান নামের এক সাবেক টেকঅ্যাওয়ে রেস্তোরাঁ কর্মীকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন এবং তাকে বিটকয়েন নগদ অর্থ বা সম্পত্তিতে রূপান্তর করার দায়িত্ব দেন। পরে ওয়েন জিয়ান মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড পান। আদালতে তিনি বলেন, চিয়ান দিনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে অনলাইন গেম খেলতেন ও শপিং করতেন, যেন এক ‘ডিজিটাল বিলাসবহুল রানি’।
তবে পুলিশ তার ডায়েরি থেকে আরও চমকপ্রদ তথ্য পায়—একটি ছয় বছরের পরিকল্পনা। সেখানে তিনি একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সুইডেনে একটি দুর্গ কেনা এবং এক ব্রিটিশ ডিউকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল লিবারল্যান্ড নামের ক্ষুদ্র, অস্বীকৃত রাষ্ট্রের রানি হওয়া, যা ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। হ্যাম্পস্টেডে বিলাসবহুল জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি লন্ডনের আরও বড় একটি প্রাসাদ কেনার চেষ্টা করেন টটারিজ কমন এলাকায়। কিন্তু তার সহকারী ওয়েন সেই অর্থের উৎস ব্যাখ্যা করতে না পারায় পুলিশের সন্দেহ জাগে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে তার বাড়ি থেকে একাধিক হার্ডড্রাইভ ও ল্যাপটপ উদ্ধার হয়, যাতে হাজার হাজার বিটকয়েন সংরক্ষিত ছিল। বর্তমান বাজারমূল্যে যার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি পাউন্ড।
চিয়ানের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু চীনা বিনিয়োগকারী এখন যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছেন যেন এই জব্দ করা ক্রিপ্টো সম্পদ বিক্রি করে তাদের কিছু অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। ইউ নামে পরিচিত এক ভুক্তভোগী বলেন যে, ‘আমার বিয়ে ভেঙে গেছে এই প্রতারণার কারণে। আমরা আশা করি যুক্তরাজ্য সরকার, ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস এবং হাইকোর্ট সহানুভূতি দেখাবে। কারণ এখন কেবল এই বিটকয়েনই আমাদের ক্ষতির কিছুটা ফেরত দিতে পারে।’ সাধারণত দাবিহীন অর্থ বৃটিশ সরকারের তহবিলে চলে যায়, তাই অনেকে অনুমান করছেন সরকার হয়তো এই জব্দ সম্পদ থেকে বিপুল আর্থিক সুবিধা পেতে পারে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডিটেকটিভ কনস্টেবল জো রায়ান বলেন, ‘আমরা যত গভীরে গিয়েছি, ততই স্পষ্ট হয়েছে—সে শুধু নিচুস্তরের সদস্য নয়, পুরো প্রতারণার মূল পরিকল্পনাকারী। সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান, চতুর ও প্রভাবশালী। সহজেই বহু মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম।’ এ সপ্তাহেই আদালতে তার শাস্তির রায় ঘোষণা করা হবে।

