হামাস। ছবি: বিবিসি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজা নিয়ন্ত্রণে এখন হামাসকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চার প্রতিপক্ষ গোত্র। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামাসের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগে গাজার অভ্যন্তরে নানা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও স্থানীয় এই প্রভাবশালী গোত্রের সশস্ত্র উত্থান শুরু হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় হামাসবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর বড় দুই দলই সরাসরি ইসরাইল মদদপুষ্ট।
আবু শাবাব
গোত্র
রাফাহ এলাকার
হামাসবিরোধী সবচেয়ে প্রভাবশালী আবু শাবাব গোত্র। ইয়াসের আবু শাবাব গোত্রটির প্রধান
নেতা। তিনি দক্ষিণ গাজার সেই অংশে কার্যক্রম চালান। আবু শাবাবের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের
তথ্যানুযায়ী, তিনি আকর্ষণীয় বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শত শত যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছেন। হামাসের
দাবি— এই গোত্রটি ইসরাইলকে গোপনে সহায়তা
করে। কিন্তু শাবাব গোত্র বিষয়টি অস্বীকার করে। গোষ্ঠীটি পালটা অভিযোগ করেছে— হামাস শুধু সহিংসতা চালায় এবং ভিন্নমত দমন
করে। আবু শাবাবের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০ বলে ধারণা করা হয়।
স্কাই নিউজের সাম্প্রতিক এক সরেজমিন প্রতিবেদনেও ইসরাইল-আল শাবাব ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ
স্পষ্ট।
দোগমোশ
গোত্র
গাজা উপত্যকার
অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী গোত্র দোগমোশ। ঐতিহাসিকভাবে এ গোত্রের সদস্যরা ভালোভাবে অস্ত্রশস্ত্রে
সজ্জিত। গোত্রনেতাদের মতে, ভূমিরক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ তাদের সংস্কৃতিরই
অংশ। তাদের সদস্যরা ফাতাহ ও বিদ্রোহী হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে
যুক্ত। মুমতাজ দোগমোশ এ গোত্রের প্রধান নেতাদের একজন। তিনি একসময় গাজা সিটিতে ‘পপুলার
রেজিস্ট্যান্স কমিটি’র সশস্ত্র শাখার নেতৃত্ব দিতেন।
২০২৩ সালের
৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকেই মুমতাজ দোগমোশ গা-ঢাকা দিয়েছিল। অতীতে হামাসের
সঙ্গে এ গোত্রের সংঘর্ষ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধবিরতির পর গাজা সিটিতে রোববার ও সোমবার হামাস
যোদ্ধাদের সঙ্গে দোগমোশ গোত্রের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের বহু সদস্য নিহত হন।
আল-মাজায়দা
গোত্র
দক্ষিণ
গাজার খান ইউনিস শহরকেন্দ্রিক বৃহৎ ও প্রভাবশালী গোত্র আল-মাজায়দা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে
হামাসের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে হামাস এই এলাকায় অভিযান চালায়।
তাদের দাবি, হামাস সদস্য হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতারে ওই অভিযান চালানো
হয়। এ সময় বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলে হামাস ও গোত্রের উভয়পক্ষেই কয়েকজন নিহত হন। তবে সোমবার
গোত্রপ্রধান হুসাম আল-আস্তাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে গাজায় আইনশৃঙ্খলা
বজায় রাখতে হামাসের নিরাপত্তা অভিযানকে সমর্থন জানিয়েছেন। আল-আস্তালের বিরুদ্ধে অনেক
আগে থেকেই ইসরাইল-সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে।
রামি হেলিস
হেলিস গোত্র
গাজা সিটির অন্যতম বৃহৎ পরিবার। গাজা সিটির শেজাইয়া এলাকায় অবস্থিত এই গোত্রের একজন
জ্যেষ্ঠ সদস্য রামি হেলিস। শেজাইয়ার আরেকটি প্রধান গোত্রের শীর্ষস্থানীয় আহমেদ জুনদিয়ার
সঙ্গে মিলে একটি নতুন গোষ্ঠী গঠন করেছেন। তারা হামাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে, বিশেষত ইসরাইলি
নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায়। ২০০৭ সালে হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই বারবার
হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে হেলিস। রাজনৈতিকভাবে ফাতাহ পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ,
যা হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করে বর্তমানে পশ্চিম তীর শাসন করছে। তবে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে
হেলিসরা ইসরাইলের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোর একটি কিনা বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
হামাসের
জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ
গাজার অভ্যন্তরে
এখন হামাসের শত্রু কেবল ইসরাইল নয়, নিজেদের ভেতরকার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও। স্থানীয় গোত্রীয়
শক্তি, ব্যক্তিগত সেনাদল ও পুরোনো সশস্ত্র সংগঠনগুলো হামাসের কর্তৃত্বে চিড় ধরাচ্ছে।
ফলে যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে, হামাসের
জন্য আবার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
