Logo
Logo
×

যুগান্তরের বিশেষ আয়োজন

সাক্ষাৎকার

ব্র্যাক ব্যাংকে আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ

তারেক রেফাত উল্লাহ খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (কারেন্ট চার্জ), ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্র্যাক ব্যাংকে আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ

তারেক রেফাত উল্লাহ খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (কারেন্ট চার্জ), ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটি ব্যাংকটির ওপর গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাসেরই প্রতিফলন। সুশাসন, স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মনীতি মেনে চলা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও বজায় রাখার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। অ্যাপভিত্তিক (সুবিধা) তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে বিপ্লব এনেছে। ডিজিটাল অনবোর্ডিং থেকে আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদানের এই নিরবচ্ছিন্ন যাত্রাটি অত্যন্ত নিরাপদ। আমানতকারীদের সুবিধা দিতে গ্রাহককেন্দ্রিক নতুন উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তরের কাছে তুলে ধরেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রেফাত উল্লাহ খান।

যুগান্তর : বাংলাদেশের ব্যাংক আমানতের বর্তমান অবস্থা ও প্রবণতা কী? ব্র্যাক ব্যাংকে এই পরিস্থিতি কেমন?

তারেক রেফাত উল্লাহ খান : ২০২৪ সালে পুরো ব্যাংকিং খাতে যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সেখানে ব্র্যাক ব্যাংক অর্জন করেছে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, যা দেশের ব্যাংক খাতে এক উলে­খযোগ্য মানদণ্ড স্থাপন করেছে। গত বছর ব্যাংকিং খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও ব্র্যাক ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটি আমাদের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাসেরই প্রতিফলন।

এ আমানত সংগ্রহে সাফল্যের মূলে রয়েছে গ্রাহকের আস্থা অর্জনে আমাদের অবিচল মনোযোগ। আমরা মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকিং সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই হলো বিশ্বাস। সুশাসন, স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মনীতি মেনে চলা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও বজায় রাখার প্রতি আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকারও আমানতের এই রেকর্ড প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সর্বোচ্চ বাজার মূলধন, ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারমূল্য এবং শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় রেটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া সর্বোত্তম ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে বাজারে আমাদের নেতৃস্থানীয় অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ে টানা পাঁচ বছর ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষ টেকসই ব্যাংকগুলোর একটি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্লুমবার্গ সাসটেইনেবিলিটি তালিকায়ও ব্র্যাক ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমাদের টেকসই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

এই প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান সহায়ক শক্তি হলো শাখা নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত সারা দেশে বিস্তৃত আমাদের ফিজিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, যা শক্তিশালী ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা অ্যাপ’ এবং ‘কর্পনেট’-এর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহক সংযোগ ও সম্পৃক্ততা উলে­খযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। গ্রাহকদের জন্য যে কোনো সময়, যে কোনো স্থান থেকে ব্যাংকিং করার সুবিধা এনে দিয়েছে এই প্ল্যাটফর্মগুলো। এসব উদ্যোগের ফলে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে আমাদের শাখাগুলো গ্রাহক আমানতে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

যুগান্তর : ব্র্যাক ব্যাংক বর্তমানে কোন কোন প্রধান ডিপোজিট স্কিম অফার করছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট গ্রাহক গোষ্ঠীর জন্য পরিকল্পিত স্কিমগুলো কী কী?

তারেক রেফাত উল্লাহ খান : ব্র্যাক ব্যাংক রিটেইল, এসএমই এবং করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং গ্রাহকদের বহুমুখী প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন ধরনের ডিপোজিট প্রোডাক্টস চালু রেখেছে। আমাদের পোর্টফোলিওতে রয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্ট, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট এবং ডিপোজিট পেনশন স্কিম। সব ধরনের গ্রাহক শ্রেণির চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিটি প্রডাক্ট সুচিন্তিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।

আমাদের পণ্যগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন তা গ্রাহকদের তাদের আর্থিক জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে সঙ্গ দেয়, শিশুদের জন্য ফিউচার স্টার অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য গোল্ডেন বেনিফিট পর্যন্ত। আমরা সরকারি কর্মচারী, নাবিক, ফ্রিল্যান্সার এবং উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মতো নির্দিষ্ট পেশাজীবীর জন্যও বিশেষভাবে তৈরি পণ্য এনেছি। রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য আমাদের প্রবাসী সেগমেন্ট গ্রাহকদের বিদেশ থেকেই ডিজিটালভাবে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ প্রদান করে।

প্রযুক্তি সচেতন প্রজন্মের জন্য আমরা ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট এবং ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ড সুবিধা প্রদান করি। নারী, শিশু এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা আমাদের বিমা-সমর্থিত সঞ্চয় পণ্যগুলো তাদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করে।

আমাদের প্রধান নারী ব্যাংকিং উদ্যোগ ‘তারা’-এর মাধ্যমে আমরা নারীর ক্ষমতায়ন করি, অনুপ্রাণিত করি এবং বাংলাদেশজুড়ে তাদের সংযুক্ত করি। ‘তারা’ ব্যক্তিগত নারী গ্রাহক এবং নারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি আর্থিক ও জীবনধারাভিত্তিক সেবা প্রদান করে। সম্প্রতি আমরা আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকা নারীদের জন্য ‘তারা হোমমেকার সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি।

বৈচিত্র্য ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে আমরা সারা দেশে ১ হাজার ১২১টি সম্পূর্ণ ডিজিটাল এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে আমাদের পরিসর সম্প্রসারণ করছি। আমরা দেশের অন্যতম বৃহৎ এমএফএস সেবা প্রদানকারী বিকাশের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছি, যাতে গ্রাহক ডিজিটালি ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা ক্ষুদ্র গ্রাহক শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা।

টার্ম ডিপোজিট সেগমেন্টে আমরা গ্রাহকদের জন্য নানাবিধ সুবিধাযুক্ত বিভিন্ন প্রডাক্ট এনেছি। এর মধ্যে আছে ইন্টারেস্ট ফার্স্ট, মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ইন্টারেস্ট প্রদান সুবিধা। এছাড়াও আছে রিকারিং ডিপোজিট স্কিম, যা মাত্র ৫০০ টাকা থেকে শুরু হওয়ায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য এটি সহজলভ্য। আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং, প্রবাসী ব্যাংকিং, প্রিমিয়াম ব্যাংকিং, শিক্ষার্থী ও নারী গ্রাহকদের জন্য আলাদা মূল্যহার প্রদান করি, যাতে অন্তর্ভুক্তি ও বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত হয়।

করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য আমাদের রয়েছে ট্রানজেকশনাল অ্যাকাউন্ট, যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নানা সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া তাদের জন্য রয়েছে স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট, যেখানে জমাকৃত অর্থের ওপর ইন্টারেস্ট দেওয়া হয়। এটি সেসব কোম্পানির জন্য আকর্ষণীয়, যারা তাদের তহবিল নিরাপদে রাখতে চান এবং একই সঙ্গে কিছু মুনাফা অর্জন করতে চান। এ অ্যাকাউন্টে স্বল্পসময়ের অগ্রিম নোটিশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের সুবিধাও রয়েছে।

এছাড়া আমরা কাস্টমাইজড কালেকশন সলিউশন প্রদান করি, যা বিশেষ করে বৃহৎ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও দেশজুড়ে কালেকশনের প্রয়োজন রয়েছে, এমন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট মডেল ব্যবহার করে আমাদের শক্তিশালী কালেকশন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত অর্থ আদায়ে, লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়াতে, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এবং রিয়েল টাইম ইআরপি ইন্টিগ্রেশনের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ডিস্ট্রিবিউটর থেকে খুচরা বিক্রেতা এবং সেখান থেকে গ্রাহকের কাছে দ্রুত পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়। আমাদের এসব উদ্ভাবনী পণ্য ও সলিউশন শুধু গ্রাহকের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিকেই সহায়তা করে না, একই সঙ্গে সমাজে অর্থবহ ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সুবিধা প্রদান করে, যা তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন পূরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারেস্ট প্রদান করা কারেন্ট অ্যাকাউন্টগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। যেসব গ্রাহক ইন্টারেস্ট নেওয়া এড়াতে চান, তাদের জন্য আমরা ‘লো ফি, নো ইন্টারেস্ট’ কারেন্ট অ্যাকাউন্টের সুবিধাও দিয়ে থাকি।

নারী উদ্যোক্তারা বিশেষায়িত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সুবিধা পান, যেখানে রয়েছে অগ্রাধিকারভিত্তিক ইন্টারেস্ট হার। এর পাশাপাশি তারা প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রমের মতো অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের সুযোগও পান।

ক্লাব ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট, যা একাধিক লেনদেন সহজ করে এবং সেই সঙ্গে ইন্টারেস্ট অর্জনের সুযোগও দেয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বিশেষ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট অফার করি, যাদের ট্রেড লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক ব্যবসায়িক নিবন্ধন নাও থাকতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়াও ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর) সুবিধা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্টারেস্ট ফার্স্ট, মাসিক এবং ত্রৈমাসিক ইন্টারেস্ট প্রদান সুবিধা। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা উৎসাহিত করার জন্য আমরা মান্থলি ডিপোজিট স্কিম (ডিপিএস) অফার করি, যা মাত্র ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়।

যুগান্তর : প্রযুক্তি, পেমেন্ট এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমানতকারীদের সুবিধার্থে ব্র্যাক ব্যাংক কী ধরনের নতুন উদ্যোগ বা উদ্ভাবন এনেছে?

