Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

মঙ্গলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের: লাল গ্রহে নতুন দিগন্তের সূচনা?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

মঙ্গলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের: লাল গ্রহে নতুন দিগন্তের সূচনা?

ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা পরিচালনার পথে এক যুগান্তকারী সাফল্যের দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে, চীনের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংরক্ষণের একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। এই উদ্ভাবন লাল গ্রহে ভবিষ্যৎ মিশনগুলোর জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, তারা মঙ্গলের বাতাসকে ব্যবহার করে তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উচ্চ ঘনত্ব এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা এই তাপ-থেকে-বিদ্যুৎ রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর ফলে হিলিয়াম বা জেননের মতো ব্যয়বহুল গ্যাসের প্রয়োজন পড়বে না।

এই গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ‘মার্স ব্যাটারি’নামে একটি নতুন ধারণার উদ্ভাবন। এই ব্যাটারি মঙ্গলের বাতাসে থাকা উপাদান শোষণ করে তা থেকেই বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এর মানে হলো, ভবিষ্যৎ মঙ্গল মিশনগুলিতে পৃথিবী থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি পরিবহনের পরিবর্তে, তারা মঙ্গলের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের শক্তি উৎপন্ন করতে পারবে। এটি মহাকাশযাত্রার খরচ এবং জটিলতা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

শুধু উৎপাদন নয়, গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন 'মার্স ব্যাটারি' নামের একটি ধারণা, যা মঙ্গলের বাতাসে থাকা উপাদান শোষণ করে তা থেকেই তৈরি করে বিদ্যুৎ। লিথিয়াম-এয়ার বা লিথিয়াম-CO₂ ব্যাটারির মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে রোভার কিংবা হেলিকপ্টারও চালানো সম্ভব। মঙ্গলগ্রহের দিন-রাত্রির বিশাল তাপমাত্রা পার্থক্যেও এই ব্যাটারি কাজ করতে সক্ষম বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসেও এটি নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা ভবিষ্যতের গবেষণা ঘাঁটি নির্মাণে বড় সহায়ক।

 চীনা বিজ্ঞানীদের দলটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল এবং তাপমাত্রা (যেমন শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) অনুকরণ করে ল্যাবরেটরিতে এই ব্যাটারির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে, প্রতিকূল পরিবেশেও এই ব্যাটারি স্থিরভাবে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এটি মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং মানব মিশনের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহের পথ প্রশস্ত করবে।

যদি এই দাবিগুলো বাস্তবে রূপ নেয়, তবে এটি মঙ্গল গবেষণায় এক বিশাল পদক্ষেপ হবে। নিজস্ব শক্তির উৎস থাকার অর্থ হলো মঙ্গল গ্রহে আরও বেশি সময় ধরে রোভার এবং ল্যান্ডার পরিচালনা করা যাবে, এমনকি ভবিষ্যতে মানব বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রেও এটি একটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে। এই আবিষ্কার চীনের মহাকাশ গবেষণার সক্ষমতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে আরও একবার প্রমাণ করল। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ এবং মঙ্গলে এর চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম