Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কীভাবে এলো জব্বারের বলীখেলা

Icon

মোফাজ্জল হোসেন

প্রকাশ: ১০ মে ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কীভাবে এলো জব্বারের বলীখেলা

চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘির পাড়ে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে জব্বারের বলীখেলা নামে কুস্তি প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রতিবছরই বাংলা নববর্ষের সূচনায় ইতিহাস প্রসিদ্ধ লালদীঘি মাঠ ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বৈশাখী মেলা বসে।

বৈশাখের এই বিশেষ দিনটিতে মাঠের অভ্যন্তরে চট্টগ্রামের সেরা কুস্তিগীরদের লড়াই হয়ে থাকে। কুস্তিগীররা চট্টগ্রামবাসীর কাছে বলী হিসেবে পরিচিত। তাই লালদীঘির কুস্তি প্রতিযোগিতা বলী খেলা নামে খ্যাত।

জব্বারের বলীখেলার আগে থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে বলীখেলার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। এ খেলার ছিল একটা দুর্বার আকর্ষণ, বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে। বলীখেলাকে পৌরষের প্রতীক মনে করত তারা। কোনো গ্রামে বলীখেলা হওয়ার আগে থেকেই আশপাশের হাটবাজারে ঢোল বাজিয়ে প্রচার করা হতো। সর্বশ্রেষ্ঠ বলীকে সোনার মেডেল ও অন্যান্য বলীকে রৌপ্য মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হতো। খেলার দিন নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে খেলা হবে, সকাল থেকে ঢোল বাজিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হতো। বিকালের দিকে দর্শক ও বলীর দল ঢোল-বাদ্যসহ পৌঁছে যেত বলীখেলার মাঠে।

চট্টগ্রামকে বলীর দেশ বললেও বেশি বলা হয় না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী ১৯টি গ্রামে মল্ল উপাধিধারী মানুষের বসবাস ছিল। মল্ল পুরুষরা ছিল অত্যন্ত দৈহিক শক্তির অধিকারী, সুঠাম দেহী ও সাহসী। তাদের বংশানুক্রমিক পেশা ছিল শারীরিক শক্তি প্রদর্শন করা। এই মল্লবীরেরা ছিল বলীখেলার প্রধান আকর্ষণ এবং মূল প্রেরণা। প্রখ্যাত গবেষক, ইতিহাসবিদ আবদুল হক চৌধুরী ২২টি মল্ল পরিবারকে ইতিহাস প্রসিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন।

মল্লরা পুরুষানুক্রমিক পেশা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বলীখেলার ঐতিহ্যও ক্রমে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সেকালের বলীরা ছিলেন তাদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের শক্তি, সাহস ও পৌরষের প্রতীক। তখন এক এলাকার মানুষের সঙ্গে আরেক এলাকার মানুষের নানা কারণে মারামারি লেগে থাকত। তা থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা পর্যন্ত হয়ে যেত।

চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি প্রাচীন মহল্লা বকশীর হাট। এখানকার একটি ছোট গলির নাম বদরপাতি। এই বদরপাতিরই একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সদাগর ১৯০৯ সালে লালদীঘির মাঠে বলীখেলা প্রবর্তন করেন। গোলাম রসুল সদাগরের পুত্র আবদুল জব্বার সদাগর ছিলেন কংগ্রেসী ও স্বদেশি আন্দোলনের সংগঠক।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তরুণদের শরীর গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়। এরকম রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে আবদুল জব্বার সদাগর তরুণ-যুবাদের শরীর গঠনের জন্য একটি বলীখেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। তার ইচ্ছা ছিল যুবকরা সাহসী হয়ে উঠুক, শক্তি সঞ্চয় করুক এবং যেদিন দেশের জন্য ডাক আসবে সেদিন যেন তারা সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে যাতে পিছিয়ে না পড়ে। এই হল জব্বারের বলীখেলার পেছনের কথা।

চট্টগ্রামের বকশীর হাট বদরপাতির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সদাগর ১৯০৯ সালে লালদীঘির পাড়ে যে বলীখেলার প্রবর্তন করেছিলেন, তা আজ শতবর্ষ পেরিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। তাই জব্বারের বলীখেলা আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য, আমাদের অহংকার।

মোফাজ্জল হোসেন : গ্রন্থকার, গবেষক, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক

hmofazzal.satidp-gmail.com

মতামত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম