ফিরাস আলসাদোনি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমি ফিরাস আলসাদোনি। বয়স ২৮। আমার ছোট দুটি সন্তান আছে-লানা ও আমির। গাজার খান ইউনুস শহরের আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবির থেকে দুঃখে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের কাছে লিখছি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যখন এই যুদ্ধ শুরু হয় তখন থেকেই আমার জীবন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। আমি আমার পরিবারের (পিতৃকূল) ১৮ জনকে হারিয়েছি। যাদের মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার সবকিছু। বর্বর ইসরাইল আমার জীবনের সব সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়েছে। আমি ছিলাম ট্যাক্সিচালক। যুদ্ধের আগে খান ইউনিস থেকে শুরু করে সারাদিন গাজার শহরে শহরে ঘুরতাম যাত্রী নিয়ে। আমার সুন্দর গাড়িটাই ছিল সারাদিনের সঙ্গী। দিন শেষে বাড়ির দিকে ছুটতাম ঘরে ফেরার টানে। সেই আমিই এখন শরণার্থী শিবিরে! রন্ধনশালার রাধুনি (স্বেচ্ছাশ্রম)! ত্রাণসংস্থার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি-কখন জুটবে একবেলার খাবার!
খুব বেশি দরিদ্র ছিলাম না আমরা। খান ইউনুসে আমাদের সাজানো তিনটি বাড়ি ছিল। যুদ্ধের প্রথম মাসেই আমাদের একটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ইসরাইলি বাহিনী আমাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। সেসময়েই বিমান হামলা চালিয়ে আমাদের বাকি দুটি বাড়ি ও আমার গাড়িটিও ধ্বংস করে। ওই গাড়িটিই ছিল আমার আয়ের একমাত্র উৎস। বাড়িঘর হারানোর পর আমরা বাধ্য হয়ে একটি তাঁবুতে থাকতে শুরু করি। যেটা শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর গ্রীষ্মকালে অসহনীয় গরম। দুর্ভাগ্যবশত, কিছুদিন আগে, আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। তিনি মাত্র ৫৫ বছর বয়সে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন। সেদিন থেকে জীবনে যেন আরও অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় এখন সব দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার কাঁধে। আমার মেয়ে লানা, মাত্র তিন বছর বয়সি। সে ন্যূনতম খাদ্য কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রটুকুও পাচ্ছে না। টাকার অভাবে আমি ওকে কিছু কিনে দিতে পারি না। সেটা বলতেও আমার লজ্জা লাগে। কিছুদিন আগে আমার ছেলের জন্ম হয়েছে। একটি নবজাতকের প্রয়োজনীয় যত্ন, খাবার এবং অন্যান্য জিনিসের কোনো কিছুই আমি জোগাড় করতে পারি না। কারণ এখন সবকিছুই দুষ্প্রাপ্য। যা পাওয়া যায় তার দামও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সেই আমিই এখন শরণার্থী শিবিরে! রন্ধনশালার রাধুনি! ত্রাণসংস্থার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি-কখন জুটবে একবেলার খাবার!

সবার ছোট ভাই আহমাদ। যার বয়স ১৯। ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এখনও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটিও দিতে পারেনি সে। গাজার জীবন নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। কারণ এখন তো সারা দুনিয়াই জানে গাজার ভয়াবহ বাস্তবতা। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের হারিয়েছি, আমাদের তিনটি বাড়ি হারিয়েছি, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সুখের স্মৃতিও হারিয়েছি। প্রতিদিনই আমরা কিছু না কিছু হারাচ্ছি।
দুর্ভাগ্যবশত, কিছুদিন আগে, আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন। সেদিন থেকে জীবনে যেন আরও অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় এখন সব দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার কাঁধে। অথচ টাকার অভাবে আমি ছোট্ট মেয়েটিকেও কিছু কিনে দিতে পারি না! সেটা বলতেও আমার লজ্জা লাগে!
লেখক: ট্যাক্সিচালক, আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবির, খান ইউনিস, গাজা
