Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা খাজা আসিফের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম

আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা খাজা আসিফের

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ফাইল ছবি/সংগৃহীত

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও চাপে ফেলতে পারে, যা পাকিস্তান মোটেও চায় না।

জিও নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‌‘আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কখনোই খুব মধুর ছিল না। এখন সন্ত্রাসবাদ আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান সবসময় মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে প্রতিবেশী সম্পর্ক চায়।’ একইসঙ্গে আফগানিস্তানকে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।


তালেবান সরকারের গাফিলতির কারণে আফগান মাটিতে কার্যরত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ায় এই উত্তেজনা আরও প্রকট হয়েছে।

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে, সীমান্তপারের সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

দুই দেশের মধ্যে প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার বিভিন্ন ক্রসিং পয়েন্ট আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটি পাকিস্তানের কাছে সব সময়ই মূল উদ্বেগের বিষয়। ইসলামাবাদ বারবার কাবুলকে আহ্বান জানিয়েছে, আফগান ভূমি যেন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীর হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে উপস্থাপিত একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে কাবুল ও টিটিপির মধ্যে সরাসরি যোগসূত্রের কথাও উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান প্রশাসন টিটিপিকে লজিস্টিক, অপারেশনাল ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

আজকের সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‘যে এলাকায় সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নেয়, সেই এলাকার মানুষ সাধারণত জানে কারা এসেছে। কেউ যদি বাইরে থেকে আসে, তিন দিনের মধ্যেই তা বোঝা যায়।’ 

তিনি আরও যোগ করেন, এ বিষয়ে নীরব থাকা মানে আংশিক সম্মতি দেওয়া।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিদের কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না।’

পাকিস্তান টানা চার দশকের বেশি সময় ধরে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে—সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু করে ২০২১ সালে তালেবান পুনর্দখল পর্যন্ত। অনেকে পাকিস্তানেই জন্মেছে ও বেড়ে উঠেছে, আবার কেউ তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে অবৈধ আফগান নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ৫ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে; কেবল আগস্ট মাসেই ফেরত পাঠানো হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষকে।

নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাকিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীরা আফগানিস্তানভিত্তিক এবং তাদের পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।

ভারত প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক বিবৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা নতুন কোনো ‘অ্যাডভেঞ্চার’ বা উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে।

‘ভারত তাদের অতীতের অপমান ঢাকতে আবারও কিছু করার চেষ্টা করছে,’ মন্তব্য করেন তিনি। ‘তবে পাকিস্তান আগের চেয়ে আরও কঠোরভাবে জবাব দেবে। ভারতের ভুল ধারণা এখন অনেক আগেই ভেঙে গেছে।’


‘সীমান্ত বন্ধ করতে হবে’

এর এক দিন আগে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, পাকিস্তান আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়েছে—দোহা চুক্তির আগে ও পরেও।

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তা শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, আফগানিস্তানের নিজের জন্যও বিপজ্জনক।’

আফগান সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তাদের উচিত সীমান্ত পুরোপুরি সিল করা এবং তাদের ভূখণ্ডকে পাকিস্তানে হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না দেওয়া।’

আইএসপিআর মহাপরিচালক আরও জানান, ভারত আফগান ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে, এবং পাকিস্তান তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কাবুলের হাতে তুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ আমেরিকান অস্ত্র ফেলে রাখা হয়, যার অনেকটাই পরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে চলে গেছে।

‘আফগানিস্তানের উচিত যে তাদের ভূমি অ-রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ব্যবহৃত না হয় সেটা নিশ্চিত করা,’ বলেন তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম