শরণার্থী বিল ঘিরে বিতর্কের মুখে কানাডা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শরণার্থীর বিষয়ে কানাডার নতুন একটি বিল যুক্তরাষ্ট্রের মতো কঠোর সীমান্তনীতির সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছে কানাডার লিবারেল সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, এতে বিদেশিভীতি বাড়বে এবং অভিবাসীদের বলির পাঁঠা বানানোর প্রবণতা আরও জোরালো হতে পারে।
কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল সরকার বিল সি-১২ বা স্ট্রেংদেনিং কানাডা’স ইমিগ্রেশন সিস্টেম অ্যান্ড বর্ডার্স অ্যাক্ট নামে একটি ব্যাপক আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে দেশটি। এতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি শরণার্থী দাবিদারদের জন্য নতুন অযোগ্যতার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
দ্রুত প্রক্রিয়ায় বিলটি ১১ ডিসেম্বর কানাডার হাউস অব কমন্সে তৃতীয় পাঠে পাস হয়, সংসদের শীতকালীন ছুটির আগেই। ফেব্রুয়ারিতে সিনেটের অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হবে।
টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শরণার্থী ও মানবাধিকার আইনের অধ্যাপক ইডিল আতাক বলেন, শরণার্থী সুরক্ষার দিক থেকে এটি অত্যন্ত পশ্চাদমুখী একটি আইন।
আতাকের মতে, এই আইন কার্যত নির্বাহী ক্ষমতার নজিরবিহীন সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে শরণার্থীদের তথ্য আদান–প্রদান সহজ হবে এবং অভিবাসনসংক্রান্ত নথি বা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, বাতিল বা পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের হাতে আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হবে।
আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো—কানাডায় প্রবেশের এক বছরের বেশি সময় পরে কেউ আশ্রয়ের আবেদন করলে সেই আবেদন আর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি বোর্ড অব কানাডায় পাঠানো হবে না। বরং তা পাঠানো হবে একজন অভিবাসন কর্মকর্তার কাছে প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (দেশত্যাগের আগে ঝুঁকি মূল্যায়ন) প্রক্রিয়ার জন্য।
টরন্টো স্টারে প্রকাশিত ৪০ জন আইনজীবী ও আইনি বিশেষজ্ঞের একটি সাম্প্রতিক মতামত কলামে বলা হয়েছে, এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় একজন মাত্র কর্মকর্তা নথি পড়ে সিদ্ধান্ত নেন এবং এখানে আবেদন বাতিলের হার অত্যন্ত বেশি।
তাদের মতে, নতুন এই আইন কানাডার অভিবাসন ইতিহাসের কিছু উদ্বেগজনক সময়কে মনে করিয়ে দেয়—বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রণীত বৈষম্যমূলক নীতিগুলো, যেখানে দক্ষিণ এশীয়, চীনা ও জাপানি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন ও শরণার্থী আইন বিভাগের অধ্যাপক অড্রি ম্যাকলিন বলেন, কেউ কেন সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়ের আবেদন করেন না—এর নানা কারণ থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো নিপীড়িত যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য যদি শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় এসে খোলাখুলি জীবনযাপন শুরু করেন, তবে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
২০২৪ সাল থেকে কানাডা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করায়, এমন অনেক মানুষ আশ্রয়ের আবেদন করতে বাধ্য হতে পারেন। কিন্তু নতুন আইন কার্যকর হলে তাঁদের জন্য বড় ধরনের আইনি বাধা তৈরি হবে।
মঙ্গলবার টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে কানাডা ১৮ হাজার মানুষকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে—যা ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্টিফেন হার্পারের সরকারের সময়ের পর সর্বোচ্চ। এসব বহিষ্কারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি।
অড্রি ম্যাকলিন বলেন, প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আশ্রয়প্রার্থীরা ন্যায়সংগত শুনানির সুযোগ পান না। বরং এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া।
সূত্র: গার্ডিয়ান
