Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইসরাইল-ইরান সংঘাতের প্রভাব

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়াল ভারত

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়াল ভারত

প্রতীকী ছবি

ইসরাইলের সামরিক হামলার জেরে ইরান-ভিত্তিক উত্তেজনার মধ্যে জুন মাসে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে ভারত। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও, রাশিয়া থেকে দেশটির তেল আমদানির পরিমাণ মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ দেশগুলোর সম্মিলিত সরবরাহকেও ছাড়িয়ে গেছে।

রোববার (২২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা পিটিআই।

বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষক সংস্থা কেপলারের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ভারতীয় রিফাইনারিগুলো প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিমাণ ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের সম্মিলিত সরবরাহ থেকেও বেশি।

মে মাসে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ১৯.৬ লাখ ব্যারেল। একই সঙ্গে, জুনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯ লাখ ব্যারেল প্রতিদিন, যা আগের মাসের ২.৮ লাখ ব্যারেল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতের জুন মাসের তেল আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল, যা আগের মাসের তুলনায় কম। কেপলারের তথ্য বলছে, ইসরাইল-ইরান সংঘাত সরাসরি সরবরাহে প্রভাব ফেলেনি ঠিকই, তবে পরোক্ষ সংকেত উদ্বেগজনক।

বিশ্লেষক সুমিত রিতোলিয়া জানান, ‘জাহাজ মালিকরা পারস্য উপসাগরের দিকে খালি ট্যাংকার পাঠাতে অনিচ্ছুক, যার ফলে এই অঞ্চলে গন্তব্যধারী জাহাজের সংখ্যা ৬৯ থেকে কমে ৪০-এ নেমে এসেছে। উপসাগর অবমান পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যগামী জাহাজ সংকেত অর্ধেকে নেমে এসেছে।’


বিশ্লেষণে আরও জানানো হয়, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তবে তা বৈশ্বিক জ্বালানি প্রবাহে বিশাল প্রভাব ফেলবে। কারণ এই সরু জলপথ দিয়েই সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপুল পরিমাণ তেল ও কাতার থেকে এলএনজি রপ্তানি হয়। ভারতের তেলের ৪০ শতাংশ ও গ্যাসের অর্ধেক আমদানি এই প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল।

যদিও হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছে কেপলার। কারণ এতে চীন, ইরানের প্রধান তেল ক্রেতা, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া, ইরান নিজেও প্রায় ৯৬ শতাংশ তেল রপ্তানি করে খার্গ দ্বীপ দিয়ে, যেটি হরমুজ প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত। নিজস্ব রপ্তানির পথ বন্ধ করা ইরানের জন্য আত্মঘাতী হবে। উপরন্তু, ইরান সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে অগ্রগতি করেছে, সেটাও ঝুঁকিতে পড়বে।


রিতোলিয়া আরও জানান, ভারতের আমদানি কৌশলে গত দুই বছরে বৈচিত্র্য এসেছে। রাশিয়ার ইউরালস, এসপিও, সকোল ধরণের তেল হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে সুয়েজ খাল, আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত বা প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে আসে। ভারতীয় রিফাইনারিগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক ব্যয়বহুল উৎস থেকেও তেল আমদানির সক্ষমতা তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ‘ভারতের জুন মাসের আমদানির পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে—দেশটি এখন একটি স্থিতিশীলতা-কেন্দ্রিক উৎস মিশ্রণ অনুসরণ করছে। হরমুজে স্বল্পমেয়াদি কোনো বিঘ্ন ঘটলেও, রাশিয়ান তেল সহজলভ্য ও তুলনামূলক সস্তা বিকল্প হিসেবে আরও গুরুত্ব পাবে। ভারত হয়তো যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা ও ব্রাজিলের দিকে আরও ঝুঁকবে, যদিও এতে পরিবহন ব্যয় বাড়বে।’

জরুরি পরিস্থিতিতে ভারত ৯-১০ দিনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি চালিয়ে নেওয়া যাবে এমন কৌশলগত মজুত ব্যবহার করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান-ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম