Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ডব্লিউএইচওর সতর্কবার্তা

চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গাজার ১৭ হাজার মানুষ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গাজার ১৭ হাজার মানুষ

মানুষরা গাজার নুসেইরাত অঞ্চলের আল–আউদা হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আসছেন, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫। (এএফপি ফটো)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজার ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা সংকট নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সংস্থাটি জানাচ্ছে, অবরুদ্ধ উপত্যকায় ১৬,৫০০–রও বেশি ফিলিস্তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ডেইলি সাবাহ

ডব্লিউএইচও–এর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বৃহস্পতিবার বলেন, ‌‘এটি সময় ও মানবতার বিবেকের বিরুদ্ধে এক দৌড়। গাজার মানুষদের জরুরি চিকিৎসা না দিলে জীবনহানির ঝুঁকি রয়েছে।’

ড. টেড্রোস তার এক্স পোস্টে জানান, এই সপ্তাহে ডব্লিউএইচও–এর সমন্বয়ে ১৯ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং ৯৩ জন সঙ্গীকে ইতালিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি ইতালির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, `ইতালির সহানুভূতি ও দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে আরও অনেক দেশকে এগিয়ে আসতে হবে, কারণ ১৬,৫০০–রও বেশি মানুষ এখনও জরুরি চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন।’


ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবনের সন্ধান

গাজা থেকে ইতালিতে চিকিৎসা স্থানান্তর হচ্ছে একটি ভঙ্গুর মানবিক করিডরের অংশ। সাম্প্রতিক বহরে ক্যান্সার রোগী, বিস্ফোরণে আহত শিশু এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ রোগীদের স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে হাসপাতালের ধ্বংস ও সংকটজনিত কারণে তাদের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছিল না।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রোগীদের রোম ও মিলানের বিশেষায়িত ট্রমা এবং শিশু ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক মুখপাত্র বলেন, ‘এটি দান নয়, এটি মানবতার দায়িত্ব।’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ডব্লিউএইচও প্রায় ৮,০০০ গাজাবাসীকে বিদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৫,৫০০–রও বেশি শিশু।

এই কার্যক্রমে জর্ডান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রোমানিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, তুরস্ক এবং ইতালির মতো দেশের সহযোগিতা রয়েছে। তবে প্রতিটি নতুন স্থানান্তরের আগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বাধা মোকাবিলা করতে হয়।

ডব্লিউএইচও–এর এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিটি রোগীকে সরিয়ে নেওয়া এক অলৌকিক কাজ। কিন্তু আমরা যাকে সরাই, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ অনুমতি বা পরিবহন না পেয়ে মারা যায়।”

হাসপাতালগুলো ঝুঁকির কিনারায়

ডব্লিউএইচও–এর সর্বশেষ মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।

৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৭টি আংশিকভাবে কার্যকর, যা ২০০–৩০০ শতাংশ ধারণক্ষমতায় চলছে এবং নির্ভর করছে জেনারেটরের অনিয়মিত বিদ্যুতের ওপর।

সবচেয়ে বড় নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জুনে ইসরায়েলি হামলায় আইসিইউ এবং ফার্মেসি ধ্বংস হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজা সিটির আল–শিফা হাসপাতাল এখন মূলত আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, যেখানে ডাক্তাররা টর্চলাইটের আলোয় অস্ত্রোপচার করছেন।

অ্যানেসথেসিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক এবং পরিষ্কার ব্যান্ডেজের ঘাটতি চিকিৎসা কার্যক্রমকে প্রায় স্থবির করেছে। অনেক ডাক্তার পুনর্ব্যবহার করছেন অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এবং ক্ষত পরিষ্কারের জন্য নোনা পানি ব্যবহার করছেন। এক ফিলিস্তিনি সার্জন বলেন, ‘এখন হাসপাতাল আর মর্গের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’


রোগব্যাধি ও অপুষ্টি বৃদ্ধি

ডব্লিউএইচও–এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে এক লক্ষাধিক শিশুর মধ্যে তীব্র পানিজনিত ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। হেপাটাইটিস–এ, পোলিও এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগও বেড়েছে। এক-তৃতীয়াংশ গাজা শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্ট।

মানবিক ক্ষতি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর থেকে ৭১,০০০–রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, রোগ ও ক্ষুধা জনিত পরোক্ষ মৃত্যু মিলিয়ে প্রকৃত সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

ডব্লিউএইচও সেপ্টেম্বরে ১১–২৮ তারিখে গাজায় ১,৪২৪ মেট্রিক টন চিকিৎসা সরবরাহ করেছে—৭২ ট্রাকের সমপরিমাণ। তবে এটি গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের চাহিদার অল্প অংশই মেটাতে পারছে, যেখানে ৯০ শতাংশ ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত।

ড. টেড্রোস বলেন, ‘এটি দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট। ডাক্তাররা মেঝেতে শিশুদের চিকিৎসা করছেন। ডায়ালাইসিস মেশিন বন্ধ। অ্যানেসথেসিয়া নেই, অ্যান্টিবায়োটিক নেই, জ্বালানি নেই। এগুলো হাসপাতাল নয়—যুদ্ধক্ষেত্র।’

তিনি আবারও মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেন, ‘শান্তিই সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ।’

ডব্লিউএইচও গাজার জরুরি স্বাস্থ্য কার্যক্রম চালিয়ে রাখতে ৫২৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল চেয়েছে, যা সংস্থার বৈশ্বিক মানবিক পরিকল্পনার অংশ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম