Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

‘ইসরাইলকে একদিনেই ধ্বংস করতে পারে ইরান’

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম

‘ইসরাইলকে একদিনেই ধ্বংস করতে পারে ইরান’

ইরানি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।ছবি: আল-আরাবিয়্যাহ

১২ দিনের যুদ্ধে আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলি ভূখণ্ডে আঘাত হেনে বিশ্বের সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ইরান।দেশটির ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলকে এক নজিরবিহীন নিরাপত্তা দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি করেছিল।

১২ দিনের ওই যুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আবারও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা জাগিয়ে তোলে এবং ‘ইসরাইলের মারাত্মক দুঃস্বপ্নের’ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

সাবেক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইরানের একটি বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে। যা দিয়ে ইরান একদিনেই ইসরাইলকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে’। এমনটাই মনে করেন মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগর।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান একেবারেই যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাদের উল্লেখযোগ্য সামরিক ক্ষমতা রয়েছে। 

ম্যাকগ্রেগরই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। ১২ দিনের ওই যুদ্ধের সময় যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হচ্ছিল এবং অধিকৃত অঞ্চলের গভীরে সেগুলো আঘাত হানছিল, তখন অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও ইরানের প্রশংসা করেন। 

এই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন কৌশলগত তুর্কি বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম কালাশ। তিনি বলেছেন, ‘ইরান ইসরাইলের আয়রন ডোমকে একটি ড্রেনে পরিণত করেছে’।

এই সামরিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, ১২ দিনের সেই যুদ্ধের আগে ইসরাইল নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের সেই আধিপত্য ভেঙে দিয়েছে এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। 

ইব্রাহিম কালাশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং ইরানের ভয়াবহ আক্রমণ প্রতিহত করতে অক্ষম।

যুদ্ধে ইরানের জয়

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত মিশরীয় জেনারেল সামির ফারাজ আরব মিডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেছেন, ১২ দিনের ওই যুদ্ধের সময় ইরানই তার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শত্রুকে বেশি কার্যকর আঘাত দিয়েছে। 

ওই সাক্ষাৎকারে জেনারেল ফারাজ বলেছেন, কেবল ইরানই প্রথমবারের মতো ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ‘প্রকৃত ভয়ের স্বাদ’ দিতে সক্ষম হয়।

তিনি আরও বলেন, ইরানের সামরিক শক্তি ইহুদিদের প্রথমবারের মতো আশ্রয়কেন্দ্রে টানা কয়েক দিন কাটাতে বাধ্য করেছিল। এমনকি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো  প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি কর্মকর্তাদেরও আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। 

উল্লেখ্য, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইসরাইলের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসের গভীরতা থেকে এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইসরাইল।

ইরানের ‘অ্যাপোক্যালিপটিক’ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে পশ্চিমাদের ভয়

‘অ্যাপোক্যালিপটিক’ ক্ষেপণাস্ত্র নামে পরিচিত ইরানের নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতটাই ভীত করে তুলেছে যে, সেগুলোই এখন পশ্চিমা সামরিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।  

এই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আয়রন ডোমের মতো উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে। 

মার্কিন ম্যাগাজিন ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট একটি বিশ্লেষণে স্বীকার করেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবিলায় শক্তিশালী লেজার ব্যবহার করার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, যখন ইরান তার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আপগ্রেড করছে। 

সংবাদমাধ্যমটি স্বীকার করে বলেছে, ফাতাহ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ভেদ করতে এবং সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে।

ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট স্বীকার করেছে, ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলে ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা ইরানের হাইপারসনিক ক্ষমতা সম্পর্কে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। 

ম্যাগাজিনটি জোর দিয়ে বলেছে, ‘এই অস্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাস্তব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই’। কারণ আয়রন ডোম হাইপারসনিক নয়, বরং এটি ধীর, আরও আদিম ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। 

ইসরাইল গত ১৩ জুন ইরান আক্রমণ করেছিল দেশটিকে ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে; কিন্তু তার প্রত্যাশার বিপরীতে যুদ্ধে তারা কেবল তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থই হয়নি, বরং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তাদের স্থাপনাগুলো বারবার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে এবং এর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সুবিধা ধ্বংস হয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা ইরানের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, ইরান পূর্ণ মাত্রার আক্রমণে ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি বা হাইফা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। ইরান এর আগে পশ্চিম এশিয়ায় দুটি মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে তার শক্তি প্রদর্শন করেছিল। শহীদ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন অভিযানের জবাবে দেশটি তার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরাকের আইন আল-আসাদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে। তারপর ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর তারা কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।এসবই ইরানের শক্তি ও সক্ষমতার প্রমাণ।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম