Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারতে কেন এত ট্রেন দুর্ঘটনা?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম

ভারতে কেন এত ট্রেন দুর্ঘটনা?

ভারতে রেল দুর্ঘটনার খবর নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই দেশটির রেলওয়েসংশ্লিষ্ট নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৩-১৪ সালে ভারতে ১১৭টি রেল দুর্ঘটনায় ১০৩ জন নিহত হন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সালে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে হয় ১৩১; আর এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৬৮ জন। 

২০১৪-১৫ সালে সংঘটিত ১৩১টি রেল দুর্ঘটনার ৬০টিই হয়েছে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে। এর মধ্যে আবার ১১৫টি দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী ছিল মানুষের নানা কর্মকাণ্ড। এক্ষেত্রে দায়ীর তালিকায় রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরাও রয়েছেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক তথ্যে এসব দুর্ঘটনার কোনোটির কারণ হিসাবেই রেলওয়ে লাইনের ত্রুটিকে দেখানো হয়নি। তবে বহু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি ভারতের রেলওয়ের আসল চিত্র নয়। 

২০১৬ সালের হিসাবে, ভারতে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কিলোমিটার (৭১ হাজার ৪৫৭ মাইল) রেলওয়ে রয়েছে। ২০১৫ সালে রেল মন্ত্রণালয়ের করা এক মূল্যায়ন অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার রেলপথ নবায়ন করা উচিত। কিন্তু দেশটিতে পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে উল্লেখযোগ্য হারে পুরাতন ট্র্যাক সরিয়ে নতুন ট্র্যাক স্থাপনের কাজটি করা হচ্ছে না। ২০১৫ সালে মাত্র ২১০০ কিলোমিটার ট্র্যাক নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গ্রীষ্মে তীব্র গরমে রেলওয়ের ট্র্যাক প্রসারিত হয়ে যায়। আর শীতে ঠান্ডায় রেলওয়ে ট্র্যাকগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে ট্রেনলাইন হয়ে যায় ত্রুটিপূর্ণ। ২০১৪ সালে দেশটির রেলওয়ের একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে শীত ও গ্রীষ্মে রেললাইনের এ ত্রুটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়, খুব দ্রুতই শীত চলে আসছে। শীতকালীন রক্ষণাবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যথাযথ সময়ে রেললাইনের ত্রুটি নির্ণয় করা উচিত। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ভারতের রেলওয়েতে প্রায় ১৩৬টি ত্রুটি শনাক্ত ও মেরামত করা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। পুরোনো রেলগাড়ি সরিয়ে নতুন গাড়ি আনার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ অর্থ। 

এছাড়াও ট্রেন ও গাড়ির অহরহই সংঘর্ষ হচ্ছে। কেননা ভারতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি রেলক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো লোকবলই নেই। ভারতের রেলে ভঙ্গুর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল কারণ ফান্ড ও দীর্ঘস্থায়ী পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব। ২০১৫ সালের মূল্যায়নেও এ কথা স্বীকার করা হয় যে, রেলের নিরাপত্তায় অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হচ্ছে। দেশটির সাবেক রেলওয়ে মন্ত্রী দিনেশ ত্রিভেদি বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের রেলওয়ে এখন ‘দেউলিয়া’। 

রেল মন্ত্রণালয়ের ফোকাস অপারেশন থেকে সরে মূলত রেলের প্রসাধনী পরিবর্তনে চলে গিয়েছে।’ দেশটির রেলওয়েতে রাজস্ব আয়ের প্রবণতাও কমে এসেছে। ২০১৫-১৬ সালে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪.৬ ভাগ; যা এর আগের চার আর্থিক বছরের ১০ থেকে ১৯ ভাগ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম। এর কারণ হিসাবে অর্থনৈতিক মন্দা ও যাত্রীরা বুকিং কমিয়ে দেওয়াকে কারণ হিসাবে দেখা হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের বর্তমান সরকার বুলেট ট্রেন চালু, স্টেশনে ওয়াইফাই সুবিধার মতো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু অনেকেই সরকারকে বিদ্রূপ করে বলেছেন, যাত্রীরা যাতে ‘জীবিত অবস্থায়’ যাত্রা যাতে শেষ করতে পারেন সেদিকেই প্রথমে নজর দেওয়া উচিত।

ভারত ট্রেন দুর্ঘটনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম