ইউরোপকে সতর্ক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম
২০ বছরের মাঝে ‘পশ্চিমা’ পরিচয় হারাতে পারে ইউরোপ, বলছে ট্রাম্প প্রশাসন। সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইউরোপ বড় ধরনের সংকটে আছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে (ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্রাটেজি) বলা হয়েছে, ইউরোপ যদি সতর্ক না হয় তবে আগামী ২০ বছরের মাঝে তারা ‘পশ্চিমা’ পরিচয় হারিয়ে বসবে। খবর বিবিসি’র
ট্রাম্প প্রশাসন নতুন একটি নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পরিকল্পনা, সামরিক ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। ৩৩ পাতার ওই ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিতে (জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল) ট্রাম্প বিশ্ব সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তা অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করবে, তা ব্যাখ্যা করেছেন।
ট্রাম্প তার নথিতে অভিবাসন, জন্মহার কমে যাওয়া, পরিচয়ের সংকট ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতাগুলোকে ইউরোপের ঝুঁকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কিছু ইউরোপীয় দেশ হয়ত ভবিষ্যতে আমেরিকার বিশস্ত মিত্র হিসেবে থাকতে পারবে না। এমনকি পুরো ইউরোপও তাদের অবস্থান না বদলাতে একসময় ‘অচেনা’ হয়ে যাবে।
ট্রাম্প ওই নথিকে ‘একটি রোডম্যাপ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের মতে এটি আমেরিকাকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মহান ও সফল দেশ’ হিসেবে ধরে রাখবে। এরপর তিনি ইউরোপের ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তি’ ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি জানান।
ট্রাম্পের ওই নথিতে ইউরোপ নিয়ে ভবিষদ্বানীটি পছন্দ হয়নি ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের। ইউরোপের মিডিয়াগুলো বলছে, এটি জাতিসংঘে দেওয়া ট্রাম্পের ভাষণের সুরই আবার প্রতিফলিত করছে। সেবার তিনি পশ্চিম ইউরোপের অভিবাসন ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এবার এই নথিতে সরাসরি সতর্ক করে বসেছেন।
বিষয়টি মানতে পারছে না জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল বলেছেন, তার দেশের ‘বাইরের পরামর্শের প্রয়োজন নেই’। তিনি বলেছেন, ‘(ন্যাটো) জোটে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এই জোট মূলত নিরাপত্তা নীতি নিয়েই কাজ করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্ত সমাজের সংগঠন—এসব প্রশ্ন এই কৌশলগত নথিতে থাকা উচিত নয়। অন্তত জার্মানির ক্ষেত্রে।’
সাধারণত প্রেসিডেন্টরা প্রতি মেয়াদে একবার করে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করেন। এটি ভবিষ্যৎ নীতি ও বাজেটের কাঠামো নির্ধারণে ভূমিকা রাখে এবং বিশ্বকে জানায় প্রেসিডেন্টের আসলে কি চান।
ট্রাম্প ওই নথিতে জোরালো ভাবে বলেছেন, বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে ‘২০ বছরের মধ্যেই মহাদেশকে অচেনা লেগে যাবে। নথিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য অতিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, অভিবাসন নীতি ‘উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সেন্সরশিপ চলে আসছে। যা ইউরোপের জন্য ঝুঁকির।
তবে ইউরোপের শুধু সমালোচনাই নয়, নথিটিতে ‘দেশপ্রেমিক ইউরোপীয় দলগুলোর’ ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউরোপে এই উদ্দীপনার পুনরুত্থানকে আমেরিকা তার রাজনৈতিক মিত্রদের উৎসাহিত করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নথিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রসঙ্গেও বলা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইউরোপে ‘আত্মবিশ্বাসের অভাব’ রয়েছে। ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত থাকতে হবে বলে নথিতে বলা হয়েছে।


