সাক্ষাৎকার
বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে স্থিতিশীলতা ফিরেছে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বের যে কোনো দেশেই বিপ্লব পরর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় স্থিতিশীলতা ফেরানো। এ স্থিতিশীলতা ফেরাতে অনেক দেশে বছরের পর বছর সময় লেগেছে। এসেছে একাধিক সরকার। কিন্তু আমরা, বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে মোটামুটি স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল, সার কেনার মতো ডলার ছিল না। বর্তমানে সে অবস্থা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিদেশিদের যে সব দায়-দেনা ছিল, সবগুলো পরিশোধ হয়েছে। সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল, দেশে স্থিতিশীল ফেরানো, রাষ্ট্র সংস্কার, জুলাই গণ-হত্যায় জড়িতদের বিচার এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ। সে লক্ষ্যে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। তার মতে-আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক কোনো চাপ নেই। আর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে একদিনও দেরি হবে না। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হবে। এ ছাড়াও দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মনির হোসেন
যুগান্তর : গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন কী?
শফিকুল আলম : এ সরকারের অর্জন অনেক। এর মধ্যে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজ রয়েছে। কিন্তু সবকিছু এখনই মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে স্পর্শ করছে না। এ সব কাজের তথ্য এখনো মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এটি আমাদের কমিউনিকেশনের (যোগাযোগ) এক ধরনের দুর্বলতা বলতে পারেন। পৃথিবীর যে কোনো দেশেই বিপ্লব পরবর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ স্থিতিশীলতা ফেরানো। স্যারের (প্রধান উপদেষ্টা) ভাষায় দেশের ওপর দিয়ে বড় ধরনের একটি ‘ভূমিকম্প’ হয়ে গেছে। এ ‘ভূমিকম্প’ পরর্বর্তী সময়ে আমরা পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিয়েছি। ফলে আমরা বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং ধুমরানো-মোচরানো একটি সমাজ পেয়েছি। এ অবস্থায় প্রথম ছিল-বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। আমরা সেটি করতে পেরেছি। যে কারণে বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। সংবিধানসহ বড় পরিবর্তন ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের কথা বার্তা বলছে। কিন্তু স্থিতিশীল একটি পরিবেশ ফিরে এসেছে। অন্য দেশে দেখেছি, এ ধরনের একটি বিপ্লবের পর অনেক রক্তপাত হয়। স্থিতিশীলতা আসতে দুই/তিনটা সরকার লেগে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এক বছরে তা সম্ভব হয়েছে। এ স্থিতিশীলতার একটি অংশ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যেমন-মিটফোর্ডসহ দুই একটি হত্যাকাণ্ড দেখে অনেকে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কিন্তু গত সাড়ে ৫ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল। কিছু জায়গায় হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ এবং প্রতিশোধমূলক হামলা হয়নি, এমনটি আমি বলছি না। যেমন-মাজারে আক্রমণ হয়েছে। কিছু জায়গায় মব জাস্টিস (বিচার বর্হিভুত সংঘবদ্ধ হামলা) হয়েছে। কিন্তু পুরো এক বছরের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে দেখবেন, সমাজ ইন্ডিকেশন (সংকেত) দিচ্ছে যে, স্থিতিশীলতা এসেছে। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ফলে বিদেশি উদ্যোক্তারাও আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি চীনের বৃহৎ একটি কোম্পানি ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ শুরু করেছে। সেখানে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
যুগান্তর : গত এক বছরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
শফিকুল আলম : আমাদের মেয়াদে সবচেয়ে ভালো অর্জন হয়েছে অর্থনীতিতে। যখন আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, তখন সার কিনব, সেই ডলার ছিল না। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করবে, কিন্তু খুঁজতে হচ্ছে কোথায় ডলার পাওয়া যাবে। ১ ডলারের দাম ১৩০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেখান অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন ডলারের সংকট নেই। অর্থনীতিতে বড় অর্জন হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ডাবল ডিজিট ( দুই অঙ্ক বা ১০ শতাংশের ওপরে) থেকে সর্বশেষ সাড়ে ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটি বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আশা করছি, বছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিদেশি যে সব দায়-দেনা ছিল, সবগুলো ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছি। ভারতীয় ব্যবসায়ী আদানির ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এরমধ্যে একদিনে পরিশোধ করেছি ৪৩৬ মিলিয়ন ডলার। শেভরণের ২৩৭ মিলিয়ন ডলার একদিনে পরিশোধ হয়েছে। মুনাফার অর্থ নিজ দেশে নিতে না পারায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ওই সময়ে ব্যবসা বন্ধ করতে চেয়েছিল। মুনাফা আটকে ছিল অন্য বিদেশি কোম্পানি-মেটলাইফ, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো এবং গ্রামীণফোনসহ সবগুলো প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু আমরা সব পরিশোধ করেছি। বর্তমানে কোনো কোম্পানির পেমেন্ট আটকে নেই। সব পেমেন্ট সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ হচ্ছে। এরফলে অন্য উদ্যোক্তাদের কাছেও বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে। এতে নতুন করে তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
যুগান্তর : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি না?
