‘ভূতের খাটুনি খাটার পরও অভাব কাটে না সংসারের’
জলবায়ু পরিবর্তনে সুফল বয়ে আনলেও শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো প্রভাব রাখতে পারছে না সুদানের গামগাছ। স্থানীয়রা বলছেন, মরুভূমির এই ‘খরা খাওয়া’ গাছেই শুকাচ্ছে শ্রমিকদের ভাগ্য। কষ্ট বেশি মজুরি কম। সারা দিন রোদে পুড়ে বেলাশেষে ঘামের দাম হয় না। ভূতের খাটুনি খাটার পরও অভাব কাটে না সংসারের।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ায় সাহায্য করে গামগাছ। কিন্তু চামড়ায় ফোসকা পোড়া এই খটখটে শুষ্ক ভূমিতে বেশিরভাগ শ্রমিকই এখন গাম বাগানের এ পণ্ডশ্রমে নারাজ।
কোমলপানীয়, চুইংগাম ওষুধপত্রাদি তৈরিসহ বৈশ্বিক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন প্রজাতির গামগাছ। কাঁচা আঠা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে অগ্রভাগে আছে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার সুদান।
‘গাম এরাবিক ফার্মার্স’ অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়কারী ফাতমা রামলি বলেন, মেরুকরণের বিরুদ্ধে লড়তে খরা প্রতিরোধী এই গাছ। এছাড়াও মাটির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই গাছ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডামোকায়া বন গবেষণার আঠা সংগ্রহকারী মোহাম্মদ মুসা জানান, তীব্র রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন তারা। সুদানের জনগণের সবচেয়ে বড় সংকট পানির স্বল্পতা। মরুভূমিতে পানির জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। তিনি যে অর্থ আয় করেন তার বেশির ভাগ চলে যায় পানি কেনার জন্য।
বিশ্বে পণ্যের বাজার দর সবসময় ওঠানামা করার কারণে গাম উৎপাদনকারী কৃষকদেরও এর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে থাকতে হয়। ৪৫ কিলোগ্রাম বা ১০০ পাউন্ড কাঁচা আঠা ২২০০০ থেকে ২৫০০০ হাজার সুদানিজ মুদ্রা বা ৪৭ ডলারে বিক্রি হয়, যা প্রতিদিনের বাজার দরের ওপর নির্ভর করে। যেখানে কৃষকরা খুব কমই লাভবান হন।
আবদেলবাকি আহমেদ (৫২) নামের একজন জানান, এতে খরচের তুলনায় খুব কমই আয় হয়। তাই তিনি বাড়তি আয়ের জন্য এর সঙ্গে আরও কিছু শস্য চাষ করেন। তার গাছগুলোর কাঠ কেটে রাখেন, যা খুবই পরিশ্রমের একটি কাজ। তিনি গাম চাষাবাদ করলেও তার চার ছেলে স্থানীয় স্বর্ণের খনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। আহমেদের মতো আবদুল্লাহ বাবকের নামের একজনও ডামোকায়া বনে কাজ করেন। তার তিন ছেলেও খনিতে কাজ করে। বাবকের আরও বলেন, বেশি আয় করার জন্য তারা আরও কাজ করতে আগ্রহী।
গত এক দশক আগে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল নিয়ে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যাওয়ার পর গামই হয়ে ওঠে সুদানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র অবলম্বন। সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০২১ সালে সুদান ৮৮০০০ টন গাম রপ্তানি করে ১১০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। সুদানের গাম রপ্তানি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ ধরে রেখেছে।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা তাদের সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশটির অর্থনীতিতে বিস্তর অবদান রেখেছে এই গাম রপ্তানি। সুদানের করদফান থেকো দারফুর পর্যন্ত প্রায় ৫০০,০০০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে এই গামগাছ বন। যেখানে এফএও ১০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গাম বন ও শ্রমিকদের উন্নয়নে।
১২৫০০০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে আফ্রিকার সাহেল থেকে হর্ন অব আফ্রিকা পর্যন্ত মরুভূমি সবুজায়ন প্রকল্প গ্রেট গ্রিন ওয়াল প্রকল্পের একটি অংশ হবে সুদানের এই প্রকল্পটি।
‘ভূতের খাটুনি খাটার পরও অভাব কাটে না সংসারের’
সাবিহা আক্তার