তারেক রেফাত উল্লাহ খান : প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং দ্রুতগতির এই যুগে ধারাবাহিক উদ্ভাবন ব্র্যাক ব্যাংকের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ।

আমাদের ই-কেওয়াইসি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহক নিজেরাই খুব সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এরপর তারা আমাদের অ্যাপ ‘আস্থা’তে নিবন্ধন করতে পারেন, যা গ্রাহকদের জন্য একটি জনপ্রিয় লাইফস্টাইল ও আর্থিক সহায়তা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। আস্থার বিশেষত্ব হলো, এটি গ্রাহকদের প্রাত্যহিক জীবন ও লাইফস্টাইল সংক্রান্ত চাহিদা পূরণ করে। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা স্থানান্তর করা যায়, কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করা যায়, বিল পরিশোধ ও বিভিন্ন খাতে (যেমন ইউটিলিটি বিল, টিউশন ফি, বাড়ি ভাড়া, ট্যুর প্যাকেজ ইত্যাদি) অর্থ প্রদান করা যায়। এছাড়া এই অ্যাপ ব্যবহার করে টার্ম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলা বা ভাঙানো, প্রয়োজনীয় স্টেটমেন্ট ও সার্টিফিকেট (আয়কর ও অন্যান্য প্রয়োজনে) সংগ্রহ করা এবং তথ্য হালনাগাদ করা যায়, সবকিছু ঘরে বসেই, ২৪/৭। আমরা দেশের একমাত্র ব্যাংক হিসাবে অ্যাপভিত্তিক (সুবিধা) তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে বিপ্লব এনেছি। ডিজিটাল অনবোর্ডিং থেকে আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদানের এই নিরবচ্ছিন্ন যাত্রাটি অত্যন্ত নিরাপদ, যেখানে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এবং বায়োমেট্রিক যাচাইকরণসহ উন্নত সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আমানতকারীদের আরও বেশি সুবিধা দিতে গ্রাহককেন্দ্রিক নতুন নতুন উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের করপোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং টিমকে শক্তিশালী করেছে কর্পনেট প্ল্যাটফর্ম। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ান-স্টপ সমাধান, যা করপোরেট গ্রাহকদের বহুমুখী চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি। ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেস ও শক্তিশালী নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ কর্পনেট দেশের অন্যতম অগ্রণী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসাবে স্বীকৃত।

আমরা বুঝি, করপোরেট ব্যাংকিংয়ের চাহিদা অনেক রকম হতে পারে, কখনো সরল, আবার কখনো অত্যন্ত জটিল।

তাই আমরা একই ধরনের সমাধানকে সবার জন্য উপযুক্ত মনে করি না। প্রতিটি গ্রাহকই অনন্য, আর তাদের জন্য তৈরি আমাদের সমাধানগুলোও তাই আলাদা। নমনীয়তা, কাস্টমাইজেশন এবং অংশীদারত্বই করপোরেট ব্যাংকিং খাতে আমাদের সাফল্যের মূল ভিত্তি। গ্রাহকদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি করায় আমরা গর্ব অনুভব করি।

আমরা আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে উন্নত ট্রেড সলিউশন প্ল্যাটফর্ম চালু করতে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

প্রশ্ন : নতুন ডিপোজিট স্কিম তৈরি এবং আমানতকারীদের জন্য পরিচালন পদ্ধতি উন্নয়নে আপনার ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তারেক রেফাত উল্লাহ খান : ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া এবং তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত সমাধান দেওয়ার ওপর। এটা ঐতিহ্যবাহী রিটেইল ব্যাংকিংয়ের ধারণা বদলে দিচ্ছে। গ্রাহকরা যেন ২৪/৭ যে কোনো সময়, শাখানির্ভর না হয়ে যে কোনো স্থান থেকে, ডিজিটালভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা ও ঋণ গ্রহণ করতে পারেন, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেখানে গ্রাহকের সুবিধাই সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে। গ্রাহককে তার জন্য উপযুক্ত পণ্য বেছে নিতে সহায়তা করা থেকে শুরু করে শুধু একটি ক্লিক, চ্যাট বা কলের মাধ্যমেই আমানত ও ঋণ পণ্যে গ্রাহককে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সেই সঙ্গে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যক্তিগতকৃত অফার দেওয়া, গ্রাহকের ব্যাংকিং যাত্রাটিকেই সুবিধাজনক করে তোলাই আমাদের মূল মন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিংকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে গ্রাহক তাদের আঙুলের ছোঁয়ায়ই ব্যাংকিং সেবা পাবেন, যে কোনো জায়গা থেকেই আমাদের সঙ্গে ব্যাংকিং করতে পারবেন।

যুগান্তর : ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে এবং আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কী ভ‚মিকা থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

তারেক রেফাত উল্লাহ খান : ম্যাক্রো ইকোনমিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক তদারকি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা ২৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হার লক্ষ করেছি, যা মূলত কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণের ফল। ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম চালু করা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, সুশাসন কার্যকর করার উদ্যোগ এবং ডিজিটাল ও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার মতো উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে।

এই ইতিবাচক গতিধারা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সামনে এগিয়ে যেতে হলে সরকারকে ব্যাংকগুলোকে বৈশ্বিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মানদণ্ড গ্রহণে উৎসাহিত করা উচিত। একই সঙ্গে কমপ্লায়েন্স বা নিয়ন্ত্রক নীতিমালার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। এ পদক্ষেপগুলো আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম