|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঈদ আনন্দের রেশ কাটিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। লম্বা ছুটি শেষে আবারও সেই পুরোনো জীবনযাত্রায় ফেরা। রেখে যাওয়া অনেক কিছু আগের মতো ফিরে পেলেও ত্বক পাওয়া যাচ্ছে না ঠিক আগের মতো। র্যাশ, মলিনতা, রুক্ষতা, ব্রণের সমস্যা, লালচে দানা ঠিক ঈদের পরই যেন নতুনভাবে উঁকি দিচ্ছে।
একদিকে গরমের আগমন আর অন্যদিকে ঈদজুড়ে ঘোরাঘুরি সব মিলিয়ে ত্বকজুড়ে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। শুধু মুখ কিংবা হাতের ত্বকেই নয়, চুলের ক্ষেত্রেও বেড়েছে রুক্ষতা, শুষ্কতা, চুল পড়া, খুশকির সমস্যা থেকে শুরু করে চুলের আগা ফেটে যাওয়া। কাজেই কীভাবে ব্যস্ত সময়ে খুব অল্প উপকরণ আর ঘরোয়া টুকিটাকি জিনিস আপনাকে দিতে পারে এর সঠিক সমাধান। তাই জানিয়েছেন আকাঙ্খ্যাস গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ।
ঈদের পরই মূলত ত্বক আর চুল নিয়ে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। চুলের ক্ষেত্রে ভালো তেলের বিকল্প নেই। চুল মজবুত, সুস্থ আর উজ্জ্বল রাখতে ভালো তেল চাই-ই চাই। এ ক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে তেল বানিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। এর জন্য ১০০ গ্রাম তিলের তেলের সঙ্গে ৫০ গ্রাম ক্যাস্টার ওয়েল আর ১০০ গ্রাম নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ মেথি, কালিজিরা, পেঁয়াজ, রসুন থেঁতো করে নিয়ে ড্রাই রোস্ট অথবা একটু ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তেল আলাদা করে নিলেই খুব সহজে ঘরে বসে একবারেই হাতের কাছের উপকরণ দিয়ে চুলের যত্নে একটা তেল আপনি বানিয়ে নিতে পারছেন। যাদের হাতে সময় অনেক কম, এত সময় নিয়ে ঘরোয়াভাবে তেল বানিয়ে নিতে পারবেন না, তারা কয়েক ধরনের তেল যেমন নারিকেল তেল, সঙ্গে ক্যাস্টার ওয়েল সমপরিমাণ মিশিয়ে হালকা গরম করেও চুলে সপ্তাহে দুবার অ্যাপ্লাই করতে পারেন। এ তেল সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন চুলের গোড়া থেকে আগা অবধি সুন্দর করে অ্যাপ্লাই করে চাইলে পুরো রাতই রেখে দিতে পারেন। অনেকেই আছেন যারা মাথায় তেল দিলেই ঠান্ডা লেগে যায়, তারা গোসলের এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে চুলে অ্যাপ্লাই করে শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। তবে শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে তা যাতে প্যারাবেন ও সালফেটমুক্ত হয়। যারা তেল ব্যবহার করতে পারেন না তারা সিরাম অ্যাপ্লাই করতে পারেন চুলে। মুখের ত্বকের জন্য যেমন সানক্রিম ব্যবহার করি আমরা তেমনি চুলের ক্ষেত্রে সিরাম। এর বাইরে সপ্তাহে একটা হেয়ার স্পা অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে। এর জন্য একটু টকদই, একটা ডিম, একটু তেল সঙ্গে বেসন ভালো করে মিশিয়ে পুরো চুলে অ্যাপ্লাই করতে হবে। দশ থেকে পনেরো মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিলেই একেবারে ঘরে বসেই কিন্তু আপনি চুলের স্পা করে নিতে পারছেন। তবে সম্ভব হলে আর হাতে সময় থাকলে পার্লারে এসে একটা প্রপার ট্রিটমেন্ট নিয়ে এরপর ঘরোয়া টিপসগুলো অ্যাপ্লাই করলে লম্বা সময় পর্যন্ত চুলের ভিটামিন, উজ্জ্বলতা ধরে রাখা যায়।
ত্বকের যত্নে হাইড্রা ফেসিয়াল একটু করিয়ে নিতে পারেন এ সময়। যাদের ত্বকে কালচে দাগ, ত্বকে ভাঁজ পড়ে যাওয়া, জায়গায় জায়গায় র্যাশের মতো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এ ফেসিয়ালের মাধ্যমে ত্বকের ওপরের লেয়ার সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এর পরের ধাপে ঘরোয়াভাবে যত্ন নিতে শুরু করলে ত্বক অনেকটা সময়জুড়ে ভালো আর সুস্থ থাকে। তবে যাই ব্যবহার করছেন, হোক তা ময়েশ্চারাইজার কিংবা সানক্রিম তা যাতে ত্বকের ধরন বুঝে হয়-সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সবার আগে। অনেকেই ত্বকের ধরন না বুঝেই সানক্রিম ব্যবহার করেন, এতে গরম লাগবে, ত্বকে অনেক ভারী কোনো প্রলেপ দেওয়া হয়েছে বলে মনে হবে। যদি সঠিক ত্বকের ধরন বুঝে অ্যাপ্লাই করা যায় তাহলে সানক্রিম ব্যবহার করেছেন কিনা বুঝাই যায় না।
এ ছাড়া ফেসওয়াশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ত্বক রুক্ষ না তৈলাক্ত নাকি মাঝামাঝি এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। এ ছাড়া ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। একটু অ্যালোভেরা সঙ্গে একটা ই-ক্যাপ, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন দিয়ে মুখে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। গোসলের ঠিক আগে আগেই এ ম্যাসাজটা করে নিতে পারছেন। যাদের ত্বকে নারিকেল তেল মানিয়ে যায় তারা নারিকেল তেলের সঙ্গে অল্প অলিভওয়েল, ই-ক্যাপ মিশিয়ে পাঁচ মিনিট মুখে রেখে স্ক্যাব (বেসন আর চালের গুঁড়ার মিশ্রণ) করে নিলেই লোমকূপ থেকে ময়লা দূর হবে সহজেই।
এ স্ক্যাবের মিশ্রণ, চালের গুঁড়া, বেসনের সঙ্গে অল্প গোলাপজল মিশিয়ে নিলেও আরও ভালো ফল পাওয়া যায়, বিশেষ করে যাদের ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস-এর সমস্যা আছে। আর গোসলের পর ময়েশ্চারের মাত্রা সঠিক রাখতে স্ক্যাব কিংবা ফেসওয়াশ যাই করা হোক না কেন এরপর পরই টোনিং করে নিতে হবে। বাজারে অনেক ভালো মানের টোনার পাওয়া যায়, চাইলে ঘরোয়াভাবে রাইস ওয়াটার আর গোলাপজল মিশিয়েও ফ্রিজে রেখে এ টোনারটি বেশ কয়েকদিন ব্যবহার করা যাবে।