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১১:৪০ | অনলাইন সংস্করণ
জলবায়ু পরিবর্তনে সুফল বয়ে আনলেও শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো প্রভাব রাখতে পারছে না সুদানের গামগাছ। স্থানীয়রা বলছেন, মরুভূমির এই ‘খরা খাওয়া’ গাছেই শুকাচ্ছে শ্রমিকদের ভাগ্য। কষ্ট বেশি মজুরি কম। সারা দিন রোদে পুড়ে বেলাশেষে ঘামের দাম হয় না। ভূতের খাটুনি খাটার পরও অভাব কাটে না সংসারের।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ায় সাহায্য করে গামগাছ। কিন্তু চামড়ায় ফোসকা পোড়া এই খটখটে শুষ্ক ভূমিতে বেশিরভাগ শ্রমিকই এখন গাম বাগানের এ পণ্ডশ্রমে নারাজ।
কোমলপানীয়, চুইংগাম ওষুধপত্রাদি তৈরিসহ বৈশ্বিক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন প্রজাতির গামগাছ। কাঁচা আঠা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে অগ্রভাগে আছে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার সুদান।
‘গাম এরাবিক ফার্মার্স’ অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়কারী ফাতমা রামলি বলেন, মেরুকরণের বিরুদ্ধে লড়তে খরা প্রতিরোধী এই গাছ। এছাড়াও মাটির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই গাছ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডামোকায়া বন গবেষণার আঠা সংগ্রহকারী মোহাম্মদ মুসা জানান, তীব্র রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন তারা। সুদানের জনগণের সবচেয়ে বড় সংকট পানির স্বল্পতা। মরুভূমিতে পানির জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। তিনি যে অর্থ আয় করেন তার বেশির ভাগ চলে যায় পানি কেনার জন্য।
বিশ্বে পণ্যের বাজার দর সবসময় ওঠানামা করার কারণে গাম উৎপাদনকারী কৃষকদেরও এর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে থাকতে হয়। ৪৫ কিলোগ্রাম বা ১০০ পাউন্ড কাঁচা আঠা ২২০০০ থেকে ২৫০০০ হাজার সুদানিজ মুদ্রা বা ৪৭ ডলারে বিক্রি হয়, যা প্রতিদিনের বাজার দরের ওপর নির্ভর করে। যেখানে কৃষকরা খুব কমই লাভবান হন।
আবদেলবাকি আহমেদ (৫২) নামের একজন জানান, এতে খরচের তুলনায় খুব কমই আয় হয়। তাই তিনি বাড়তি আয়ের জন্য এর সঙ্গে আরও কিছু শস্য চাষ করেন। তার গাছগুলোর কাঠ কেটে রাখেন, যা খুবই পরিশ্রমের একটি কাজ। তিনি গাম চাষাবাদ করলেও তার চার ছেলে স্থানীয় স্বর্ণের খনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। আহমেদের মতো আবদুল্লাহ বাবকের নামের একজনও ডামোকায়া বনে কাজ করেন। তার তিন ছেলেও খনিতে কাজ করে। বাবকের আরও বলেন, বেশি আয় করার জন্য তারা আরও কাজ করতে আগ্রহী।
গত এক দশক আগে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল নিয়ে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যাওয়ার পর গামই হয়ে ওঠে সুদানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র অবলম্বন। সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০২১ সালে সুদান ৮৮০০০ টন গাম রপ্তানি করে ১১০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। সুদানের গাম রপ্তানি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ ধরে রেখেছে।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা তাদের সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশটির অর্থনীতিতে বিস্তর অবদান রেখেছে এই গাম রপ্তানি। সুদানের করদফান থেকো দারফুর পর্যন্ত প্রায় ৫০০,০০০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে এই গামগাছ বন। যেখানে এফএও ১০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গাম বন ও শ্রমিকদের উন্নয়নে।
১২৫০০০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে আফ্রিকার সাহেল থেকে হর্ন অব আফ্রিকা পর্যন্ত মরুভূমি সবুজায়ন প্রকল্প গ্রেট গ্রিন ওয়াল প্রকল্পের একটি অংশ হবে সুদানের এই প্রকল্পটি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023