ন্যাটো ইস্যুতে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের পেন্টাগনের ‘কঠোর বার্তা’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
২০২৭ সালের মধ্যেই ইউরোপকে ন্যাটোর প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৭ সালের মধ্যেই ইউরোপকে ন্যাটোর প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে পেন্টাগন কর্মকর্তারা ইউরোপীয় কূটনীতিকদের এ কঠোর বার্তা দিয়েছেন বলে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচটি সূত্র জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সময়সীমা অনেক ইউরোপীয় দেশের কাছে অবাস্তব মনে হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক মার্কিন কর্মকর্তা ও অন্যান্য সূত্র জানায়, ন্যাটো নীতি-নির্ধারণে যুক্ত পেন্টাগনের কর্মকর্তারা ইউরোপ এখনো পর্যাপ্ত অগ্রগতি দেখাতে পারেনি—বিশেষত রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর বাড়তি সামরিক সক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।
পেন্টাগন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেন, ইউরোপ ২০২৭ সালের মধ্যে পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর কিছু প্রতিরক্ষা সমন্বয় কাঠামো থেকে নিজেদের অংশগ্রহণ কমাতে বা প্রত্যাহার করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্যও এ বার্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অগ্রগতি পরিমাপের কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই
ন্যাটোর ‘কনভেনশনাল’ বা প্রচলিত প্রতিরক্ষা সক্ষমতার মধ্যে রয়েছে অ-পরমাণু সামরিক শক্তি—সেনা মোতায়েন, অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বিস্তৃত ব্যবস্থা। তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইউরোপের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখা দেয়নি।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৭ সালের সময়সীমা ট্রাম্প প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অবস্থান কিনা কিংবা পেন্টাগনের কিছু কর্মকর্তার মতামত—এ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু সক্ষমতা—বিশেষত উন্নত গোয়েন্দা ও নজরদারি প্রযুক্তি—স্বল্প সময়ে প্রতিস্থাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আরও বলেন, সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন ব্যাকলগ, যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর অস্ত্র সরবরাহ ও দীর্ঘ ডেলিভারি সময়সীমা ২০২৭ সালের লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। অনেক মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি অর্ডার করলেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া
ন্যাটোর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইউরোপ ইতোমধ্যে নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ২০২৭ সালের মতো কোনো সময়সীমা নিয়ে জোট আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
মুখপাত্রের ভাষায়, ইউরোপীয় মিত্ররা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এবং প্রচলিত প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর দিকেও কাজ করছে।
ন্যাটোকে উপেক্ষা ওয়াশিংটনের
ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় আরও ব্যয় বাড়ানোর চাপ দিয়ে আসছে। যদিও ট্রাম্প কখনো ন্যাটোকে সমর্থন, আবার কখনো সমালোচনা—দুই ভূমিকা নিয়েই আলোচনায় ছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় তিনি ন্যাটো সদস্যদের ‘ন্যায্য ব্যয়’ না করলে রাশিয়াকে আক্রমণে উৎসাহিত করার কথাও বলেছিলেন।
তবু চলতি বছরের জুনে ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প সদস্যদেশগুলোর জিডিপির ৫% প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দ রাখার মার্কিন প্রস্তাবকে সমর্থন করায় ইউরোপীয় নেতাদের প্রশংসা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে কখনো কঠোর অবস্থান, আবার কখনো শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো অভিযোগ করেছে যে, এসব আলোচনায় তাদের প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব মূলত ইউরোপেরই নেওয়া উচিত। এক্স-এ তিনি লেখেন, এটি বহু দশক ধরে মার্কিন প্রশাসন বলছে, তবে আমাদের প্রশাসন কথার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করতে চায়।

