Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

বালাসুরের জাদুঘর

বিক্রমপুর জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিক্রমপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ঘুরে এসে লিখেছেন-

Icon

গাজী মুনছুর আজিজ

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা চারপাশ। তার মাঝে বিশাল পুকুর। পুকুরে ভাসছে সাম্পান নৌকা। শানবাঁধানো ঘাটও আছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার উত্তর বালাসুর গ্রামের এ পুকুর পাড়েই গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। পুকুর পাড়ে অনেক পুরনো বাড়িও আছে। এর কিছু বাড়ি পরিত্যক্ত। কিছু বাড়িতে লোক আছেন। পুরনো এ বাড়িগুলোর পাশেই নতুন ভবনে করা হয়েছে জাদুঘরটি। এছাড়া পুকুরে যে সাম্পান নৌকা ভাসানো এটা নৌকা জাদুঘরের প্রতীকী। এ জাদুঘর দেখতেই এক দুপুরে হাজির হই সেখানে।

গুলিস্তান থেকে আরাম বাসে আরাম করে রওনা হই সকালে। বুড়িগঙ্গা পার হয়ে বাস যখন কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা অতিক্রম করে, তখন থেকেই রাস্তার দু’পাশে দেখি কাশফুলের বাগান। যতদূর চোখ যায় কেবলই কাশফুল। সত্যিই অপূর্ব। ধলেশ্বরী সেতু পার হয়ে বাস চলে এগিয়ে। রাস্তার দু’পাশে তখন কেবলই বিল আর বিল।

ঘণ্টা দেড়েকের মাথায় বাস এসে থামে বালাসুর বাজার। নেমে হালকা নাশতা সেরে এখানকার সামাদ ভাইয়ের দোকানে গরুর দুধের চা খাই পরপর দু’কাপ। দারুণ স্বাদ। তারপর রিকশায় রওনা হই জাদুঘরের দিকে। ১৫ মিনিটের মাথায় এসে নামি জাদুঘরের সামনে।

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামের সংগঠন বিক্রমপুর জাদুঘর ও নৌকা জাদুঘর দুটি প্রতিষ্ঠা করে। বিক্রমপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণের লক্ষেই ১৯৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে এ সংগঠনটি। লৌহজংয়ের কনকসারে পাঠাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এর কার্যক্রম। সংগঠনের উদ্যোগে মুন্সীগঞ্জের মালপাড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে গবেষণা কেন্দ্র। এছাড়া ক্রমান্বয়ে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হল শ্রীনগরের রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ। এসব খননে প্রাচীন বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হয়েছে। পাওয়া গেছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক সেসব নিদর্শন এবং সংগঠনের উদ্যোগে সংগ্রহ করা নিদর্শন দিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। আর যেখানে জাদুঘরটি করা হয়েছে এটি জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিত্যক্ত বাড়ি। অগ্রসর বিক্রমপুর এ বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে এ জাদুঘর।

তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল দেখি। নিচতলার বাম পাশের গ্যালারিটি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, রাঘুরামপুর, নাটেশ্বরসহ বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া পোড়া মাটির নল, মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে।

নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি, বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।

দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল, তালপাতায় লেখা পুথি, কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।

বিক্রমপুর জাদুঘরের কর্ম অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, সামনে জাদুঘরে আরও নিদর্শন বাড়ানো হবে। এছাড়া নৌকা জাদুঘরের সাম্পান নৌকাটি আনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। খুব শিগগিরই নৌকা জাদুঘরে যোগ হবে ভাগ্যকুলের জমিদারের প্রাচীন নৌকা। ধীরে ধীরে এ পুকুরে ভাসানো হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা নকশার নৌকা। এটিই দেশের প্রথম নৌকার জাদুঘর। আর লৌহজংয়ে এগিয়ে চলছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ জাদুঘরের কাজ।

জাদুঘর দেখে আসি পুকুর ঘাটে। পুকুর, গাছগাছালি, জমিদার বাড়ি সব মিলিয়ে ছিমছাম ছায়াশীতল বালাসুর গ্রামখানি সত্যিই মায়াময়। কিছুটা সময় পুকুর ঘাটে বসে তারপর আসি উত্তর বালাসুর বাজার। সেখান থেকে রিকশায় বালাসুর বাসস্ট্যান্ড বাজারে। দুপুরের খাবার খাই একটি হোটেলে। তারপর এককাপ চা খেয়ে উঠি আরাম বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে।

প্রয়োজনীয় তথ্য : ঢাকার গুলিস্তান থেকে বালাসুরের উদ্দেশে আরাম বাস ছাড়ে কিছুক্ষণ পরপর। সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বালাসুর নেমে রিকশায় যাওয়া যাবে জাদুঘরে। খাওয়ার জন্য বালাসুর বা উত্তর বালাসুরে আছে কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ। জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ও ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার।

ছবি : লেখক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম