Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানবিরোধী স্বার্থে ‘নারী অধিকার’ ভুলে গেল ভারত

Icon

কলকাতা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২১ পিএম

পাকিস্তানবিরোধী স্বার্থে ‘নারী অধিকার’ ভুলে গেল ভারত

রাজনীতিতে ‘শেষ কথা’ বলে কিছু নেই। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর সেই চিত্রই তুলে ধরল আরও একবার। 

চিরকাল তালেবানকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে এলেও পাকিস্তানবিরোধী স্বার্থে (ভূরাজনৈতিক) সেই তালেবান সরকারকেই দিনশেষে বুকে টেনে নিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার। 

তালেবানের বিরুদ্ধে ‘নারী বিদ্বেষী’ অস্ত্রটিই ছিল ভারতের প্রচার মাধ্যমের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। দশকের পর দশক ধরে নারী অধিকার লঙ্গনের এই তথ্য যুদ্ধেই তালেবানকে ধরাশায়ী করেছে ভারত। 

অথচ দিন শেষে নয়াদিল্লির মাটিতেই তালেবান সরকারের ‘নারী অধিকার’ লঙ্ঘনের মতো লজ্জাজনক ঘটনার শিকার হলেন দেশটির নারী সাংবাদিকরা! আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নিষিদ্ধ! আশ্চর্যের বিষয় হলো-কত সহজেই বিষয়টি মেনে নিল মোদি সরকার। 

শুক্রবারের এই ঘটনা তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ভারতে। এদিন ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গ বৈঠক করেন মুত্তাকি। কয়েকঘণ্টা পরেই একক সংবাদ সম্মেলন করেন আফগান দূতাবাসে। গোল বাঁধে সেখানেই-সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নিষিদ্ধ করে দূতাবাস। 

একাধিক নারী রিপোর্টারের অভিযোগ, তারা পোশাকবিধি মেনে এলেও তাদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরপরই অনেক সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তোলেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে!

গুরুতর এই অভিযোগে দ্রুত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত।  শনিবার এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সংবাদ সম্মেলনে ‘ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল না’। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ‘আফগানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের তালিকা মুম্বাইয়ে অবস্থিত আফগান কনস্যুলেট জেনারেল তৈরি করেছিল। আফগান দূতাবাসের এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ড হলেও তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারতীয় সরকারের আইনি এখতিয়ারের বাইরে।’

ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে। বিরোধী দলের নেতারা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্র সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। 

শনিবার সকালে (১১.৪৮ মিনিট) কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার এক্স পোস্টে সরাসরি আক্রমণ করেন মোদিকে। বলেন, ‘যখন একটি প্রকাশ্য মঞ্চে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন আপনি ভারতের প্রত্যেক নারীকে জানান দিচ্ছেন যে আপনি তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সবল নন।’ 

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দেশে নারীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। এই ধরনের বৈষম্যের মুখে আপনার নীরবতা ‘নারী শক্তি স্লোগানের অন্তঃসারশূন্যতা উন্মোচন করে।’ 

একই সময়ে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই ঘটনার বিষয়ে তার অবস্থান ‘স্পষ্ট’ করার দাবি জানান (এক্স পোষ্ট)। প্রশ্ন তোলেন, ‘যে দেশের নারীরা দেশের মেরুদণ্ড এবং গর্ব, সেই দেশে ভারতের সবচেয়ে সক্ষম নারীদের অপমান কীভাবে সহ্য করা হলো?’

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম পুরুষ সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিলেন, ‘আমি মর্মাহত যে আফগানিস্তানের আমির খান মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মতে, পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল তাদের নারী সহকর্মীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করে ওয়াকআউট করা।’

এই বিতর্কের নেপথ্যে রয়েছে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের নারীবিরোধী কঠোর নীতি। তালেবান সরকার নারীদের কাজ করা থেকে শুরু করে শিক্ষার অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। 

সম্প্রতি আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী অধিকার-সংশ্লিষ্ট বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং লিঙ্গ ও উন্নয়ন, নারী সমাজবিদ্যা, মানবাধিকার, আফগান সাংবিধানিক আইন এবং বিশ্বায়ন ও উন্নয়নসহ ১৮টি কোর্স বাতিল করা হয়েছে। 

এই প্রেক্ষাপটে আফগান দূতাবাসের ঘটনাটি আরও বেশি সমালোচিত হয়েছে। বিতর্কের মধ্যেও মুত্তাকির এই সফরকে ভারত-আফগান সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসাবে দেখা হচ্ছে। মুত্তাকি বৃহস্পতিবার ভারতে পৌঁছান।  

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম