আল্লামা তাকি উসমানির ওপর হামলা এবং পাকিস্তানের ‘ট্র্যাডিশনাল’ খুনির দল
jugantor
আল্লামা তাকি উসমানির ওপর হামলা এবং পাকিস্তানের ‘ট্র্যাডিশনাল’ খুনির দল

  সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর  

২২ মার্চ ২০১৯, ২২:৩৬:৪৬  |  অনলাইন সংস্করণ

আল্লামা তাকি উসমানি। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব মুফতি তাকি উসমানির গাড়িবহরে শুক্রবার বাদ জুমা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় তিনি অক্ষত থাকলেও অপর গাড়িতে থাকা তার দুজন দেহরক্ষী নিহত হন এবং গাড়িচালক ও তার এক সফরসঙ্গী গুরুতর আহত হন। তার সঙ্গে একই গাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই নাতি ছিলেন, তারাও অক্ষত রয়েছেন।

এ হামলার ঘটনায় পাকিস্তান তো বটেই, বাংলাদেশ-ভারতসহ পুরো মুসলিম বিশ্ব হতবাক হয়ে গেছে। কারণ, মুফতি তাকি উসমানি বর্তমান বিশ্বে ইসলামি শিক্ষা, অর্থনীতি ও আইন বিষয়ে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। উপমহাদেশ থেকে শুরু করে আরব বিশ্ব এবং পশ্চিমা বিশ্বেও তিনি সমানভাবে সমাদৃত।

সর্বজনমান্য এই আলেম দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি অর্থনীতি ও আইন বিষয়ে মুসলিম বিশ্বকে বাতিঘরের মতো আলো দিয়ে আসছেন। উপমহাদেশে দেওবন্দি ঘরানার আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে তিনি প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। এ কারণে তার মতো একজন বিদগ্ধ আলেমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে হতচকিত করে তুলেছে।

হতবাক হওয়ার আরও কারণ হলো, মুফতি তাকি উসমানি অত্যন্ত নির্বিবাদী ও প্রায় প্রচারবিমুখ একজন ব্যক্তি। তিনি যত বড় ব্যক্তিত্ব, সে অনুযায়ী সচরাচর মিডিয়ার সামনে খুব একটা আসেন না এবং মিডিয়ার শিরোনাম হতেও পছন্দ করেন না।

পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিতে তিনি হাদিস ও উচ্চতর ইসলামি আইন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করে আসছেন। এছাড়া গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা, ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দিতে দেশ-বিদেশ সফরেই তিনি অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন।

শুধু তাই নয়, উপমহাদেশে ধর্মীয় যে কোনো বিষয়ে সমাধানের জন্য প্রথমে যার নাম উচ্চারিত হয়, তিনি মুফতি তাকি উসমানি। ইসলামি অর্থনীতি ও ফিকাহ (ইসলামি আইন) বিষয়ে তিনি নতুন যুগের প্রবক্তা। মুসলিম সমাজে প্রচলিত নিত্যনতুন সমস্যাকে তিনি কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্সে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে সিদ্ধহস্ত। একই সঙ্গে ইসলামের প্রতিটি জ্ঞানশাখায় তাঁর রয়েছে অগাধ পাণ্ডিত্য। এ কারণে তিনি কেবল উপমহাদেশ নয়, বরিত হয়ে আসছেন আরব ও ইউরোপ-আমেরিকায়ও।

ইসলামি আইন ও অর্থনীতি বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় রচিত তার গ্রন্থের সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। এছাড়া আরবি ও উর্দু ভাষায় তার গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বাংলা ভাষায়ও তার শতাধিক গ্রন্থ অনূদিত হয়ে ধর্মীয় মহলে পঠিত হয়ে আসছে। মূলত, একজন আন্তর্জাতিক ইসলামি স্কলার বলতে যা বোঝায়, মুফতি তাকি উসমানি ঠিক তাই।

এ কারণে একজন স্কলার হিসেবে তিনি কখনোই বিতর্কিত কোনো বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিতণ্ডা, মাজহাবগত চরমপন্থা, স্থানীয় আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি বিষয়ে তিনি বরাবরই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে আসছেন।

সুতরাং এমন নির্বিবাদী একজন ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞমহলকে।

মুফতি তাকি উসমানির ঘটনায় আবারও সামনে চলে এলো মাত্র মাস চারেক আগে সংঘটিত মাওলানা সামিউল হকের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি।

২০১৮ সালের নভেম্বরের ২ তারিখে পাকিস্তানের আরেকজন প্রথিতযশা আলেম মাওলানা সামিউল হককে তার বাড়িতে ঢুকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তি। মাওলানা সামিউল হক ইসলামি আইন ও রাজনীতি বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে পাকিস্তান পার্লামেন্টের সিনেটর হিসেবেও ছিলেন তৎপর।

একই সঙ্গে তিনি আফগান তালেবানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন বলে প্রচলিত আছে। এই সুসম্পর্কের কারণে তাকে ‘ফাদার অব তালেবান’ বলেও আখ্যায়িত করা হতো। আগে থেকেই তিনি তালেবানদের অন্যতম ইন্টেলিকচুয়াল থিংকট্যাংক হিসেবে কাজ করতেন।

