Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির পরেও কেন যুদ্ধে জড়াল থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৮ এএম

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির পরেও কেন যুদ্ধে জড়াল থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া?

ছবি: সংগৃহীত

থাই–কম্বোডিয়া সীমান্তে আবারও শোনা যাচ্ছে গোলন্দাজ ও রকেট হামলার শব্দ। টানা পাঁচ মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো শত শত কিলোমিটারজুড়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো খালি করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবারগুলো পোষা প্রাণীসহ দিন কাটাচ্ছে অনিশ্চয়তায়—কবে ফিরতে পারবে, কিংবা আবার কবে পালাতে হবে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় জুলাইয়ে যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তার এত দ্রুত ভেঙে পড়ার কারণ কী?

সীমান্তে ‘ছোট’ ঘটনায় বড় সংঘাত

রোববার সীমান্তের বিতর্কিত এলাকায় একটি অ্যাক্সেস রাস্তা নির্মাণে কাজ করা থাই ইঞ্জিনিয়ারিং দলের দিকে কম্বোডিয়ান সেনারা গুলি চালায় বলে অভিযোগ করেছে থাই সেনাবাহিনী। এতে দুই থাই সেনা আহত হন। অতীতে এমন ঘটনা কূটনৈতিক যোগাযোগে সমাধান হলেও এবার পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যকার গভীর অবিশ্বাসই এ উত্তেজনার মূল কারণ—যা ট্রাম্পের তথাকথিত ‘ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি’ও দূর করতে পারেনি। জুলাইয়ের যুদ্ধবিরতি শুরু থেকেই ছিল নড়বড়ে।

ট্রাম্পের চাপ, থাইল্যান্ডের অস্বস্তি

সীমান্ত উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে থাইল্যান্ড বরাবরই অনাগ্রহী। জুলাইয়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়েছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহারের আলটিমেটামের কারণে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসছিল।   

অন্যদিকে তুলনামূলক দুর্বল দেশ হিসাবে কম্বোডিয়া বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানায়। তবে মাঠপর্যায়ে কম্বোডিয়ান সেনারা নতুন করে মাইন পাতে—যা এখন পর্যন্ত সাত থাই সেনার পা–হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে। থাইল্যান্ড বিষয়টি প্রমাণসহ তুলে ধরে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ‘অসৎ আচরণ’-এর অভিযোগ করেছে এবং জুলাইয়ে আটক ১৮ কম্বোডিয়ান সেনাকে এখনও মুক্তি দেয়নি।

থাই রাজনীতিতে অস্থিরতা, সেনাবাহিনীর ‘ফ্রি হ্যান্ড’

জুলাইয়ের পর থাই সেনাবাহিনীর ওপর থাকা নিয়ন্ত্রণ কার্যত উঠে গেছে। দুর্বল জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চর্ণভিরাকুল সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে ‘কার্তে ব্লাঙ্ক’ দিয়েছেন। সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানিয়েছে—কম্বোডিয়ান বাহিনী যাতে ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় হুমকি হতে না পারে, সে সক্ষমতা নষ্ট করাই তাদের লক্ষ্য।

এ ছাড়া কয়েকটি কৌশলগত পাহাড়ি অবস্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতির আগে থাই বাহিনী নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে বলে ধারণা করছিল। এবার তারা ‘অপূর্ণ কাজ’ শেষ করতে চায়।

হুন সেনের ‘রাজনীতি’, বাড়ছে থাই জনরোষ

কম্বোডিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত হলেও দেশটির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতাধর নেতা হুন সেনই নেপথ্যের কুশীলব। প্রকাশ্যে তিনি সংযমের আহ্বান জানালেও বছরের শুরু থেকে সীমান্ত ইস্যুতে তার ভূমিকা ছিল উত্তেজনাকর।

বিশেষ করে সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রার সঙ্গে তার গোপন ফোনালাপ ফাঁস করে দেন তিনি। ওই অডিওতে তিনি হুন সেনকে প্রশংসা করলেও নিজের সেনাপ্রধানদের ‘অতি উৎসাহী’ বলে আখ্যা দেন—যা থাই রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সরকারের পতন, তার পিতার কারাদণ্ড এবং থাই জনমনে কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ায়।

এখন থাইল্যান্ডের জনগণও সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানকে সমর্থন করছে।

ট্রাম্প কি আবার সমঝোতা করাতে পারবেন?

ট্রাম্প জুলাইয়ের মতো আবারও মধ্যস্থতায় নামতে পারেন। তবে কেবল যুদ্ধবিরতি দিয়ে বিরোধ থামানো যাবে না—থাইল্যান্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এখনই আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত নয়। কম্বোডিয়াকে ‘আন্তরিকতা’ দেখাতে হবে।

এ আন্তরিকতার মানদণ্ড কী—তা পরিষ্কার নয়। তবে অন্তত সীমান্তে নতুন মাইন পাতা বন্ধ নিশ্চিত করা এবং সে প্রমাণ দিতে হবে বলে থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

দুই দেশের অবস্থানই এতটা কঠিন হয়ে গেছে যে, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এই সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম