ভারতের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঝুঁকি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি: বিলাওয়াল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঝুঁকি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের সাম্প্রতিক কিছু একতরফা পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় সশস্ত্র সংঘাতের সীমারেখা বিপজ্জনকভাবে নিচে নামিয়ে এনেছে।
নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল বলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
৩৬ বছর বয়সি বিলাওয়াল বলেন, এই যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করার জন্য আমরা মার্কিন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আমরা বারবার বলেছি—এটা কেবল শুরু। আমরা চাই, এই বিরতি যেন টেকসই শান্তি ও কূটনৈতিক আলোচনার পথ খুলে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এই সংঘাতের কারণে গোটা অঞ্চল আগের চেয়ে অনেক বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতের সম্ভাব্যতা এখন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
পেহেলগাম হামলা ও পরবর্তী পরিস্থিতি
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা নাকচ করে।
এরপর ভারত একতরফাভাবে সামরিক অভিযান শুরু করে এবং পাকিস্তান দাবি করে, ওই অভিযানে নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
তিন দিন ধরে চলা ‘অপ্ররোচিত’ ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনয়ানুম-মারসুস’ চালায়, যা ইসলামাবাদের ভাষায় আত্মরক্ষামূলক। এই অভিযানে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান (তিনটি রাফালসহ) ও বহু ড্রোন ধ্বংস করে বলে দাবি করে।
প্রায় ৮৭ ঘণ্টা ধরে চলা সংঘাত অবশেষে ১০ মে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে গড়ায়।
আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান পাকিস্তানের
ঘটনার পর ইসলামাবাদ বারবার ভারতের কাছে হামলার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ প্রদানের আহ্বান জানায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলে।
৯ জুন লন্ডনে এক বক্তব্যে বিলাওয়াল বলেন, ভারত কোনো প্রমাণ ছাড়াই পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক তদন্তে সম্মত হয়েছি, কারণ আমরা আত্মবিশ্বাসী যে পাকিস্তান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণেও ইসলামাবাদের অবস্থানকে সমর্থন করা হয়েছে।
বিলাওয়াল আরও বলেন, ভারতে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলার পরপরই পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হয়। ফলে যেকোনো হামলা এখন যুদ্ধের সমান প্রতিক্রিয়া ডেকে আনছে। একইভাবে পাকিস্তানেও এমন ঘটনা ঘটলে তেমনই প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
পানিসংকট ও যুদ্ধ হুমকি
ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকিকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বলে বর্ণনা করে বিলাওয়াল বলেন, এটা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে নতুন করে কোনো আলোচনায় বসার আগে তাদের পুরনো চুক্তি—বিশেষ করে সিন্ধু পানি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।
বেলজিয়ামে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল
ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক ও লন্ডন সফরের পর বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি সংসদীয় প্রতিনিধিদল পৌঁছেছে বেলজিয়ামে।
নয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বেলজিয়ামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে ভারতের ‘প্রস্তুতিপূর্ণ আগ্রাসন’ এবং পাকিস্তানবিরোধী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হবে।
এছাড়া প্রতিনিধিদলটি ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাংক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে।

