Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

জেলেনস্কি কি শেষমেশ পরাজয় মেনে নিলেন?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

জেলেনস্কি কি শেষমেশ পরাজয় মেনে নিলেন?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি একটা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এতে, ইউক্রেন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করতে অক্ষম বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জেলেনস্কির এই স্বীকারোক্তিই মূলত চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের অবস্থান ও পরিস্থিতিকে অনেকটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন- ‘আজ আমাদের ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার মতো শক্তি নেই এবং আমাদের সেই পর্যাপ্ত মিত্র সমর্থনও নেই।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এই সরাসরি ও স্পষ্ট স্বীকারোক্তি এসেছে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পর।

জেলেনস্কির এই স্বীকারোক্তিকে চার বছরের যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কিয়েভের পরিপূর্ণ বিজয়ের স্বপ্নের সমাপ্তির সূচনা হিসেবেও গণ্য করা যায়।

জেলেনস্কির এই বক্তব্য মূলত চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের বেদনাদায়ক ও অনিবার্য বাস্তবতাকে তুলে ধরে। মাসের পর মাস ধরে কিয়েভ ও তার মিত্রদের মধ্যকার গোপন আলোচনার আলোকে যে ধারণার জন্ম নিচ্ছিল, তা এই কথার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

এই ঘোষণার ফলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যত ‘১৯৯১ সালের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা পর্যন্ত সব অঞ্চল পুনরুদ্ধারের’ সরকারি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া এসব অঞ্চল পুনরুদ্ধারে অক্ষমতার এই স্বীকারোক্তি ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষাপটে এসেছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। 

ফিন্যানশিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূতরা দুই ঘণ্টার বৈঠকে জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় সায় দেন। 

ট্রাম্প ‘ক্রিসমাসের আগেই’ একটি চুক্তি সই করতে চান। আর এটাকে তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বড় সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছেন।

এই পরিস্থিতির ফলে জেলেনস্কি উভয় সংকটে পড়েছেন। তিনি একদিকে না পারছেন ইউক্রেনীয় ভূমি ছেড়ে দিতে, অন্যদিকে পারছেন না আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানও করতে।

ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং নতুন ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরির মাধ্যমে সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন জেলেনস্কি। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন, আমেরিকার অবিচ্ছিন্ন ও শর্তহীন সামরিক-আর্থিক সমর্থন ছাড়া ইউরোপ একা এই শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না।

জেলেনস্কি বলেন—‘যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ এখনই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে দেখতে চায় না’—যা কিয়েভের বহুদিনের নিরাপত্তা-স্বপ্নের ওপরও ছায়া ফেলেছে। ন্যাটো সদস্যপদের অনিশ্চয়তা ইউক্রেনের প্রতিরোধ কৌশলের মূল ভিত্তিকেই দুর্বল করে দিয়েছে।

ইউক্রেনের এই উভয়-সংকট অবস্থা রাশিয়ার মোকাবিলায় আমেরিকা ও ইউরোপের দুর্বল অবস্থানকে সারা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট করে তুলেছে।

এখন আর কেউ এই প্রশ্ন করছে না যে, ইউক্রেন কোন কোন অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে? বরং এখনকার প্রশ্ন হলো—বাস্তবতা মেনে নেওয়ার বিনিময়ে ইউক্রেন তার মিত্রদের কাছ থেকে কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি পেতে পারে? 

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ মূলত এই প্রশ্নের উত্তরের ওপরই নির্ভর করছে।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন যুদ্ধ


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম