Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

নিজের পছন্দে বিয়ে করায় ‘অনার কিলিং’, পাকিস্তানে যুগলকে গুলি করে হত্যা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ এএম

নিজের পছন্দে বিয়ে করায় ‘অনার কিলিং’, পাকিস্তানে যুগলকে গুলি করে হত্যা

এই স্ক্রিনশটটি ২০ জুলাই এক ভিডিও থেকে নেওয়া, যেখানে বেলুচিস্তানে নিজের পছন্দে বিয়ে করায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা এক যুগলকে গুলি করার মুহূর্ত দেখা যাচ্ছে। (স্ক্রিনশট/সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম)

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ‘অনার কিলিং’-এর নামে এক যুগলকে গুলি করে হত্যার একটি লোমহর্ষক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন ব্যক্তি ওই যুগলকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগেই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল, তবে ভিডিও অনলাইনে ছড়ানোর পরই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি ভাইরাল ভিডিওর পর ঘটনাটিকে ‘সামাজিক মূল্যবোধ ও মানব মর্যাদার প্রকাশ্য অপমান’ বলে আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেয়া পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।

তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশকে এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’

জড়িতদের শনাক্তের নির্দেশ

বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিকে ঘটনাস্থল নির্ধারণ করে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা’

মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই ধরনের নৃশংসতা কোনো অবস্থায় সহ্য করা হবে না। যারা রাষ্ট্রের মর্যাদা চ্যালেঞ্জ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত যুগল ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, যা তাদের ‘অনার কিলিং’-এর নামে হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

‘অনার কিলিং’ কেনো পাকিস্তানে?

পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ বা ‘সম্মান রক্ষার নামে হত্যা’ মূলত সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে নারী ও পুরুষকে হত্যা করার এই প্রবণতার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:

প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি:

বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক পরিবার ‘অপমান’ হিসেবে দেখে। ভালোবাসার বিয়ে, সম্পর্কের গুজব বা কোনো পুরুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলার অভিযোগে নারীকে হত্যার ঘটনা ঘটে।

পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা:

নারীর স্বাধীনতা ও ইচ্ছার কোনো মূল্য না দিয়ে পরিবার ও সমাজের ‘সম্মান’কে বড় করে দেখা হয়।

 আইনের দুর্বল প্রয়োগ:

পাকিস্তানে অনেক সময় ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনায় হত্যাকারীরা পারিবারিক সদস্য হওয়ায় প্রায়ই মীমাংসার মাধ্যমে ছাড় পেয়ে যায়। ফলে অপরাধীরা শাস্তি থেকে রেহাই পায়, যা এ ধরনের হত্যাকে উৎসাহিত করে।

পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা কী?

পাকিস্তানে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ এবং মিডিয়ার নজরদারির কারণে ‘অনার কিলিং’ ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে। যদিও আইন প্রণয়ন ও আদালতের রায়ে কখনো কখনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, তবুও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে ‘অনার কিলিং’ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম