Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

২০০ বার সাপের কামড়—চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যতিক্রমী অবদান এক মার্কিন নাগরিকের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১১:২২ এএম

২০০ বার সাপের কামড়—চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যতিক্রমী অবদান এক মার্কিন নাগরিকের

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ছোট শহর টু রিভারসের বাসিন্দা টিম ফ্রিডে। সাপের বিষের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগের অংশ হিসেবে— গত দুই দশকে তিনি নিজের শরীরে ইচ্ছাকৃতভাবে ২০০ বারের বেশি সাপের কামড় এবং ৬৫০ বারের বেশি সাপের বিষ ইনজেকশন নিয়েছেন তিনি।

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

এই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এখন এমন এক নতুন ধরনের অ্যান্টিভেনম তৈরির আশাবাদী যা বহু প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধেও কাজ করবে—একটি সম্ভাব্য ‘সার্বজনীন অ্যান্টিভেনম’।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পরদিন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ফ্রিডে নিজের বাসার বেইসমেন্টে যান এবং নিজেকে দুটি মারাত্মক বিষধর সাপের কামড় খাওয়ান। চারদিন পর তিনি কোমা থেকে জেগে ওঠেন। 

৫৭ বছর বয়সি ফ্রিডে বলেন, আমি জানি সাপের কামড়ে মৃত্যুর অভিজ্ঞতা কেমন।

তবে এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা তাকে সাপ থেকে দূরে রাখেনি। বরং তিনি প্রতিজ্ঞা করেন আরও সতর্ক হবেন। ছোটবেলা থেকেই সাপের প্রতি টান ছিল তাঁর।  পাঁচ বছর বয়সে একটি নিরীহ গার্টার সাপের কামড় থেকেই যাত্রা শুরু। এরপর লুকিয়ে ঘরে সাপ আনা, পিকল জারে রাখা—মা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করলেও তাঁর সাপ-ভালোবাসা থামেনি।

নিজেকে বানালেন ‘জীবন্ত গবেষণাগার’

ফ্রিডে বিশ্বাস করতেন, ধীরে ধীরে শরীরকে বিষের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিলে তৈরি হবে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা—যা ‘মিথ্রিডাটিজম’ নামে পরিচিত। যদিও এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কোনোভাবে ঘরোয়া পরীক্ষার উপযোগী নয়।

সাপের বিষ থেকে তৈরি প্রচলিত অ্যান্টিভেনম মূলত ঘোড়ার শরীরে অল্পমাত্রায় বিষ ইনজেক্ট করে তৈরি হয়, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও থাকে। এছাড়া বেশিরভাগ অ্যান্টিভেনম কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি সাপের বিরুদ্ধেই কাজ করে। অথচ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০০ ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে।

প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান এবং ৪ লাখের বেশি মানুষ অঙ্গচ্ছেদ বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভোগেন—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ ক্ষতিগ্রস্তরা সাধারণত প্রত্যন্ত ও দরিদ্র অঞ্চলের বাসিন্দা।

রক্ত থেকে আবিষ্কারের পথে

দীর্ঘদিন ধরে কোনো বিজ্ঞানী তার অনন্য প্রতিরোধক্ষমতার গুরুত্ব দেননি। অবশেষে ২০১৭ সালে ইমিউনোলজিস্ট জ্যাকব গ্লানভিল (যিনি পূর্বে সার্বজনীন ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেছেন) ফ্রিডের একটি ভিডিও দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

‘আমি বলেছিলাম, আপনার রক্তের কিছু নমুনা চাই’ বলেন গ্লানভিল।  জবাবে ফ্রিডে বলেন, ‘এই ফোনকলের জন্য আমি বহু বছর অপেক্ষা করেছি।’

চলতি বছরের মে মাসে জার্নাল সেলে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়, ফ্রিডের রক্ত থেকে নেওয়া দুটি অ্যান্টিবডি এবং একটি ওষুধ ‘ভ্যারেসপ্লাডিব’ ব্যবহার করে তৈরি নতুন অ্যান্টিভেনম ইঁদুরের দেহে ১৯টি সাপের মধ্যে ১৩টির বিষের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ এবং বাকি ছয়টির বিরুদ্ধে আংশিক প্রতিরোধ দিয়েছে।

গবেষকেরা এখন কুকুরের দেহে পরীক্ষার পরিকল্পনা করছেন, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে বিষাক্ত ভাইপার সাপ বেশি।

অস্ট্রেলিয়ার ভেনম রিসার্চ ইউনিটের গবেষক টিমোথি জ্যাকসন গবেষণাটিকে প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে, কারণ এখন অনেক অ্যান্টিবডি সিন্থেটিকভাবেও তৈরি হচ্ছে।

তবু গ্লানভিলের কোম্পানি সেন্টিভেক্সের লক্ষ্য একক ইনজেকশনের (যেমন ইপিপেন) মাধ্যমে সার্বজনীন অ্যান্টিভেনম তৈরি করা, যা সাশ্রয়ী রাখতে ভারতে উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে।

‘আমি গর্বিত’—বলছেন টিম ফ্রিডে

২০১৮ সালে নিজের শরীরে বিষ নেওয়া বন্ধ করেন ফ্রিডে, কারণ তখন তিনি সেন্টিভেক্সে কাজ শুরু করেন এবং কোম্পানির দায় এড়াতে এটি জরুরি ছিল।

তবে তিনি জানান, আমি এটা মিস করি।  আবার সাপের কামড় খাওয়ার ইচ্ছা আছে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম