বিভেদের রাজনীতি ছেড়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক জামায়াত নেতার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিদায় এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ এবং অবক্ষয়মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর উত্তরার ৭নং সেক্টরের শহিদ মুগ্ধ মঞ্চে উত্তরা পশ্চিম থানা জামায়াত আয়োজিত এক সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
থানা আমির মাজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ফিরোজ আলমের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জামাল উদ্দিন, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ।
বক্তব্য দেন- ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মাহবুবুল আলম, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, সাবেক ঢাকা মহানগরী উত্তর শিবিরের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আ. রহমান প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য একেবারে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু এসব ষড়যন্ত্রে সরকারকে ভয় পেলে চলবে না বরং পতিত স্বৈরাচারের সব দেশ ও জাতিস্বত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে ঐতিহাসিক এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। তাদেরকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনাকে দিতে হবে অগ্রাধিকার। আর যারা আগামীতে ক্ষমতায় যেতে চান তাদেরকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এমন কথা বলা যাবে না, যাতে তাদেরকে জনগণ ফ্যাসিবাদের দোসর মনে না করে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, অনেক ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে বিদায় করেছে। জনগণ দেশে আর ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি দেখতে চায় না। তাই ফ্যাসিবাদের উত্থান রুখতেই জনগণ আগামী নির্বাচনে দেখে-শুনে ভোট প্রদান করবে। তারা অবশ্যই প্রার্থীদের অতীত পর্যালোচনা করে দেখবে। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের সম্পদের স্থিতি কতখানি তা তারা বিবেচনায় নিবে। আগামীতে ভোট দেওয়ার মানদণ্ড হবে প্রার্থীর সততা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও তাকওয়া। যারা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ইমান-আকিদাহ, বোধ-বিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি এবং তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন জনগণ আগামীতে তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেবে।
তিনি আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব প্রদান করতে রাজনীতিবিদদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
মহানগরী আমির আরও বলেন, জামায়াত একটি গণমুখী ও আদর্শবাদী রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যেতে চাই না বরং আগামী দিনে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্যতর নেতৃত্বের হাতেই ক্ষমতা অর্পণ করতে চাই। আমরা এমন তাওকাবান নেতৃত্ব তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি, যারা ঘুস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ কোনো প্রকার অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িত হবেন না। আমরা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিশু শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব শ্রেণিতে পবিত্র কুরআনের তরজমা ও তিলাওয়াত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি করতে পারলে আগামী দিনের নেতৃত্ব আর কোনোভাবে অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে জড়িত হবে না।
তিনি সেই ইনসাফপূর্ণ ও অবক্ষয়মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।