স্বাধীন ভারতের প্রথম ‘ভোট চোর’ গান্ধী পরিবার: রাহুলকে অমিত শাহ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৭ এএম
অমিত শাহ-রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গান্ধী পরিবার স্বাধীন ভারতের প্রথম ‘ভোট চোর’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ সময় বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এই বিজেপি নেতার তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নির্বাচনি সংস্কার নিয়ে আলোচনার সময় এই মন্তব্য করেন তিনি।
কংগ্রেসের সমালোচনা করে অমিত শাহ বলেন, তারা একদিকে বর্তমান ভোটার তালিকার অনিয়মের অভিযোগ তোলে, অন্যদিকে বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি জানায়। অথচ এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্যই হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং যোগ্য ভোটারদের নাম তালিকায় নিশ্চিত করা।
তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আপনারা (কংগ্রেস) জয়ী হলে ভোটার তালিকা ঠিক থাকে; নতুন পোশাক পরে শপথ নেন। কিন্তু যখন হেরে যান, যেমন বিহারে... তখনই বলেন ভোটার তালিকায় সমস্যা আছে... এই দ্বিমুখী মানসিকতা চলবে না।
সম্প্রতি ভোটার তালিকা নিয়ে রাহুল গান্ধীর সংবাদ সম্মেলন, যার মধ্যেই একটিকে ‘হাইড্রোজেন বোমা’ আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি- সেই প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ‘ভোট চুরির’ কথা বলেন অথচ কিছু পরিবার— নেহরু-গান্ধী পরিবার— হলো ‘বংশগত ভোটচোর’।
এ সময় প্রতিবাদ জানিয়ে রাহুল গান্ধী অমিত শাহকে প্রথমে ‘কেন নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্বে থাকাকালীন দায়মুক্তি দেওয়া হলো’— জবাব দিতে বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনের কিছু অংশকে বেছে নেওয়ার অভিযোগ তুলে রাহুল সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, ‘আমার তিনটি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে চলুন সরাসরি বিতর্ক করি। অমিত শাহজি, আমি আপনাকে এ বিষয়ে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।’
রাহুল গান্ধীর এমন আহ্বানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি কিছু স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমি ৩০ বছর ধরে বিধানসভা ও সংসদের সদস্য। আমার ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। বিরোধীদলীয় নেতা বলছেন যে তিনি চান আমি আগে এই বা ওই প্রশ্নের উত্তর দেই। আমি তাকে স্পষ্ট করে বলতে চাই: সংসদ আপনার ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে কাজ করবে না। আমি কোন ক্রমানুসারে কথা বলব তা আমি ঠিক করব। তার ধৈর্য ধরতে হবে এবং আমার উত্তর শুনতে হবে, আমি সবকিছুর উত্তর দেব। তিনি আমার বক্তৃতার ক্রম নির্ধারণ করবেন না।’
অমিত শাহর এমন মন্তব্যের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব ‘রক্ষণাত্মক ও ভীতিকর।’
জবাবে অমিত শাহ বলেন, তিনি উসকানিতে পা দেবেন না। প্রকৃত ‘ভোট চুরি’ তখনই ঘটে, যখন জনগণের রায় অমান্য করা হয়।
পরে গান্ধী-নেহরু পরিবারকে আক্রমাণ করে অমিত শাহ বলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনই ছিল প্রথম ‘ভোট চুরির’ উদাহরণ।
তিনি দাবি করেন, ‘সেই সময় প্রদেশগুলোর কংগ্রেস কমিটির প্রধানদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তখন ২৮ ভোট পড়েছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পক্ষে, আর মাত্র দুটি ভোট জওহরলাল নেহরুর পক্ষে। তারপরও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নেহরুজি।’
অমিত শাহের এই মন্তব্যের পরপরই লোকসভায় বিরোধীদলীয় সাংসদরা হৈচৈ শুরু করেন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ‘ভোট চুরির’ আরেকটি উদাহরণ হল- ইন্দিরা গান্ধীর রায়বেরেলির জয়লাভ করেছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল; কিন্তু আদালত তা বাতিল করে দেন। এটাই বড় ভোট চুরি। আর এরপর কী ঘটল? এই ভোট চুরি আড়াল করতে তিনি আইন করলেন; যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা যাবে না। বিরোধীদলীয় নেতা এখন নির্বাচন কমিশনারদের দায়মুক্তির প্রসঙ্গ তুলছেন; আমি জবাব দেব। কিন্তু এ ব্যাপারে তার কী বলার আছে? তখন তিনি নিজেকেই দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।
রাহুল গান্ধীর মা, সাবেক কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির এই নেতা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি নাগরিক হওয়ার আগেই ভোট দিয়েছিলেন। অমিত শাহর এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদরা বলেন, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।
লোকসভায় তীব্র বাগবিতণ্ডার মাঝে অমিত শাহ বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় রাখা নিশ্চিত করতেই কংগ্রেস ও বিরোধী দল ইভিএম ব্যবহার এবং এসআইআর নিয়ে আপত্তি তুলছে। তার এই মন্তব্যের পর বিরোধী দল ওয়াকআউট করে।
সূত্র: এনডিটিভি

