ভারত-পাকিস্তানের আকস্মিক যুদ্ধবিরতি কি টিকবে?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সম্প্রতি কাশ্মীর পহেলগাঁও বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পালটা জবাবে ড্রোন হামলা চালায় ইসলামাবাদও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ থেকে লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে। এতে এই শান্তি কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ৪৮ ঘণ্টার জোরাল প্রচেষ্টায় ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
মার্কো রুবিও বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।
চির বৈরী এই দুই দেশ যুদ্ধবিরতি কীভাবে এল—সে সম্পর্কে যে পরস্পরবিরোধী বয়ান দিয়েছে, তা খুব একটা আশ্চর্যজনক নয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত নিজেকে উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে দেখে এবং দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ব্যাপারে রক্ষণশীল। অন্যদিকে, পাকিস্তান বিদেশি সাহায্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় দেশটি এটিকে স্বাগত জানায়।
চার দিন ধরে একে অপরের ভূখণ্ডে সরাসরি সামরিক হামলার পর অনেকে আশঙ্কা করছিলেন, কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে এই হামলা-পাল্টা হামলা চলতেই থাকবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
শনিবার বিকালে আকস্মিক যুদ্ধবিরতি ছিল বিস্ময়কর। কারণ, সকালে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক লড়াই চলছিল। শনিবার ভোরে পাকিস্তান জানায়, ভারত তাদের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।
দেশটি জানায়, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে শুরু করে রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত এসব হামলা হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউটের ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার রিসার্চ ফেলো ড. অপর্ণা পান্ডে বলেছেন, ভারত কখনোই কোনো বিবাদে মধ্যস্থতা মেনে নেয়নি, তা ভারত-পাকিস্তান হোক বা ভারত-চীন, বা অন্য কোনো।
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে, পাকিস্তান সব সময় আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা চেয়েছে, তাই তারা এর প্রশংসা করবে। তিনি যোগ করেন, কাশ্মীর বিবাদ নিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আলোচনা ও সমাধানের এটাই ‘একমাত্র উপায়।’
ভারত ও পাকিস্তান আপাতত যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে সরে এলেও, যুদ্ধবিরতি টিকবে কিনা তা দেখার বিষয়। শনিবার ভারত-নিয়ন্ত্রিত এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত উভয় কাশ্মীরেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি পাকিস্তানকে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। তবে দেশটি জোর দিয়ে বলেছে যে তারা ‘যুদ্ধবিরতি আন্তরিকভাবে মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
পর্যটকদের ওপর হামলার পর উভয় পক্ষ আরও কিছু প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে ছিল ভিসা স্থগিত করা, বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা এবং ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিবণ্টন চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। এসব পদক্ষেপ প্রত্যাহার হবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
