Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

লন্ডনে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ‘রূপরেখা’ চূড়ান্ত

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ‘রূপরেখা’ চূড়ান্ত

৯ জুন লন্ডনের ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে বাণিজ্য আলোচনা শেষে ছবি তোলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা। ছবি: ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বৈশ্বিক বাণিজ্যে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সহজ করার জন্য একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। লন্ডনে দুই দিনব্যাপী বৈঠক শেষে বুধবার উভয় পক্ষ এই ঘোষণা দেয়।

মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন।

চীনের বাণিজ্য আলোচক লি চেংগ্যাং জানান, গত মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার ফল এবং গত সপ্তাহে দুই দেশের নেতার ফোনালাপের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক জানান, এখন উভয় দেশ নিজ নিজ নেতৃত্বের কাছে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করবে এবং অনুমোদন পেলে রূপরেখাটি কার্যকর হবে।

যদিও চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে লাটনিক ইঙ্গিত দেন, উভয় পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও প্রযুক্তির ওপর আরোপিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চৌম্বক পদার্থের রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

লাটনিক বলেন, যখন বিরল খনিজ আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রও কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। এখন সেগুলো তুলেও নেওয়া হবে।  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায়, এটি ভারসাম্যপূর্ণভাবে।

চীন বিরল খনিজের বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে। এই খনিজ পদার্থ গাড়ি থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত নানা শিল্পে ব্যবহৃত হয়, এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে অনেকাংশেই চীনের উপর নির্ভরশীল।

যুক্তরাষ্ট্রের মতে, চীন জেনেভা আলোচনায় রপ্তানি সহজ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা থেকে সরে আসায় যুক্তরাষ্ট্র চিপ ডিজাইন সফটওয়্যারের রপ্তানি সীমিত করে এবং চীনা ছাত্রদের ভিসা বাতিলের হুমকি দেয়।

মার্কিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট বলেন, চীনের উৎপাদন খাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাইক্রোচিপের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে অত্যাধুনিক এনভিডিয়া চিপের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনের সফটওয়্যার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনের তৈরি এআই চিপ ব্যবহারে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতি সতর্কবার্তা এবং হুয়াওয়ের মতো কোম্পানির ওপর প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ।

এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে লন্ডনে হওয়া বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে আস্থার ভিত্তি গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন চীনের উপবাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগ্যাং।

২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রযুক্তিভিত্তিক বাণিজ্য যুদ্ধের কেন্দ্রে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তি চীনের সামরিক খাতকে শক্তিশালী করতে ব্যবহৃত হতে পারে।

চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২০২৩ সালে উন্নত চিপযুক্ত মেট ৬০ স্মার্টফোন উন্মোচনের মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ফিরে আসে। ওই ফোনের প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করেছিল, তারা বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তদন্ত শুরু হয়।

হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই সম্প্রতি চীনের সরকারি দৈনিক পিপলস ডেইলি-কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের ক্ষমতা অনেক বেশি করে দেখিয়েছে। আমরা এখনো ততটা অগ্রসর হইনি।

তবে তিনি বলেন, চীনের বর্তমান চাহিদা চিপগুলোর স্তরীকরণ বা গুচ্ছবদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করেও পূরণ করা সম্ভব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনার অগ্রগতি ভবিষ্যতে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে, তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে উত্তেজনা আবারো বাড়তে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম