ভূমিকম্প থেকে বাঁচাবে বাঁশ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাঁশ গাছ। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঘটনাটি ২০১৬ সালের। ইকুয়েডরে সে বছর ভয়াবহ ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উপকূলীয় শহর মানতা তখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তাঘাটে ফাটল ধরে। ধসে পড়ে অসংখ্য ভবন। ভূমিকম্পের সেই ধকল সামলে উঠতে পারেনি ইট-কংক্রিটের তৈরি সেসব সুউচ্চ ভবন। কিন্তু একই জায়গায় বাঁশের তৈরি রেস্তোরাঁ, ফায়ার স্টেশনসহ একাধিক স্থপনার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি সেগুলো আজও অক্ষত আছে। মানতা শহর এখন আবার আগের রূপ ফিরে পেয়েছে কিন্তু সে বছর ভূমিকম্পে মানুষদের বাঁচিয়েছিল বাঁশ। বিবিসি।
শত শত ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাম্বু অ্যান্ড রাত্তান অর্গানাইজেশন (ইনবার)-এর পরিচালক পাবলো জোকোমে এস্ট্রেলা বলেন, ‘এগুলো সবই ভূমিকম্পের আগে তৈরি করা হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে তারা দাঁড়িয়ে ছিল।’ দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়াতে হাজার হাজার বছর ধরে বাঁশ নির্মাণ সামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে গবেষণা এবং পরীক্ষাগারের শক টেস্টের মাধ্যমে দেখা যায়, ভূমিকম্প প্রতিরোধেরও অনেক বেশি কার্যকরী বাঁশ। বর্তমানে ফিলিপাইন থেকে পাকিস্তান হয়ে ইকুয়েডর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে নির্মাণ প্রকল্পে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি ব্যবহার করতে চাইছে। এ ছাড়াও বাঁশকে প্রকৌশলী এবং স্থপতিরা স্টিলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক ভাবনা শর্মা বলেন, ‘প্রকৃতি এটিকে বাঁকার জন্য নকশা করেছে। বাঁশের ফাঁপা কাণ্ড হালকা হওয়ায় কাঠামোর ভর কমিয়ে দেয়। গবেষণা দেখায় যে এর নমনীয়তা এটিকে ভূমিকম্পের ধাক্কা শোষণ করতে দেয়। ইউকে-ভিত্তিক পরামর্শক সেবাস্টিয়ান কামিনস্কি বলেন, মানাবীর ১২০০-এর বেশি ভবনের ওপর চালানো সমীক্ষায় দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে, কংক্রিটের ভবনে কাঠ এবং বাঁশের ভবনের চেয়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি ছিল। ফলে ২০২১ সালে শুরু হওয়া একটি প্রকল্পে মাসাবিতে শত শত নতুন বাঁশের বাড়ি তৈরি করেছে। প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীকে নতুন নির্মাণ কৌশল শেখানো হয়। জোকোমে এস্ট্রেলা বলেন, একটি দুই বেডরুমের বাড়ি তৈরি করতে ২০,০০০ ডলারের কম খরচ হয়। ২০১৪ সাল থেকে বেস বাহাই ফিলিপাইনে ৮০০-টিরও বেশি বাঁশের বাড়ি তৈরি করেছে। এই বাড়িগুলো কম্পোজিট বাঁশের শিয়ার ওয়াল দিয়ে তৈরি, যা ঘূর্ণিঝড় সহ্য করেছে। ইনবার-এর ইঞ্জিনিয়ার লিউ কেওয়েই বলেন, ‘এটি ভূমিকম্পের জন্য যথেষ্ট হালকা এবং ঘূর্ণিঝড়ের জন্য যথেষ্ট ভারী।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থপতিরা সবসময় বলেন প্রাকৃতিক বাঁশ ঈশ্বরের উপহার। কারণ প্রকৃতি এ ধরনের গাছপালা ফাঁপা উপায়ে তৈরি করেছে।’ বাঁশকে স্ট্যান্ডার্ড বিল্ডিং কোডে অন্তর্ভুক্ত করা কঠিন কারণ প্রাকৃতিক বাঁশের কাণ্ডগুলো আকারে ভিন্ন হয়। তবুও ১৯৯৯ সালের কলম্বিয়া ভূমিকম্পের পর থেকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বাঁশ বিল্ডিং কোডগুলো গ্রহণ করেছে। পেরু, ইকুয়েডর, বাংলাদেশ, ভারত এবং মেক্সিকোর সরকারও জাতীয় বাঁশ কোড তৈরি করেছে। কামিনস্কি বলেন, ভূমিকম্পে বাঁশের ভবনের আচরণ নির্ভর করে এটি কতটা ভালোভাবে নকশা করা।
