মাগফিরাতের দশ দিন
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মোক্ষম সময় রমজান

মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আমরা জেনে বা না জেনে কত গুনাহে জড়িয়ে পড়ি। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাই। সেসব গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার অনন্য সময় রমজানের মধ্যবর্তী মাগফিরাতের দশক। রমজান মাসে মুমিন-মুসলমান নিজেকে আল্লাহর দরবারে সঁপে দেয়। প্রথম ১০ দিন সব ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত কামনায় অতিবাহিত করে। তারা আল্লাহর দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়। তারপর দ্বিতীয় দশক শুরু করে অতীত গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের আবেদন নিয়ে। একপর্যায়ে গুনাহ থেকেও মুক্তি হয়। আল্লাহ রহমতপ্রাপ্তদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারপর আসে নাজাত বা মুক্তির দশক। বান্দা যখন রহমতের চাদরে মুড়িয়ে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন তিনি বান্দাকে নাজাত দেন। জাহান্নামের শাস্তির বদলে তার জন্য নির্ধারণ করেন চিরসুখের জান্নাত।
মানুষ কৃত অপরাধের দিকে তাকিয়ে হতাশায় ভোগে। ভাবে আল্লাহ কি তাকে মাফ করবেন। সে কি আদৌ এ রমজানে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পাবে। এটা মূলত শয়তানের কুমন্ত্রণা। আল্লাহ বলেন, ‘লা তাকনাতু মিররহমাতিল্লাহ’ তোমরা আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আমাদের পাপমোচন করে জান্নাতবাসী করার জন্যই তো আল্লাহ রমজান দিয়েছেন। দিয়েছেন ক্ষমা বা মাগফিরাতের দশক। তাই তো আল্লাহ বলেছেন, অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান ফেরেশতাদের মাধ্যমে দেবেন। কিন্তু রোজার প্রতিদান তিনি নিজ কুদরতি মাধ্যমে বান্দার হাতে তুলে দেবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় একদিন রোজা রাখবে আল্লাহতায়ালা তাকে একটি কাক ওড়ার বয়স থেকে নিয়ে বড় হয়ে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত উড়তে থাকলে যতটুকু দূরত্বে পৌঁছবে ঠিক ততটুকু জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন। (মেশকাত, মুসনাদে আহমদ)।
রমজান মাসে দুটি আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো দিনেরবেলা রোজা রাখা এবং রাতে তারাবিহের নামাজে দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা অথবা তেলাওয়াত শোনা। রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজা ও কুরআন আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার রব, আমি তাকে দিনেরবেলায় পানাহার ও যৌন চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। অর্থাৎ রোজা রাখতে গিয়ে দিনেরবেলা সে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থেকেছে। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতেরবেলা ঘুমাতে দেইনি অর্থাৎ সে ইফতারির পর শরীরে ক্লান্তি থাকা সত্ত্বেও না ঘুমিয়ে তারাবিহের নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করেছে বা কুরআন শুনেছে এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করেছে। অতএব আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তাদের উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম)।
রমজানের কল্যাণ ও বরকত পেতে হলে আউলিয়ায়ে কেরামদের মতে ৬টি কাজ করা আবশ্যক-এক. জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। মিথ্যা, পরনিন্দা, গিবত-শেকায়েত, চোঙ্গলখোরি, অনর্থক কথাবার্তা ইত্যাদি থেকে জবানকে হেফাজত করতে হবে। দুই. দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে। চোখ দিয়ে হারাম ও নাজায়েজ কোনো কিছুর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। তিন. শ্রবণশক্তির হেফাজত করতে হবে। কান দিয়ে অন্যায়, অসত্য কোনো কিছু শোনা যাবে না। চার. শরীরে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও গুনাহ থেকে হেফাজত করতে হবে। পাঁচ. হালাল খাবার দ্বারা ইফতার করতে হবে। ছয়. ইফতারের সময় আল্লাহর প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে। সর্বদা এ ছয়টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখলে রোজা ও রমজানের ফজিলত ও বরকত লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিকভাবে রমজানের অবশিষ্ট রোজাগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!!!
লেখক : প্রিন্সিপাল, জামিয়া আরাবিয়া নতুনবাগ, রামপুরা, ঢাকা