ইসরাইলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্কে উত্তর আফ্রিকায় সংঘাতের শঙ্কা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৩৬ পিএম
ছবি: ডয়চে ভেলে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে ওয়েস্টার্ন সাহারাকে মরক্কোর সার্বভৌম অঞ্চল বলে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
পাশাপাশি আরব আমিরাতের মতো দেশটির কাছে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে দেশটি।
তবে যে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মরক্কোকে তার তথাকথিত ‘আব্রাহাম চুক্তির’ অংশীদার করেছেন- তার সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিতে শুরু করেছে।
এই চুক্তির ফলে উত্তর আফ্রিকায় নতুন করে সংঘাত মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
কারণ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ওয়েস্টার্ন আফ্রিকা নামের সাবেক স্প্যানিশ উপনিবেশের ওপর মরক্কোর একক সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে।
দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্যে বিরোধ চলছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়ে মরক্কো অত্যন্ত খুশি।
তারা ১৯৭৫ সাল থেকে চেষ্টা করছে একে নিজেদের সার্বভৌম অংশ হিসেবে পাওয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তির স্বীকৃতি মরক্কোর জন্য বড় একটি কূটনৈতিক সাফল্য তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু বাস্তবে ওয়েস্টার্ন আফ্রিকায় সার্বভৌমত্ব কায়েম করা কতটা সহজ হবে মরক্কোর জন্য? এই এলাকায় স্বাধীন একটি দেশ গঠনের লক্ষ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পলিসারিও ফ্রন্ট গত চার দশক ধরে সশস্ত্র আন্দোলন করছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পলিসারিও ফ্রন্ট বলছে তারা একে প্রতিরোধ করবে।
পলিসারিও ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ওয়েস্টার্ন আফ্রিকায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এমনকি একে তারা ‘জাতিসংঘের সনদের নগ্ন লঙ্ঘন’ বলছে।
ইউরোপে এই সংগঠনের প্রতিনিধি ওবি বিচারিয়া বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি এই বিরোধের বাস্তবতা বদলাতে পারবে না, ওয়েস্টার্ন সাহারার মানুষের স্বাধিকারের আকাক্সক্ষাকে এক বিন্দুও টলাতে পারবে না।’
লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, ওয়েস্টার্ন সাহারা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন মরক্কোর জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বিজয়ের ফসল কিভাবে, কত সহজে তারা ঘরে তুলতে পারবে, তা অনিশ্চিত।
কারণ পলিসারিও ফ্রন্টের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হবে আলজেরিয়াও। দেশটি পলিসারিও ফ্রন্টের প্রধান সমর্থক।
ওয়েস্টার্ন আফ্রিকায় তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ মরক্কোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির এই সিদ্ধান্তকে কিভাবে তারা চ্যালেঞ্জ করবে তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে আলজেরিয়া।
১৯৭৫ সালে ওয়েস্টার্ন সাহারায় স্পেন তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শেষ করার পর মরক্কো এ অঞ্চলে তাদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে। কিন্তু বাদ সাধে অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা সাহরাওয়ি নামে পরিচিত। বর্তমানে তাদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের মতো।
সাহরাওয়ায়ি আরব ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক নামে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে তাদের সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।
এতে সরাসরি সমর্থন জোগায় আলজেরিয়া। বিদ্রোহী পলিসারিও ফ্রন্টের সদর দফতরও আলজেরিয়ার টিনডফ শহরে।
