প্রথম স্বামীর মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্বামীর জামিন মিলেছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৪৬ পিএম
শাহ আলম ও ফাতেমা বেগম।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রথম স্বামীর দায়ের করা অপহরণ মামলায় হাইকোর্ট থেকে দ্বিতীয় স্বামীর জামিন পেয়েছেন বরগুনার পাথরঘাটার ফাতেমা বেগম নামের এক গৃহবধূ। ফাতেমার দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলমকে গত বছর বরগুনার একটি আদালত এই মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলমকে জামিন করাতে হাইকোর্টের দারস্ত হন ফাতেমা। বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আদেশ দেন। আদালতে জামিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তার সঙ্গে ছিলেন মো. আরিফুর রহমান।
হাইকোর্টে শাহ আলমের জামিন হওয়ায় এখন তার মুক্তিতে আর বাধা নেই বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে একই উপজেলার মো. জাকির হোসেনকে বিয়ে করেন ফাতেমা। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তানও জন্ম হয়। কিন্তু জাকিরের নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে তালাক দেন। পরে শাহ আলম নামের একজনকে বিয়ে করেন ফাতেমা। কিন্তু জাকির বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ফাতেমার দ্বিতীয় স্বামী অর্থাৎ বর্তমান স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে ফাতেমাকে অপহরণ করার মামলা করেন। জাকির ও শাহ আলম সম্পর্কে দুজন শ্যালক-দুলাভাই।
সেই মামলায় শাহ আলম গ্রেফতার হন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এরপর পাঁচবার কারাগারে বন্দি হন শাহ আলম। এরই মধ্যে ফাতেমা ও শাহ আলম দম্পতির দুটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান আসামি শাহ আলমকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়া এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বরগুনায় ট্রাইব্যুনালের এপিপি আশ্রাফুল আলম সেদিন বলেছিলেন, শ্যালকের বউ (ফাতেমা) অপহরণ মামলায় দুলাভাই শাহ আলমকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
মামলা বাদী ফাতেমার প্রথম স্বামী জাকিরের অভিযোগ, অপহৃত ফাতেমা বাধ্য হয়ে তাকে তালাক দিয়ে শাহ আলমকে বিয়ে করেছেন।
কিন্তু শাহ আলম বলেন, ফাতেমা স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে গেছেন এবং আমাকে বিয়ে করেছেন। আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। আমাদের দুটি সন্তানও আছে। অন্যায়ভাবে আমাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফাতেমা গণমাধ্যমকে বলছেন, আমি অপহরণ হয়নি। সে (শাহ আলম) আমাকে অপহরণ করেনি। আমার প্রথম স্বামী মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি নিজের ইচ্ছায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। আমার দ্বিতীয় বিয়ের পরে সে (প্রথম স্বামী জাকির) অপহরণ মামলা করেছে।
তবে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রায়ের বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ফাতেমা ২২ ধারায় জবাবন্দিতে অপহরণ হননি এবং প্রথম স্বামীকে (জাকির) ডিভোর্স দেওয়া মর্মে যে জবানবন্দি দিয়েছেন- তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মনে হচ্ছে, ডিভোর্স না দিয়েই তিনি শাহ আলমের কাছে চলে গেছেন। আইনের চোখে এটা অপরাধ মনে হওয়ায় আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
শাহ আলম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। স্বামীকে কারামুক্ত করতে দুই সন্তানকে নিয়ে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন ফাতেমা।
শাহ আলমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলেন, বিচারকের নিজস্ব কোনো চোখ থাকে না। তার চোখ হলো এভিডেন্স (তথ্য-প্রমাণ)। এই এভিডেন্স যিনি ভিকটিম তিনি আদালতে বলেছেন যে তিনি অপহরণ হননি। তারপরেও কেন তাকে (শাহ আলম) সাজা দিতে হবে। তাকে কেন পাঁচবার কারাগারে নিতে হবে। কেন ২০ বছর কারাদণ্ড দিতে হবে- এ প্রশ্ন তুলেন হাইকোর্টের এই আইনজীবী।
