Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ধমকে কাবু মোদি, ভারতে সমালোচনার ঝড়

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ০৯:০৬ পিএম

ট্রাম্পের ধমকে কাবু মোদি, ভারতে সমালোচনার ঝড়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারত এবং পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কারিগর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার অনুরোধে বা ধমকেই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর বৈরি প্রতিবেশি। এরপর থেকে ভারত ইস্যুতে একের পর এক মন্তব্য করেই চলেছেন তিনি। একবার বলছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে। আবার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল-এর প্রধান নির্বাহী টিম কুককে বলছেন, তারা যেন ভারতে আইফোন না বানান।

ট্রাম্পের এমন সব বক্তব্যের পর লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, যেন দ্রুত সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়৷ সেখানে পহেলগাঁও, অপারেশন সিঁদুর এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবি তুলেছেন তিনি। ভারতের অন্যান্য বিরোধী দলও এই সুরেই কথা বলছে।

বিরোধী দলগুলো শুরুতে পহেলগাঁও ইস্যুতে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, অপারেশন সিঁদুর সমর্থন করেছিল। তবে যুদ্ধবিরতির পর তারা এবার প্রশ্ন করতে শুরু করেছে।

রাজ্যসভার নেতা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একই দাবি করেছেন। গত ১৪ মে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে প্রত্যাঘাত করছিল, তা হঠাৎ থামিয়ে দেওয়ায় আমরা বিস্মিত। এটা স্পষ্ট হচ্ছে না। ফলে গুজব ছড়াচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সবার আগে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তিনিই দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেছেন। তিনি বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে ভারতকে চাপ দিয়েছিলেন। ভারত সরকার পুরো চুপ করে আছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। অতীতে ভারতের সব সরকার দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, কাশ্মীর হলো ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। তৃতীয় কোনো দেশের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। ট্রাম্পের দাবি ভারত খণ্ডন করেনি। আমরা মনে করি, আমাদের জাতীয় অবস্থান ও সম্মানের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে।’

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল শুল্ক-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন গেছেন। ট্রাম্প দোহা থেকে দাবি করছেন। সরকার চুপ করে আছে।’

লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও কংগ্রেসের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। বিহারের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তেজস্বী যাদব বলেছেন, সংসদ থেকে একটা স্পষ্ট বার্তা যাওয়া দরকার। বাণিজ্যের নামে আমরা কখনো ঝুঁকব না। আমরা সার্বভৌম দেশ। আমাদের তৃতীয় কোনো দেশের হস্তক্ষেপের দরকার নেই। আর কেউ যেন অর্থহীন নেতা হওয়ার চেষ্টা না করেন৷’

উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, আমরা কোন প্রতিশোধ নিয়েছি? কেন কোনো তৃতীয় পক্ষ সংঘাত থামাবে, কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থামাতে পারেন না? আমাদের দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো দেশের নেই৷’

বিরোধী দলগুলোর এমন দাবির মুখে বেশ চাপেই পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। অপারেশন সিঁদুরকে সফল দাবি করে জোরেশোরে বক্তব্য দিলেও ট্রাম্পের একের পর এক বক্তব্যের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন ভারতের শীর্ষ নেতা।

যদিও মোদির দল বিজেপির সংসদ সদস্য অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে বসেছিলেন। লিখেছিলেন, ‘ট্রাম্প হলেন আলফা মেল, মোদি হলেন আলফা মেল কা বাপ।’ পরে অবশ্য এই পোস্ট মুছে দিয়ে তিনি বলেছেন, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা তাকে পোস্টটি ডিলিট করতে বলেছেন। তিনি ব্যক্তিগত মতামত এভাবে পোস্ট করায় দুঃখিত।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নে ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে কথা চলছে৷ এটা জটিল আলোচনা। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই পক্ষের লাভ হয় এমন বাণিজ্যচুক্তি করা হবে।’

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো ভারতকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলছেন, ট্রাম্প এসব মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতকে ধরাশায়ী করে দিয়েছেন। ভারত আঞ্চলিক প্লেয়ার থেকে আন্তর্জাতিক প্লেয়ার হতে চাইছিল, জি২০তে গুরুত্ব পাচ্ছিল, বিশ্বগুরু নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেই ভারতকে বিশাল ধাক্কা দিয়েছেন ট্রাম্প।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার ভাষায়, ‘ইন্দিরা গান্ধীকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, ১৯৭১-এ যুদ্ধ বন্ধ করতে। ইন্দিরা শোনেননি। অ্যামেরিকা সেভেন ফ্লিট পাঠায়। তাও ইন্দিরা পিছু হটেননি। আর এবার বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের হুমকিতেই যুদ্ধবিরতি হয়ে গেলো!’

বিশ্বনাথ বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতকে প্রধান পার্টনার করেছিল। ভারতকে সঙ্গে নিয়ে কোয়াড তৈরি হয়। ট্রাম্প পুরো বদলে দিলেন। তিনি পুরোনো বন্ধু হিসাবে পাকিস্তানকে রিভাইভ করলেন। ক্লিন্টনের সময় থেকে ভারত যে প্রাধান্য পাচ্ছিল, সেখান থেকে সরে এলেন ট্রাম্প। আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি অ্যাপলকে ভারতে বিনিয়োগ করতে মানা করেন, তারপরে তারা কি তাকে অমান্য করে এই বিনিয়োগ করতে পারে?’

শরদের মতে, ‘প্রতিবার যুদ্ধের পর ভারতে একটা ইউফোরিয়া থাকে। এবার নেই। এমনকী কারগিলের পরও তা ভরপুর ছিল। পোখরান ২-এর পর ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। কিন্তু ভারত তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। এবার কী হলো, যার জন্য ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকি মেনে নিতে হলো?’

ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম