মোদী-রাহুলের দীর্ঘ বৈঠকে গোপন আলোচনার আভাস
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১১ এএম
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর মধ্যে সংসদ ভবনে হওয়া দীর্ঘ বৈঠককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনের মাঝামাঝি সময়ে দুই শীর্ষ নেতার এমন দীর্ঘ বৈঠক স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টি কেড়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল নতুন প্রধান তথ্য কমিশনার নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা। তবে বৈঠকের অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ভারতে তথ্য কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ একটি বিশেষ কমিটি করে। কমিটির প্রধান প্রধানমন্ত্রী; সদস্য হিসেবে থাকেন তার মনোনীত একজন মন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। আজকের বৈঠকে সে ভূমিকায় রাহুল গান্ধী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রের দাবি, তিনি প্রস্তাবিত সকল নামই খারিজ করেছেন এবং লিখিতভাবে নিজের আপত্তির কারণও জানিয়েছেন। এটি প্রথমবার নয়—এর আগেও তিনি ও মল্লিকার্জুন খাড়্গে বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন।
সংসদে দীর্ঘদিন ধরে তথ্য কমিশনের শীর্ষ পদ শূন্য পড়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ আছে। প্রধান তথ্য কমিশনারের পদটি গত সেপ্টেম্বর হীরালাল সমারিয়ার অবসরের পর থেকে খালি রয়েছে। বর্তমানে মাত্র দুই কমিশনার—আনন্দী রামালিঙ্গম ও বিনোদ কুমার তিওয়ারি—পুরো কমিশনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এর ফলে আরটিআই মামলার জট বেড়েছে বিপুলভাবে। সরকারি হিসেবে বিচারাধীন অভিযোগের সংখ্যা এখন প্রায় ৩১ হাজার। কর্মীর সংকটে মামলার নিষ্পত্তির গতি অনেকই কমেছে।
বিরোধী দলের অভিযোগ—সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়োগ বিলম্ব করছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের তথ্য পাওয়ার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কমছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। সরকারি পক্ষের দাবি, প্রক্রিয়া চলমান এবং সঠিক যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগছে।
তবে আজকের বৈঠক ঘিরে আগ্রহের কারণ শুধু এজেন্ডা নয়—বরং এর দীর্ঘতা। বৈঠক চলাকালে সংসদ ভবনের করিডরে দাঁড়িয়ে থাকা বহু সাংসদই বিস্ময় প্রকাশ করেন। বৈঠকের শেষে রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি, সরকারি পক্ষও কোনও বিবৃতি দেয়নি। ফলে আলাপ-আলোচনার প্রকৃত বিষয়বস্তু এখনো রহস্যাবৃত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকটি নিছক নিয়োগ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়। শীতকালীন অধিবেশনে অচলাবস্থা, বিরোধীদের অভিযোগ বৃদ্ধি, কয়েকটি বিতর্কিত আইন এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চলমান চাপ—সব মিলিয়েই হয়তো দুই পক্ষ দীর্ঘ আলোচনা করেছে। সংসদে আটকে থাকা বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে অগ্রগতি আনতেই হয়তো বৈঠকের প্রয়োজন হয়েছিল।
এদিকে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন—তথ্য কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ এতদিন শূন্য কেন? আরটিআই-সংক্রান্ত অভিযোগ এত বাড়ছে কেন? স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হচ্ছে—সেটিও এখন প্রশ্নের মুখে।
ক্ষমতাসীন দলের ভেতর থেকেও ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে। তাদের মতে, দীর্ঘসূত্রিতা সরকারের জন্যই ক্ষতিকর হচ্ছে। বিদেশ সফর ও রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পিছিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। বিরোধী পক্ষ বলছে—এটি ইচ্ছাকৃত বিলম্ব।
আজকের দীর্ঘ বৈঠকের পরও কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে সংসদ ভবনের পরিবেশ ইঙ্গিত দিচ্ছে—নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে টানাপোড়েন আরও জোরালো হতে পারে। এর প্রতিধ্বনি সংসদের ভেতরে-বাইরে আগামী দিনে আরও তীব্রভাবে শোনা যাবে।