শেষদিকে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মাওলানা সামিউল হক বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার প্রচেষ্টার ফলেই তালেবানরা বিগত বছর দুয়েক ধরে আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তির সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের ২ তারিখে তিনি নিজ বাসভবনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

মাওলানা সামিউল হকের হত্যার কারণ কী ছিল-পুলিশের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনও জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হয়, তালেবানের শান্তি আলোচনাকে ভালো চোখে দেখেনি চরমপন্থী জিহাদি কিছু গ্রুপ। যেহেতু তিনি তালেবান এবং আমেরিকার সঙ্গে শান্তি আলোচনার অন্যতম থিংকট্যাংক ছিলেন, এ কারণে চরমন্থী গ্রুপগুলো তার ওপর নাখোশ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

কেউ কেউ বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার আঁতাত থাকাও বিচিত্র নয়। আবার অনেকে বলেছেন, এ হত্যা নিছক পারিবারিক জেরের কারণে হয়েছে।

কিন্তু এসব দিক থেকে মুফতি তাকি উসমানি বরাবরই নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে থাকেন। তালেবান বা পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র জিহাদি গ্রুপগুলোর সঙ্গে কখনোই তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানা যায়নি। একইভাবে বিদেশি কোনো শক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও চিন্তার অতীত। এ কারণে তার ওপর হামলার বিষয়টি মুসলিম বিশ্বে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানে আলেম, স্কলার বা পণ্ডিত ব্যক্তিদের ওপর হামলা বা হত্যা একটি ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়ে গেছে। মূলত, পাকিস্তানে হত্যা আর খুনোখুনি ব্যাপারটাই একটা সস্তা ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। বোমা হামলা, আত্মঘাতী হামলা, চোরাগুপ্তা হামলা, ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা-এসব চলছেই।

ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর যদিও এই প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে তবে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, খুব সামান্য সামান্য কারণে এরা মানুষ হত্যা করতে সিদ্ধহস্ত। তাদের সব সমস্যার সমাধান তারা হত্যার মাধ্যমে সংঘটন করে থাকে। এছাড়া যেন তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

মুফতি তাকি উসমানি কেবল মুসলিম বিশ্বেরই নয়, তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য অমূল্য সম্পদ। সাম্প্রদায়িকতা বা চরমপন্থার অজুহাতে অথবা অন্য যে কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হলে ক্ষতি হবে পুরো মানব সম্প্রদায়ের। এ কারণে আমরা আশা করব, পাকিস্তান সরকার দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে।

লেখক: তরুণ আলেম ও চিন্তক

আল্লামা তাকি উসমানির ওপর হামলা এবং পাকিস্তানের ‘ট্র্যাডিশনাল’ খুনির দল

 সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর 
২২ মার্চ ২০১৯, ১০:৩৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
আল্লামা তাকি উসমানি। ফাইল ছবি
আল্লামা তাকি উসমানি। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব মুফতি তাকি উসমানির গাড়িবহরে শুক্রবার বাদ জুমা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় তিনি অক্ষত থাকলেও অপর গাড়িতে থাকা তার দুজন দেহরক্ষী নিহত হন এবং গাড়িচালক ও তার এক সফরসঙ্গী গুরুতর আহত হন। তার সঙ্গে একই গাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই নাতি ছিলেন, তারাও অক্ষত রয়েছেন। 

এ হামলার ঘটনায় পাকিস্তান তো বটেই, বাংলাদেশ-ভারতসহ পুরো মুসলিম বিশ্ব হতবাক হয়ে গেছে। কারণ, মুফতি তাকি উসমানি বর্তমান বিশ্বে ইসলামি শিক্ষা, অর্থনীতি ও আইন বিষয়ে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। উপমহাদেশ থেকে শুরু করে আরব বিশ্ব এবং পশ্চিমা বিশ্বেও তিনি সমানভাবে সমাদৃত।

সর্বজনমান্য এই আলেম দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি অর্থনীতি ও আইন বিষয়ে মুসলিম বিশ্বকে বাতিঘরের মতো আলো দিয়ে আসছেন। উপমহাদেশে দেওবন্দি ঘরানার আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে তিনি প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। এ কারণে তার মতো একজন বিদগ্ধ আলেমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে হতচকিত করে তুলেছে। 

হতবাক হওয়ার আরও কারণ হলো, মুফতি তাকি উসমানি অত্যন্ত নির্বিবাদী ও প্রায় প্রচারবিমুখ একজন ব্যক্তি। তিনি যত বড় ব্যক্তিত্ব, সে অনুযায়ী সচরাচর মিডিয়ার সামনে খুব একটা আসেন না এবং মিডিয়ার শিরোনাম হতেও পছন্দ করেন না।

পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিতে তিনি হাদিস ও উচ্চতর ইসলামি আইন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করে আসছেন। এছাড়া গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা, ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দিতে দেশ-বিদেশ সফরেই তিনি অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন। 

