সাক্ষাৎকার: মো. ওয়াহিদুজ্জামান
ব্যবসাবান্ধব জনমুখী বাজেট চাই
বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিতে বেসরকারি পর্যায়ে আবাসন শিল্প গড়ে উঠেছে। এ খাতের সঙ্গে যুক্ত এখন প্রায় ২ কোটি মানুষ। নানামুখী সংকট ও সমস্যা রয়েছে আবাসন খাতে। আসন্ন বাজেটে সরকারের কাছে ফ্ল্যাট নিবন্ধন খরচ সিঙ্গেল ডিজিট করা এবং ঢাকার বাইরে আবাসন সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এসব বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মতিন আব্দুল্লাহ।
যুগান্তর : আসন্ন বাজেটে সরকারের কাছে আবাসন খাতসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা কী?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটাই প্রথম বাজেট। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ব্যবসাবান্ধব একটি জনমুখী বাজেট। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শত শত শহিদ, আহত এবং পঙ্গুত্ববরণকারীদের কথা বিবেচনায় রেখে বাজেট করতে হবে। দেশের অন্যান্য খাতের মতো আবাসন খাতেরও বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। যে কারণে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অথচ এই খাত এবং এর সঙ্গে যুক্ত শিল্প মিলিয়ে এতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ধরলে এ খাতের সঙ্গে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবিকা জড়িত। আর আবাসন সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের একটি। এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তবে জমির মালিকরা টাকার অভাবে ভবন করতে না পারায় ডেভেলপার শ্রেণি গড়ে উঠেছে। এতে বিনিয়োগকারী সংস্থার আর্থিক লাভ হলেও মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে। এখানে ডেভেলপার বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সরকারকে যথাযথ ট্যাক্সও পরিশোধ করছে।
যুগান্তর : সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা আছে?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে কেউ ন্যায্য অধিকার পায়নি। আবাসন খাতও নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমান নিয়মানুযায়ী ফ্ল্যাট নিবন্ধন খরচ (গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প শুল্ক, নিবন্ধন ফি, স্থানীয় সরকার ফি এবং সব শ্রেণির ভ্যাট) সাড়ে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে এটা কমিয়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ বা সিঙ্গেল ডিজিট করার দাবি জানাচ্ছি। সবাইকে ট্যাক্স নেটওয়ার্কের আওতায় আনা গেলে এসব খাতে এত ট্যাক্স আরোপ করতে হতো না। একটি বাচ্চা জন্মের পর যেমন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক, একটি বয়স নির্ধারণ করে ওই পর্যায়ে পৌঁছলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে দেওয়া উচিত। ১ থেকে ২ কোটি লোকের টিন সার্টিফিকেট থাকলেও ট্যাক্স দিচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোক। তাহলে তো ট্যাক্সের ঘাটতি থাকবেই। তখন বৈদেশিক সহায়তা নিতে হবে, নইলে নিজস্ব আয় দিয়ে বাজেট দেওয়া সম্ভব।
যুগান্তর : ফ্ল্যাট নিবন্ধন খরচ কমালে ফ্ল্যাটের বিক্রি বাড়বে?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বড় কথা হলো, ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ বেশি হওয়ায় গ্রাহকদের অধিকাংশ ফ্ল্যাটের নিবন্ধন করছে না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে যারা নিবন্ধন করছেন, তারা উচ্চমূল্য পরিশোধ করছেন। সরকার যদি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ অর্ধেক করে দেয়, তখন ফ্ল্যাট নিবন্ধন বাড়বে। সেখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে; যেটা তখন উচ্চমূল্যে ট্যাক্স আদায়ের চেয়ে বেশি হবে। আয় কম, ব্যয় বেশি করায় বিগত সরকার জোরপূর্বক ট্যাক্স বাড়িয়েছে। এ সরকার নানারকম সংস্কার করলেও ট্যাক্স কমানোর দিকে কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না। এছাড়াও আবাসন খাতসংশ্লিষ্টদের ওপর আরও অনেক ট্যাক্স রয়েছে।
যুগান্তর : সেগুলো কী ধরনের ট্যাক্স?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : এআইটি ট্যাক্স দিতে হচ্ছে আবাসন ব্যবসায়ীদের; বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে-ব্যবসায়ীদের এনবিআরের কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। এআইটি ট্যাক্স হলো-সরবরাহকারী ও ঠিকাদারদের সরবরাহ বা টিডিএস বাবদ দেওয়া অর্থের ওপর ১ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ। আর ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ২ কোটির বেশি পরিমাণ হলে এআইটি ট্যাক্সের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে রিহ্যাব চায়-টিডিএসের হার ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত শূন্য শতাংশ করা হোক। আর ১৬ লাখ থেকে এর বেশি টিডিএস-এর জন্য ২ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট ট্যাক্স তো রয়েছেই। বড় বড় কোম্পানি থেকে এআইটি পাওয়া গেলেও ছোট কোম্পানিগুলো ট্যাক্স দেয় না; সেই ট্যাক্স আবাসন ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে।
যুগান্তর : অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাবেন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনা প্রশ্নে ব্যবহারের বিষয়ে রিহ্যাব থেকে কোনো দাবি জানানো হচ্ছে না। তবে সরকার যদি টাকা পাচার রোধে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, সেটাকে সাধুবাদ জানাবে রিহ্যাব। কেননা এটা খারাপ হলেও দেশে রাখার স্বার্থে সরকারের ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা করা উচিত বলে মনে করি।
যুগান্তর : আবাসন খাত কেমন চলছে?
মো. ওয়াহিদুজ্জমান : এ মুহূর্তে আবাসন খাত ধীরে চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর টানা ৬ মাস নানা টানাপোড়েন চলেছে। আবাসন খাতের বেসিক সমস্যাগুলো সরকারের কাছে জানানো হয়েছে। সরকার সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিলে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে আবাসন খাত। এজন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান ড্যাপের যৌক্তিক সংশোধনও করতে হবে।
যুগান্তর : আবাসন ব্যবসায়ীরা সারা দেশে কাজ করছে না কেন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : ঢাকার বাইরে আবাসন প্রসারিত করতে হলে ট্যাক্স হলিডে দরকার। এটা চট্টগ্রামে দরকার নেই। রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরে দেওয়া যেতে পারে। আসন্ন বাজেটে ঢাকাসহ বিভিন্ন মেট্রোপলিটন এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে ৫ বছরের জন্য এবং পৌরসভার বাইরের এলাকায় নগরায়ণকে উৎসাহিত করতে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে দেওয়া যেতে পারে।
যুগান্তর : সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মো. ওয়াহিদুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
