তথ্য যাচাইয়ে কাজে লাগতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভুয়া খবর বা ভুল তথ্য সম্মিলিত খবর আসলে কী এবং এগুলো আমাদের সমাজে কী ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; এজন্য যে, ভুয়া খবর এখন এ সমাজে একটি অন্যতম মারণাস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সর্বত্রই এ বিষয়ের ওপর আলোচনা হচ্ছে। ভুয়া খবরের বিস্তৃতি এতটাই ডালপালাযুক্ত, এটাকে সাধারণ মানুষের বুদ্ধি বা মেধা ক্ষমতা দিয়ে শনাক্ত এবং সমূলে রোধ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ভুয়া খবরের উৎসগুলোর মধ্যেও এতটাই শক্তিশালী বন্ধন থাকে, যা সাধারণভাবে বোঝা বা উদ্ঘাটন প্রায় অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে ভুয়া খবরের সূত্র ও তার বিস্তৃতি বন্ধ করতে এবং এর উৎসগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারি, এটি জানা যতটা জরুরি; এর প্রয়োগ সম্পর্কে জানা, তার থেকে বেশি জরুরি। আজকের এ আলোচনা এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস রাখছি।
সবার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন ভুয়া খবরটা আসলে কী। ভুয়া খবর এমন একটি খবর বা সংবাদ, যা কিছু অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্যের উৎসটাও অসত্য বা অর্ধসত্য বা অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে। ভুয়া খবর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা সম্মিলিত খবর সাধারণত উপস্থাপিত হয় মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। যেহেতু সংবাদমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ হিসাবে দেখা হয়, সমাজের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ মনে করে, সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সব তথ্যই সত্য। এক্ষেত্রে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ অথবা সত্যতা যাচাইকে প্রাধান্য দিই না। কিন্তু ভুয়া খবর এতটাই বিপজ্জনক, কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ ও সভ্যতাকে এক মুহূর্তের মধ্যে ওলটপালট করে দিতে পারে; যার ফলে ভুয়া খবরের প্রভাবে জনমনে অস্বস্তি বা বিভ্রান্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযাচিত প্রভাব পড়ে থাকে। এ যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যখন একমাত্র অন্যতম প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, তখন এর মাধ্যমে ভুয়া খবরের বিস্তৃতি রোধে আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
আসুন, আধুনিক সংবাদমাধ্যমের উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে জেনে আসি। ১৭ শতকে সংবাদপত্রগুলো খবর এজেন্ট এবং ব্যবসায়ীদের জন্য তথ্য বিস্তারের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। ইলেকট্রনিক সায়েন্স আবিষ্কারের পর রেডিও-টেলিভিশনের পাশাপাশি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপের অনেক শহর, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও নিয়মিতভাবে সংবাদপত্র প্রকাশ করত। সাধারণত পত্রিকাগুলো শুধু দৈনন্দিন খবরই প্রকাশ করত তা নয়, বরং তখন থেকেই সংবাদমাধ্যমগুলো নিয়মিত রাজনীতি, ব্যবসা, খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর খবর প্রকাশ করে আসছে। এর সঙ্গে আস্তে আস্তে আরও যোগ হয় মতামত কলাম, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, স্থানীয় পরিষেবার পর্যালোচনা, ক্রসওয়ার্ড, সম্পাদকীয়, কার্টুন, কমিক স্ট্রিপ এবং পরামর্শ কলামের মতো আরও নানা নতুন বিষয়, যেগুলো কিনা সংবাদমাধ্যমকে প্রতিদিনের জন্য একটি জটিল সমীকরণে ধাবিত করে।
খবর পরিবেশনের পাশাপাশি বেশির ভাগ সংবাদপত্রই বিজ্ঞাপন প্রচার, ব্যবসা, সাবস্ক্রিপশন বিক্রি, নিউজস্ট্যান্ড বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন রাজস্বের উপার্জন দিয়ে তাদের খরচ বহন করে থাকে। সংবাদপত্রগুলো ঐতিহ্যগতভাবে মুদ্রিত (সাধারণত সহজলভ্য কাগজে প্রিন্ট করা যায়) ও প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমাদের এ আধুনিক যুগে বেশির ভাগ সংবাদপত্র অনলাইন সংবাদপত্র হিসাবে ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সংবাদমাধ্যমই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নিজস্ব পেজগুলোয় দৈনিক খবর প্রচার করে থাকে। বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়ার কল্যাণে সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই অনলাইন ভার্সন অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজগুলোয় টেকনোলজি ব্যবহার করে প্রকাশ করা খুব সহজ, তাই বেশির ভাগ সময়ই এটি সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশ্রণের সুযোগ করে দেয়।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, এর মান এবং দেশীয় বহুল প্রচলিত কিছু সংবাদপত্রকে সরকারিভাবে আর্কাইভ রেকর্ডের অংশ হিসাবে দেখা গেলেও, ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সংবাদপত্র এখন পরিপূর্ণ ডিজিটাল হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এ সংবাদমাধ্যমগুলোর অনলাইন সংস্করণকে এখন প্রধান মাধ্যম হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা বেশির ভাগ পাঠক ব্যবহার করেন এবং তাদের মুদ্রিত সংস্করণটি অনেকাংশে গৌণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ বর্তমানে খুব অল্পসংখ্যক গ্রাহকই মুদ্রিত পত্রিকা ব্যবহার করেন। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সংবাদপত্রের পতনকে প্রথমে মূলত মুদ্রণ-বনাম-ডিজিটাল প্রতিযোগিতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। যেখানে দেখা গেছে, ডিজিটাল মাধ্যম ক্রমশই মুদ্রণকে পেছনে ফেলেছে। যেটা কিনা আজকের এ দুনিয়ায় প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেই সঙ্গে কিছু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের আবির্ভাব ঘটিয়েছে।
আজকের এ যুগে ডিজিটাল টেকনোলজি এবং হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস ব্যবহার করে যে কেউ, যে কোনো কিছু খবর হিসাবে প্রকাশ করতে পারে, যে কেউ তা সম্প্রসারিত করতে পারে এবং যে কেউ তা সম্পাদনা করতে পারে। সম্পাদকদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা এখন পরোক্ষ ভূমিকায় পর্যবসিত হচ্ছে। আগে সম্পাদকরা খবর প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই করে অসত্য খবরগুলোকে আলাদা করে ফেলত এবং শুধু সঠিক খবরই প্রকাশ করত; কিন্তু এখন সত্য-অসত্য সবই খবরের অংশে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, যা কিনা বিভ্রান্তিকর তথ্য তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জার্মানির এক বিখ্যাত পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান Statista-এর ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মিথ্যা সংবাদ প্রচারিত হয় যে জনপ্রিয় ৫টি বিষয়ের ওপর, সেগুলো হলো-রাজনীতি, কোভিড-১৯, অর্থনীতি, দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ও ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব বিষয়ভিত্তিক খবর কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দ্বারাই বিস্তৃত হয়ে থাকে। Statista-এর আরেকটি সমসাময়িক রিপোর্ট অনুযায়ী, বহুল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয় টিকটকের মাধ্যমে, এর পরেই রয়েছে এক্স (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কড্ইন ও হোয়াটসঅ্যাপ।
যা হোক, এখন আসুন আমরা আলোচনায় ফিরি, কী কী উপায়ে মিথ্যা খবর প্রকাশে বাধা প্রদান করা সম্ভব। Statista-এর মতে, জটিল খবরের সহজ ও ভালো ব্যাখ্যা প্রদান, সমাধান বা গঠনমূলক সাংবাদিকতা, অনুপ্রেরণামূলক ও ইতিবাচক মানবিক খবর প্রকাশ, পেশাদার সাংবাদিক দল দ্বারা খবর সংগ্রহ এবং সম্পাদনা। সেই সঙ্গে সহজ ভাষা বা সুলভ বিন্যাসের মাধ্যমে খবর প্রকাশ এবং সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের মাধ্যমেই মিথ্যা খবরের প্রচার কমানো সম্ভব।
এখন একটি কথা না বললেই নয়, বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া খবর প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপ্তি অনেক বেশি; কারণ এর সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক পক্ষপাত জড়িত। সেই সঙ্গে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ টেক্সট, মিক্সড ডেটা, ভিডিও, ছবির মধ্য থেকে সঠিক ও সত্য ডেটা খুঁজে বের করা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এমন একটা টেকনোলজি, যা কিনা অসংখ্য মানুষের মস্তিষ্কের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ধারণ করতে পারে। সেই বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে, এই বিপুল পরিমাণ ডাটা, যা কিনা সংবাদমাধ্যমগুলো এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা উৎপন্ন, সেগুলো সঠিকভাবে প্রি-প্রসেস, আইডেন্টিফিকেশন ও ক্লাসিফিকেশন করে বলতে পারে, কোনটি সত্য এবং কোনটি ভুয়া বা অসত্য উৎস থেকে তৈরি। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টেকনিকগুলো সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১. বিষয়বস্তুভিত্তিক পদ্ধতি (Content-based model): এ পদ্ধতিতে সাধারণত ভাষাগত বিশ্লেষণ; যেমন: অনুভূতি, ব্যাকরণ, শব্দের ধ্বনি বিশ্লেষণ অথবা গভীর শিক্ষার মডেল (Deep Learning Model), যেগুলো কিনা CNN, RNN অথবা ট্রান্সফরমারের মতো এলগোরিদম দিয়ে পরিচালিত। ২. প্রতিক্রিয়াভিত্তিক পদ্ধতি (Feedback-based Model) : যেখানে খবর সম্পর্কে পাঠকের প্রতিক্রিয়া; যেমন: কমেন্ট, শেয়ার অথবা মন্তব্যের সঙ্গে খবরের সম্পৃক্ততার ধরন এবং প্রচার কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়। ৩. হাইব্রিড পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে শক্তিশালী শনাক্তকরণের জন্য বিষয়বস্তু (Content) ও খবরের বিষয়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া (feedback) একত্রিত করা হয়।
উল্লিখিত তিনটি টেকনিকের মাধ্যমে ভুয়া খবরের উৎস শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধকরণের জন্য নানাবিধ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগোরিদম ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে নেইভ বায়াস, ডিসিশন ট্রি, রেন্ডম ফরেস্টের মতো মেশিন লার্নিং অ্যালগোরিদম। এ অ্যালগোরিদমগুলো প্রথমে বিপুল পরিমাণ সংবাদ বাক্যমালাকে ছোট ছোট বাক্যে ভাগ করা শুরু করে, পাশাপাশি শব্দের মধ্যে সম্পর্কগুলো নির্ণয় করতে পারে। সেই শব্দভিত্তিক সম্পর্কগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভুয়া খবরের উৎস, সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এর প্রভাব সমাজে কতটুকু পড়তে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি কী রকম, তা নির্ণয় করা সম্ভব। মেশিন লার্নিং অ্যালগোরিদমগুলোর পাশাপাশি ডিপ লার্নিং অ্যালগোরিদমগুলো, যেমন: কনভোলিউশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক ও রিকারেন্ট নিউরাল নেটওয়ার্ক আরও গভীরভাবে বিভিন্ন ধরনের খবরের প্যাটার্ন, সময়কাল, বিষয়বস্তু, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং খবরের প্রকাশক ও পাঠকদের কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে ভুয়া খবরের উৎপত্তি, বিস্তার এবং প্রতিকারের উপায় খুঁজে বের করতে পারে। এরই সঙ্গে ছবি, অডিও এবং ভিডিওর মতো ডাটাকে বিশ্লেষণ করে সেটির সত্যতা নির্ণয় করতে পারে। সবশেষে, হাইব্রিড টেকনিকে বেশকিছু বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়; যেমন সামাজিক নেটওয়ার্কভিত্তিক খবরগুলো বিশ্লেষণ, খবরের ভাষাগত বিশ্লেষণ, নেটওয়ার্কভিত্তিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং বিষয়বস্তুভিত্তিক বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ। বিভিন্ন ধরনের ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং অ্যালগোরিদমের সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতারণামূলক সংবাদ ও নিবন্ধ শনাক্ত করা যায়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুয়া খবর শনাক্ত করার জন্য বেশকিছু উন্নতমানের সফটওয়্যার সারা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংবাদ পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে থাকে। সেগুলো হলো- Facticity.AI, grover, Sensity AI, RevEye, Factiverse, Mcafee's Deepfake Detector, Pinpoint, Fact Check Explorer এবং google gemini। একটি কথা বলে রাখা দরকার, এ টুলসগুলো ব্যবহারের জন্য সংবাদমাধ্যম কর্মীদের বিশেষ ট্রেনিং অপরিহার্য। এ ট্রেনিংগুলো তিন থেকে ছয় মাসব্যাপী কোর্স কারিকুলাম সম্পর্কিত হতে পারে। আজকের আলোচনায় আমরা শুধু তিনটি টুলসের ওপর আলোকপাত করছি।
Facticity.AI, এ টুলটি মূলত একটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্টার্টআপ প্রজেক্টের ফসল। Facticity.AI হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ফ্যাক্ট-চেকিং টুল, যা ভুল তথ্য শনাক্ত করার জন্য খবরের ভাষা এবং ভিডিও কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে থাকে। এ টুলের বেটা ভার্সনটি চালু হয় ২০২৪ সালের জুনে। এটি ৯২ শতাংশ নির্ভুলতার হার নির্ণয় করে, যা Bing CoPilot ও Originality.AI-এর মতো প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে গেছে। এ টুলটি রিয়েল-টাইম পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। যেমন, একটি কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, আমেরিকায় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি বিতর্কের সময় প্রার্থীর দাবি করা প্রায় ২৫০টি দাবির সত্যতা এ টুলটি রিয়েল টাইমে যাচাই করতে পেরেছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা তৈরি মৎড়াবৎ হলো আরেকটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল, যা জাল খবর তৈরি ও শনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল বিষয়বস্তুর শৈলীগত সূক্ষ্মতা বোঝার মাধ্যমে, উচ্চ নির্ভুলতার সঙ্গে কৃত্রিম সংবাদ নিবন্ধগুলো শনাক্ত করতে পারে। Sensity AI, যেটা কিনা আরেকটি জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত টুল, যা সংবাদ পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে থাকে। ডিপফেক শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ, সেন্সিটি এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ছবি এবং ভিডিও শনাক্তকরণের ওপর জোর দেয়। এ টুলটি ভিজ্যুয়াল ভুল তথ্যের উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়, যা কিনা সংবাদ পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং এর প্রভাব নির্ণয়কারী সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের আলোচনায় এখানেই সমাপ্তি টানছি। পরবর্তী লেখার বিষয় হতে পারে অন্য কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমতার প্রয়োগের ওপরে, যেটা কিনা আমাদের জাতিকে নতুন প্রযুক্তিগত শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে।
ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর অব বিজনেস এনালিটিক্স; উপপরিচালক, সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড অ্যান্ড রেসপন্সিবল এআই, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
