রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে ফিলিস্তিনের কী লাভ
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪০ পিএম
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ এইচ মানসুর সংস্থাটি সাধারণ পরিষদে ভোটের পর ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১২ সেপ্টেম্বর, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: আল-জাজিরা
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বে জাতিসংঘের সদস্য রয়েছে ১৯৩টি। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখনো স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,
ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এর মধ্যে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি
দিয়েছে। ফ্রান্সও স্বীকৃতি দেওয়ার পথে। বাকি থাকে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
এটিই সবচেয়ে বড় বাধা। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শুধু ‘লোক দেখানো’র জন্য
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
স্বীকৃতির ব্যাপারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এসব স্বীকৃতির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছুই হবে না।
বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে এবং নানা চুক্তি করতে পারবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
ফিলিস্তিন কি জাতিসংঘভুক্ত হতে পারবে?
গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামে এ প্রস্তাবটিতে ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ এবং ভোটদানে বিরত থাকে ১২টি দেশ। প্রস্তাবটি ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে উত্থাপিত হয়।

এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা না চাইলে কখনোই দ্বি-রাষ্ট্রীয়
সমাধান হবে না। জাতিসংঘ সনদের ৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো প্রস্তাব সাধারণ পরিষদে
পাস হওয়ার পর তা নিরাপত্তা পরিষদেও পাস হতে হয়। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ১০টি
ও স্থায়ী সদস্য ৫টি—মোট ১৫টি দেশ। এর মধ্যে ৯টি ভোট পেলেই প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে পাস
হবে। তবে শর্ত থাকে, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের সবাইকে প্রস্তাবটির পক্ষে
ভোট দিতে হবে।
মূল সমস্যা এখানেই। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষের সব উদ্যোগ থামিয়ে দেবে। এ কারণে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান কখনো আলোর মুখ দেখবে না এবং ফিলিস্তিন কোনোদিন জাতিসংঘভুক্ত হতে পারবে না।
-ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিদা আবু রাসনান দেশের স্বীকৃতি পেলেও ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘে নতুন কোনো বিশেষ অধিকার তৈরি হয় না। আবার এটি ফিলিস্তিনকে নতুন কোনো আন্তঃসরকারি সংস্থার সদস্যও করতে পারে না।
এই স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ব্যাপারটা কতটা গুরুত্ব বহন করে
তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ জনসাধারণের
চাপের মুখে দায়মুক্তির পথ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি
দিচ্ছে দেশগুলো। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এই স্বীকৃতি গুরুত্ব বহন করে।
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিদা আবু রাস আল-জাজিরাকে বলেন, এই স্বীকৃতি
বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এর মাধ্যমে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
স্বীকৃতি সরাসরি গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে না। তবে এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে
যে এসব দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে রাজি।
ফ্রিল্যান্স গবেষক ক্রিস ওসিয়েক আল-জাজিরাকে বলেন, যতক্ষণ না এই স্বীকৃতির
সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়—যেমন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা—ততক্ষণ তিনি আশাবাদী নন।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি আল-জাজিরাকে বলেন, আমার মনে হয় এটি মূলত প্রদর্শনমূলক (লোক দেখানো) একটি পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরে জনগণের চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাতে তারা দেখাতে পারে যে কিছু একটা করেছে বা বলেছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো বড় পদক্ষেপ নেয়নি।

স্বীকৃতিতে ফিলিস্তিনের লাভ কী?
বিভিন্ন দেশের এসব স্বীকৃতিতে প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনের খুব বেশি লাভ
নেই। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সদস্য হতে পারবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু রাস আল-জাজিরাকে বলেন, স্বীকৃতি পেলেও ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘে
নতুন কোনো বিশেষ অধিকার তৈরি হয় না। আবার এটি ফিলিস্তিনকে নতুন কোনো আন্তঃসরকারি সংস্থার
সদস্যও করতে পারে না—যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।
তবে বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক
সম্পর্ক বাড়াতে এবং নানা চুক্তি করতে পারবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বৈধতা দেয়।
এতে বিশ্বমঞ্চে ইসরাইলকে আর শুধু ‘সংঘাতরত পক্ষ’ নয়, বরং একটি দখলদার শক্তি হিসেবে
আরও স্পষ্টভাবে দাঁড় করায়।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে, তার ফলে ইসরাইল কূটনৈতিকভাবে
আরও বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয়
সমাধানের পথ আরও সহজ হয়ে উঠছে।