শুধু তাই নয়, উপমহাদেশে ধর্মীয় যে কোনো বিষয়ে সমাধানের জন্য প্রথমে যার নাম উচ্চারিত হয়, তিনি মুফতি তাকি উসমানি। ইসলামি অর্থনীতি ও ফিকাহ (ইসলামি আইন) বিষয়ে তিনি নতুন যুগের প্রবক্তা। মুসলিম সমাজে প্রচলিত নিত্যনতুন সমস্যাকে তিনি কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্সে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে সিদ্ধহস্ত। একই সঙ্গে ইসলামের প্রতিটি জ্ঞানশাখায় তাঁর রয়েছে অগাধ পাণ্ডিত্য। এ কারণে তিনি কেবল উপমহাদেশ নয়, বরিত হয়ে আসছেন আরব ও ইউরোপ-আমেরিকায়ও। 

ইসলামি আইন ও অর্থনীতি বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় রচিত তার গ্রন্থের সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। এছাড়া আরবি ও উর্দু ভাষায় তার গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বাংলা ভাষায়ও তার শতাধিক গ্রন্থ অনূদিত হয়ে ধর্মীয় মহলে পঠিত হয়ে আসছে। মূলত, একজন আন্তর্জাতিক ইসলামি স্কলার বলতে যা বোঝায়, মুফতি তাকি উসমানি ঠিক তাই।

এ কারণে একজন স্কলার হিসেবে তিনি কখনোই বিতর্কিত কোনো বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিতণ্ডা, মাজহাবগত চরমপন্থা, স্থানীয় আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি বিষয়ে তিনি বরাবরই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে আসছেন।

সুতরাং এমন নির্বিবাদী একজন ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞমহলকে। 

মুফতি তাকি উসমানির ঘটনায় আবারও সামনে চলে এলো মাত্র মাস চারেক আগে সংঘটিত মাওলানা সামিউল হকের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি।

২০১৮ সালের নভেম্বরের ২ তারিখে পাকিস্তানের আরেকজন প্রথিতযশা আলেম মাওলানা সামিউল হককে তার বাড়িতে ঢুকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তি। মাওলানা সামিউল হক ইসলামি আইন ও রাজনীতি বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে পাকিস্তান পার্লামেন্টের সিনেটর হিসেবেও ছিলেন তৎপর।

একই সঙ্গে তিনি আফগান তালেবানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন বলে প্রচলিত আছে। এই সুসম্পর্কের কারণে তাকে ‘ফাদার অব তালেবান’ বলেও আখ্যায়িত করা হতো। আগে থেকেই তিনি তালেবানদের অন্যতম ইন্টেলিকচুয়াল থিংকট্যাংক হিসেবে কাজ করতেন।

শেষদিকে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মাওলানা সামিউল হক বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার প্রচেষ্টার ফলেই তালেবানরা বিগত বছর দুয়েক ধরে আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তির সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের ২ তারিখে তিনি নিজ বাসভবনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। 

মাওলানা সামিউল হকের হত্যার কারণ কী ছিল-পুলিশের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনও জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হয়, তালেবানের শান্তি আলোচনাকে ভালো চোখে দেখেনি চরমপন্থী জিহাদি কিছু গ্রুপ। যেহেতু তিনি তালেবান এবং আমেরিকার সঙ্গে শান্তি আলোচনার অন্যতম থিংকট্যাংক ছিলেন, এ কারণে চরমন্থী গ্রুপগুলো তার ওপর নাখোশ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। 

কেউ কেউ বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার আঁতাত থাকাও বিচিত্র নয়। আবার অনেকে বলেছেন, এ হত্যা নিছক পারিবারিক জেরের কারণে হয়েছে। 

কিন্তু এসব দিক থেকে মুফতি তাকি উসমানি বরাবরই নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে থাকেন। তালেবান বা পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র জিহাদি গ্রুপগুলোর সঙ্গে কখনোই তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানা যায়নি। একইভাবে বিদেশি কোনো শক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও চিন্তার অতীত। এ কারণে তার ওপর হামলার বিষয়টি মুসলিম বিশ্বে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানে আলেম, স্কলার বা পণ্ডিত ব্যক্তিদের ওপর হামলা বা হত্যা একটি ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়ে গেছে। মূলত, পাকিস্তানে হত্যা আর খুনোখুনি ব্যাপারটাই একটা সস্তা ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। বোমা হামলা, আত্মঘাতী হামলা, চোরাগুপ্তা হামলা, ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা-এসব চলছেই।

ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর যদিও এই প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে তবে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, খুব সামান্য সামান্য কারণে এরা মানুষ হত্যা করতে সিদ্ধহস্ত। তাদের সব সমস্যার সমাধান তারা হত্যার মাধ্যমে সংঘটন করে থাকে। এছাড়া যেন তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

মুফতি তাকি উসমানি কেবল মুসলিম বিশ্বেরই নয়, তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য অমূল্য সম্পদ। সাম্প্রদায়িকতা বা চরমপন্থার অজুহাতে অথবা অন্য যে কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হলে ক্ষতি হবে পুরো মানব সম্প্রদায়ের। এ কারণে আমরা আশা করব, পাকিস্তান সরকার দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে। 

লেখক: তরুণ আলেম ও চিন্তক

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন