কী ছিল তালেবান-যুক্তরাষ্ট্রের সেই চুক্তিতে?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৬:০১ এএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তালেবানের হাতে দ্রুত কাবুলের পতন হতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক এবং নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে তিন হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের দখল নিয়েছে তালেবান। এ অবস্থায় কাবুল থেকে দূতাবাস খালি করার তোড়জোড় শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগস্টেই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করবে দেশটি। এর মধ্যেই তালেবান দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি জেলার দখল নিয়ে নিয়েছে। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই চলছে সংঘাত।
গত মে মাসে নতুন করে সংঘাত শুরুর পর তালেবান এত দ্রুত এত বেশি সাফল্য পেয়ে যাবে, তা ছিল বাইডেন প্রশাসনের ধারণার বাইরে। এখন মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের মূল্যায়ন বলছে, শিগগিরই কাবুলেরও পতন ঘটতে পারে তালেবানের হাতে।
তালেবান বাহিনীর এই অগ্রযাত্রার মধ্যে সেই শান্তি চুক্তির বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসছে। কাতারের রাজধানী দোহায় ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটানো।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
চুক্তির শিরোনাম ছিল– ‘আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি’। এটি দারি, পশতু এবং ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হবে বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়। তারিখ হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি হিজরি চান্দ্র ও সৌর বর্ষও উল্লেখ করা ছিল।
চুক্তির মূল ধারা চারটি, যেখানে শুরুতেই বলা হয়েছে ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ নামটিকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয় না এবং এরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তালেবান হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তিটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের, যদিও তালেবান নিজেদেরকে চুক্তির নথিতে ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সমন্বিত ওই শান্তি চুক্তির চারটি ধারা একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল।
প্রথম ধারায় বলা হয়, আল-কায়েদাসহ কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে তালেবান নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপনাও তারা করবে।
দ্বিতীয় ধারায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হবে, এটা বাস্তবায়নের ব্যাবস্থাপনা তারা করবে এবং সেনা প্রত্যাহারের একটি সময়সূচিও ঘোষণা করা হবে।
তৃতীয় ধারায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক সাক্ষীর উপস্থিতিতে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা এবং এর সময়সূচি ঘোষণার পর, এবং তালেবানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার নিশ্চয়তা ঘোষণা করার পর তালেবান পক্ষ আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে আন্তঃআফগান আলোচনা ও সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করবে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ এই আলোচনা শুরুর তারিখ ঠিক করা হয়।
চতুর্থ ধারায় বলা হয়, আন্তঃআফগান দরকষাকষি ও আলোচনায় আলোচ্যসূচির একটি অংশে থাকবে অস্ত্রবিরতির বিষয়টি। আন্তঃআফগান আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা স্থায়ী ও সমন্বিত একটি অস্ত্রবিরতির তারিখ ও সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং এর বাস্তবায়নে যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত রাজনৈতিক রূপরেখা ঘোষণার সময়ই অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হবে।
চুক্তিটির পরের তিনটি অংশের প্রথম অংশে যুক্তরাষ্ট্রের কী কী করণীয় তার বিবরণ রয়েছে। বলা হয়েছে, চুক্তি স্বক্ষরের ঘোষণার দিন থেকে পরের ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রথম অংশে সেখানে ছয়টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে।
এর প্রথমটিই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে। যেখানে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই চুক্তি ঘোষণার প্রথম ১৩৫ দিনের মধ্যে আট হাজার ৬০০ সেনা সরিয়ে নেবে। এবং একই সময়ের মধ্যে তারা সেদেশের পাঁচটি সেনাঘাঁটি থেকেও সেনা প্রত্যাহার করবে।
চুক্তিটির তৃতীয় অংশে আরও তিনটি দফা রয়েছে, যার প্রথমটিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই চুক্তিটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে।
আল-কায়েদা ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী। উৎখাত করা হয় তালেবান সরকারকে।
প্রায় দুই দশকের সেই যুদ্ধে কত আফগান বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও তালেবান সদস্যের প্রাণ গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করাটা কঠিন।
তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুদ্ধে ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
