সিরিয়ায় আসাদ ঘনিষ্ঠ আলাউইদের হত্যা-অপহরণ বন্ধের তাগিদ জাতিসংঘের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১১:১৮ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিরিয়ায় নতুন কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন। তবে সিরিয়ার উপকূলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বড় ধরনের বিস্ফোরণের পরও আলাউই সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন জাতিসংঘ তদন্ত কমিশনের প্রধান পাওলো পিনেইরো।
শনিবার (২৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক বৈঠকে পিনেইরো বলেন, ইসলামপন্থি সাবেক বিদ্রোহীদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সিরিয়ার সরকার, যারা সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তার দলকে উপকূলে সহিংসতার সাক্ষী ও ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ‘অপ্রতিরোধ্য প্রবেশাধিকার’ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মার্চের সহিংসতার পর পালিয়ে যাওয়া আলাউই সম্প্রদায়ের মানুষের সম্পত্তি জব্দ এবং তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ও নির্বিচার গ্রেফতারের ঘটনার খবর এখনও আসছে।’
পিনেইরো জানান, তার কমিশন ‘এই বসন্তে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা কমপক্ষে ছয়জন আলাউই নারী অপহরণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে,’ যাদের মধ্যে দুইজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও আরও অপহরণের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পেয়েছে কমিশন।
গত রোববার দামেস্কের বাইরে একটি গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলার পর পিনেইরো উপাসনালয় রক্ষায় আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। বহু বছর পর সিরিয়ার রাজধানীতে এ ধরনের প্রথম হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং অনেকে আহত হন।
সিরিয়ার সরকার জানিয়েছে, হামলাকারীরা দায়েশ (আইএস) গোষ্ঠীর একটি সেলের সদস্য ছিল এবং তারা দামেস্কের সাইয়্যিদা জয়নাব এলাকায় একটি শিয়া মাজারে হামলার আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।
পিনেইরো বলেন, ‘উপাসনালয়ে হামলা নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। কর্তৃপক্ষকে উপাসনালয় ও হুমকির মুখে থাকা সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং দোষী ও সহায়তাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
গত ডিসেম্বরে এক ঝটিকা বিদ্রোহী অভিযানে আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।
মার্চে সিরিয়ার উপকূলে আসাদপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর প্রতিশোধমূলক হামলায় শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই আসাদ-ঘনিষ্ঠ আলাউই সম্প্রদায়ের।
পিনেইরো জানান, মার্চের ঘটনার আগেও হামা ও হোমস প্রদেশের গ্রামগুলোতে ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’ হয়েছে। জানুয়ারির শেষদিকে যেসব সাবেক সৈনিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আসাদের অধীনে অস্ত্র সমর্পণ করে সাধারণ ক্ষমার আশায় সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ‘নির্যাতন ও হত্যা’ করা হয়েছে।
তিনি জানান, উপকূলে হামলার ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশংসা করেন এবং সরকারের কর্মকর্তারা তার দলকে জানিয়েছেন, ‘অসংখ্য সন্দেহভাজন হামলাকারীকে’ গ্রেফতার করা হয়েছে।
পিনেইরো বলেন, সরকারকে নতুন সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাবেক বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে একীভূত করার সময় সংস্কার ও যাচাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে এবং সিরিয়ায় সহিংসতা ও প্রতিশোধের দীর্ঘস্থায়ী চক্রের অবসান ঘটাতে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও বিভাজন নতুন করে দানা বাঁধছে।