শফিকুল আলম : আমার মনে হয় না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটা দুরূহ কাজ ছিল। এরফলে জনজীবনে স্বস্তি এসেছে। আর সরকারের কাজ হলো মানুষকে ভালো রাখা। আমরা সেই কাজই করেছি। শুল্ক ছাড় দেওয়ায় মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমেছে। শুধু রমজান মাস বিবেচনা করলে দেখবেন অনেক বছর পর রমজানে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। সার্বিক বিবেচনায় বলছি, মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে আমরা একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
যুগান্তর : দায়িত্ব নেওয়ার আগে সরকারের নিশ্চয়ই একটি লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যেমন-এ সময়ের মধ্যে আমরা এগুলো অর্জন করতে চাই। সে লক্ষ্যগুলো কী কী? সেক্ষেত্রে কতটুক অর্জন করতে পেরেছেন। না পারলে কেন?
শফিকুল আলম : সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে স্থিতিশীল ফেরানো, সংস্কার, গণ-হত্যায় জড়িতদের বিচার এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ। যদি আলাদাভাবে বলি, তাহলে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এরপর ছিল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ (পিসফুল অ্যাটমোসফেয়ার) ফেরানো। ইতোমধ্যে তা সম্ভব হয়েছে। সংস্কারের বিষয়ে আপনাকে আহ্বান করছি, প্রতিটি মন্ত্রণালয় ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেন। সেখানে কী কী সংস্কার হয়েছে সেগুলো দেখেন। এর আগে টাকার চুরির ধান্দায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হতো। আমরা এটি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এক্ষেত্রে আগের কয়েকটি প্রকল্প পূর্ণমূল্যায়ন করে ৪৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত বিচার। যারা জুলাই গণ-হত্যায় জড়িত তাদের সবার বিচারের আওতায় আসা উচিত। এটি সবার দাবি। এক্ষেত্রে ১৫টি মামলা বিচার শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। বাকি মামলাগুলো তদান্তাধীন। বিচারে গতি আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সম্ভব হলে দেশে আরও স্থিতিশীলতা আসবে। এরপর নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। কারণ, নির্বাচনই হলো গণতন্ত্রে উত্তরণের একমাত্র পথ। আর ফলে নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দফতর কাজ করছে। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। সেসব রিপোর্ট নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন এগিয়ে চলছে। ৪৭ হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৬ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন ৫০ লাখ ভোটার যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কেন্দ্রিক সব কাজই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করছি অবাধ সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য এবং উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।
যুগান্তর : সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় বিভক্তি আছে। এটি নির্বাচনের পথে বাধা হবে কিনা?
শফিকুল আলম : রাজনৈতিক দল থাকলে বিভক্তি থাকবে। পুরো বিশ্বে এ বিভক্তি আছে। বাংলাদেশেও বিএনপি, এনসিপি এবং জামায়াতের মধ্যে আদর্শিক (আইডোলজিক্যাল) দুরত্ব থাকবেই। কিন্তু এরা সবাই আমাদের অংশীজন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাজনৈতিক দলগুলো ধৈর্য ধরে দিনের পর দিন বিভিন্ন ইস্যুতে ভালোভাবে ডিবেট (যৌক্তিক বিতর্ক) করছে। এ কারণে দলগুলোকে স্যালুট দিতে হবে।
যুগান্তর : সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো যে সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, ওই সব বিষয়ের আইনিভিত্তি নিয়ে বড় দলগুলো মুখোমুখি।
শফিকুল আলম : রাজনৈতিক দলগুলো ডিবেটের মাধ্যমে অনেক বিষয় সমাধানে এসেছে। ফলে বাকি বিষয়গুলোর (অমীমাংসিত ইস্যু) একটি রাজনৈতিক সমাধান তাদের কাছে আছে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তাদের খুব ভালো কথাবার্তা হচ্ছে। ফলে আমরা আশাহত না। পৃথিবীর অন্য দেশে দেখেন, রাজনৈতিক সেটেলমেন্ট (নিস্পত্তি) করতে বছরের পর বছর লেগে যায়।
যুগান্তর : আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কিনা?
শফিকুল আলম : না। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। কেউ এসে বলেননি, তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে আনতে হবে। বরং স্যারের (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে যে সব বিশ্বনেতার কথা হয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা আপনার (ড. ইউনূস) সঙ্গে আছি। যে সব সংস্কার চলছে, যে সব বিষয় তারা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
যুগান্তর : নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং নির্বাচন বাতিল নিয়ে যে সব কথা আসছে, সে ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী :
শফিকুল আলম : ‘এটা আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, নির্বাচন স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) যখন বলছেন, তখনই হবে। একটা দিনও দেরি হবে না। আমরা সবাই এক একটা কাজে ছিলাম। সেখানে ফিরতে চাই। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার পুরোনো কাজে ফিরতে চান। আমি সাংবাদিকতায় ছিলাম। সেখানে ফিরতে চাই। সবাই তাদের কাজে ফিরতে চান। তারা নির্বাচনকে পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে নিয়েছেন। এ দায়িত্ব পালন করে চলে যাবেন। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচনগুলোর একটা হবে।
যুগান্তর : বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, এরপর মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি, এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে সম্ভব?
শফিকুল আলম : নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠ হয় জনগণের কারণে। জনগণ একটা ভালো নির্বাচন চাচ্ছে। আমার মনে হয়, আগের তিনটা নির্বাচন থেকে আমাদের প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনী শিক্ষা নিয়েছে। তারা বুঝেছে বাংলাদেশে দালালি করে কোনো লাভ হয় না। ওই যুগ শেষ। আপনি নিশ্চিত থাকেন, এবার খুব ভালো নির্বাচন হবে। জনগণ অংশ নিলে নির্বাচন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এ ছাড়া ৬০ হাজার সেনাবাহিনীর কথা বলা হয়েছিল। সেটা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা চলছে।
যুগান্তর : বলা হচ্ছে, দেশে ৪০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি আওয়ামী লীগের সমর্থক আছে। তাদের বাদ রেখে নির্বাচন হলে সেটিকে অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা?
শফিকুল আলম : কে বলেছে আওয়ামী লীগের ৪০ শতাংশ সমর্থক আছে। এত মানুষ তাদের পক্ষে থাকলে, প্রতিদিন তারা বিশাল বিশাল মিছিল করত। কিন্তু আপনি লক্ষ করবেন কয়েকটা লোক মিলে একটা ঝটিকা মিছিল করে চলে যায়। এত মানুষ খুন করার পরও কোনো সুস্থ মানুষ ওই দলকে সমর্থন করার কথা না। আপনি গ্রামে গিয়ে দেখেন, কয়টা লোক আওয়ামী লীগ করতেছে। আমার মনে হয় না ৫ শতাংশ মানুষও এখন আওয়ামী লীগ করে। কারণ এটি খুবই সিরিয়াস একটা বিষয়। আপনি একটা দল করতেন, কিন্তু যখন দেখছেন দলের নেতারা সবাই খুনি। তখন ওই দল আর সমর্থন করার কথা না।
যুগান্তর : দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চাদাঁবাজির অভিযোগ আসছে। সরকার কেন এ চাদাঁবাজি বন্ধ করতে পারছে না?
শফিকুল আলম : আপনি দেখছেন, কিছুদিন আগে আমরা হাইপ্রোফাইল কিছু চাঁদাবাজ ধরেছি। এ ব্যাপারে আপনারা যদি এভিডেন্স (প্রমাণ) দেন, এই-এই জায়গায় এরা চাঁদাবাজি করছে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এতটুকু বলতে পারি, আমরা কাজ করছি। তথ্য পেলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
যুগান্তর : রাজনৈতিক দলগুলো থেকে বলা হচ্ছে, সরকার এনসিপিকে বেশি সমর্থন দিচ্ছে?
শফিকুল আলম : আমরা কী এমন কাজ করেছি, যাতে মনে হয় সরকার এনসিপিকে বেশি সমর্থন দিচ্ছে। আবার এনসিপি বলছে, আমরা বিএনপিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আরেকটা বলছে, জামায়াতকে বেশি সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সব রাজনৈতিক দল আমাদের অংশীজন। এ পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি। আমাদের কার্যক্রম দেখে মূল্যায়ন করেন, আমরা কাউকে বেশি সমর্থন দিচ্ছি না।
যুগান্তর : গত এক বছরে সরকারের কার্যক্রম, দাতা, সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে মূল্যায়ন করছে?
শফিকুল আলম : খুবই ভালো মূল্যায়ন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আমাদের সঙ্গে আছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)সহ সবগুলো দাতাসংস্থা আমাদের পাশে আছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এ সরকারের সঙ্গে তারা সবসময় আছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কথা হয়েছে। অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সবাই বলেছেন, আমরা এ সরকারের সঙ্গে আছি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আগের পররাষ্ট্রনীতি ছিল এক কেন্দ্রিক এবং একটি দেশের কাছে বন্ধক দেওয়া। সে আপনাকে অনেক কিছু ডিক্টেট (নির্দেশ) করত। সেখানে আমরা বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি করেছি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ সবাই আমাদের বন্ধু। সবার সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক রাখছি। এ সম্পর্ক মর্যাদা এবং ন্যায্যতারভিত্তিতে।
যুগান্তর : কেউ কেউ বলছেন, পরবর্তীতে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বৈধতা দেবে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে?
শফিকুল আলম : আমরা জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে এসেছি। যে সব কাজ করছি, তা জনগণের উপকারার্থে। আমাদের সঙ্গে জনগণের সমর্থন পুরোপুরি আছে। রাজনৈতিক দলগুলোও আমাদের সঙ্গে আছে।

