Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারতজুড়ে গণবিক্ষোভ নিয়ে চাপে মোদি

Icon

কলকাতা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

ভারতজুড়ে গণবিক্ষোভ নিয়ে চাপে মোদি

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গণবিক্ষোভ যে শাসক শক্তির ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে তা নতুন নয়। বাংলাদেশের রাজপথে দীর্ঘ আন্দোলন, নেপালে জনতার ক্ষোভ কিংবা শ্রীলংকার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ-সবই দেখিয়েছে সাধারণ মানুষের রোষের সামনে ক্ষমতাসীনদের টিকে থাকা কতটা কঠিন। সেই আগুনের ছোঁয়া এখন ভারতেও ধরা দিচ্ছে। 

দেশের নানা প্রান্তে বিচিত্র ইস্যু ঘিরে জনবিক্ষোভ ফেটে পড়ছে। বিরোধীরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আবার সাধারণ মানুষের ক্ষোভও আরও জোরালো হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় অচলাবস্থা মণিপুরে। টানা দুই বছর ধরে সাম্প্রদায়িক হিংসায় প্রাণ গেছে আড়াইশরও বেশি মানুষের। প্রায় ষাট হাজারের বেশি মানুষ আজও শিবিরে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন। 

গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। বিরোধীরা বলছে, মোদি সরকার ইচ্ছে করেই দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করে রেখেছে, নিরপেক্ষ সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, মণিপুরে মানুষ মরছে, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, আর সরকার শুধু ভোটের হিসাব কষছে। 

প্রিয়াংকা গান্ধীর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যদি একটি দিনও সেখানে গিয়ে মানুষের চোখের জল মুছতে না পারেন, তবে সেই সরকার শুধু নিজের দলের। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেছেন, উন্নয়নের নামে প্রকল্প উদ্বোধন করা যায়, কিন্তু রক্তাক্ত মণিপুরের পাশে দাঁড়াতে এই সরকার অক্ষম। 

উত্তর-পূর্বের প্রতিবাদের আগুন এবার আসামে ছড়িয়ে পড়েছে। নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের আশঙ্কা প্রবল। বিশেষত বাংলাভাষী পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে, তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ভয় প্রতিদিন গ্রাস করছে তাদের। 

সম্প্রতি রাজ্যের নানা প্রান্তে ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সংগঠন রাস্তায় নেমে মিছিল করেছে, আমরা ভারতীয়, আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না। এই স্লোগান উঠেছে সর্বত্র। আসামে একাধিক মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়েছে।

অন্যদিকে বিহারে শুরু হয়েছে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে বিক্ষোভ। বিরোধীরা একযোগে বলছে, এটি আসলে ভোটচুরির বৈধ প্রক্রিয়া। 

রাজধানী পাটনা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল-সর্বত্র মিছিল, অবরোধ, প্রতীকী অনশন চলছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলেছেন, এটি গণতন্ত্র ধ্বংসের যন্ত্র। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরোধী শিবিরও তীব্র সুর তুলেছে। 

আদালতও জানিয়েছেন, নাগরিককে যথাযথ সুযোগ না দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া যাবে না। এতে আন্দোলনকারীদের জোর আরও বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি উত্তর-পূর্ব থেকে বিহার পর্যন্ত বিরোধী কণ্ঠরোধ করছে। বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে-এটি সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। 

আসাদুদ্দিন ওয়েইসির কণ্ঠেও শোনা গেছে ক্ষোভ, এই সরকার মুসলমান, দলিত, উত্তর-পূর্ব ও বাংলাভাষী মানুষ-সবার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আজ প্রতিবাদ না করলে আগামীকাল আর কেউ নিরাপদ থাকবে না।

দক্ষিণ ভারতের আবহাওয়াতেও বিজেপি-বিরোধী স্লোগান জোরদার হয়েছে। অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হওয়া বিজয় বলেছেন, চোল ঐতিহ্যের নামে নাটক মঞ্চস্থ করে বিজেপি ভোট চাইছে। খননকার্যের সত্য গোপন করে এখন নাটক দেখানো হচ্ছে। তার দল স্পষ্ট ঘোষণা করেছে, বিজেপির সঙ্গে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়।

এদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন কেটে গেল নীরবতায়। ৭৫ বছরে পদার্পণ করলেন তিনি, কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে বড় আয়োজন ছিল না। 

বিজেপি অভ্যন্তরে এটিকে অনেকে ইঙ্গিত হিসাবেই দেখছেন-দলের ভেতরেই মোদি এখন অনেকটা একঘরে। বিরোধীরা বলছে, যে নেতা নিজের জন্মদিনে দলের কাছ থেকেও সম্মান পান না, তার জনপ্রিয়তার গ্রাফ যে নামছে তা স্পষ্ট।

সব মিলিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম-ভারতের সর্বত্র অসন্তোষ জমছে। কর্মসংস্থানের অভাব, মূল্যবৃদ্ধি, মণিপুরের রক্তপাত, আসামের নাগরিকপঞ্জি, বিহারের ভোটার তালিকা বাদ পড়া-সবকিছুর জন্যই সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। 

বিরোধী নেতারা সেই ক্ষোভকে সংগঠিত রূপ দিতে চাইছেন। রাহুল গান্ধী, প্রিয়াংকা, খাড়গে, মমতা ব্যানার্জি, ওয়েইসি কিংবা দক্ষিণ ভারতের নতুন নেতৃত্ব-সবার কণ্ঠে এক সুর, ভারতও দক্ষিণ এশিয়ার গণবিক্ষোভ থেকে মুক্ত নয়।

প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ডাক দিলেও বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। বিরোধীরা স্পষ্ট জানাচ্ছে, মোদি সরকার চাপের মুখে। আর এই গণবিক্ষোভ ক্রমশই দেশের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা হয়ে উঠছে। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম