Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

২৬ এপ্রিল আরাগচি-উইটকফ বৈঠক

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে রোমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে রোমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষ

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে রোমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষ হয়েছে। এবার সম্ভাব্য একটি চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বৈঠকে বসতে চলেছে তেহরান ও ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি দল। শনিবার রোমে দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর এ তথ্য জানান ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। রোমে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি।

আরাগচি বলেন, পরবর্তী পর্যায়ের কারিগরি আলোচনা ওমানেই অনুষ্ঠিত হবে এবং ২৬ এপ্রিল সেখানে আবারও মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন তিনি ও উইটকফ।

রোমের কামিলুচ্চিয়া এলাকায় ওমানি দূতাবাসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও মার্কিন পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে দ্রুত একটি চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যদিও পাশাপাশি সামরিক হামলার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন।

ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আরাগচি বলেন, ‘আলোচনার পরিবেশ ছিল গঠনমূলক এবং এটি এগিয়ে যাচ্ছে বলা যায়। আমি আশা করি কারিগরি আলোচনার পর আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকবো।’

তিনি যোগ করেন, ‘এইবার আমরা কিছু মূলনীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভালো সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি।’

ইরানি কর্মকর্তারা জানান, আলোচনাগুলো ছিল পরোক্ষ, যেমনটা ছিল গত সপ্তাহান্তে ওমানের মাসকটে। সেসময় ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন।

দীর্ঘদিনের শত্রুতার ইতিহাস সত্ত্বেও এই আলোচনা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ও তেহরানে মার্কিন দূতাবাস জিম্মি সংকটের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শত্রুতামূলক। ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং তা আজ পর্যন্ত নানা আলোচনা ও হামলার মধ্য দিয়ে চলেছে।

এই আলোচনার পেছনে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা। ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা রয়েছে, আবার তেহরানও পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের হুমকি দিয়ে আসছে। পাশাপাশি, গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েমেনে ইরানঘেঁষা হুথি বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলায় ৭০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ায় পুরো অঞ্চলই টালমাটাল।

ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, ‘আমি শুধু চাই ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র না পায়। আমি চাই ইরান হোক মহান, সমৃদ্ধ এবং চমৎকার।’

আলোচনার আগে শনিবার সকালে আরাগচি ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাযানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাযানি বলেন, ইতালি চাইলে এই আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে প্রস্তুত, এমনকি কারিগরি পর্যায়েও।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ওইদিন তাযানির সঙ্গে বৈঠক করেন। কোনো চুক্তি হলে ইরানের কার্যক্রম তদারকিতে গ্রোসির সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, যেমনটা ছিল ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে।

আরাগচি ও উইটকফ উভয়েই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে সফরে ছিলেন। উইটকফ প্যারিসে ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনায় ছিলেন, আর আরাগচি মস্কো গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি নতুন কোনো চুক্তি হয়, তাহলে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্ত রাশিয়া আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাশিয়া হয়তো ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, যা থেকে অস্ত্র-মানের (৯০ শতাংশ) ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা শুধু একটি কারিগরি ধাপের বিষয়।

প্রথম দফার আলোচনা ওমানের মাসকটে হয়, যেখানে আরাগচি ও উইটকফ সরাসরি মুখোমুখি হন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমান দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যকার মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছে।

তবে আলোচনা শুরুর আগে একটি বিষয় নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। উইটকফ প্রথমে বলেন, ইরান ৩.৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে, পরে বলেন, সব ধরণের সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী শামখানি এক্সে লেখেন, লিবিয়ার মতো পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ বা বিদেশে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহারের মতো কোনো প্রস্তাব ইরান গ্রহণ করবে না।

তিনি লিখেন, ‘ইরান আত্মসমর্পণ নয়, ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি করতে এসেছে।’

এদিকে, ইরানের অর্থনীতি এখনও বিপর্যস্ত। দেশের ভেতরে বাধ্যতামূলক হিজাব আইনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা রয়েছে। একইসঙ্গে সরকার গ্যাসোলিনের ভর্তুকি কমানোর যে গুঞ্জন উঠেছে, সেটিও অতীতে বিক্ষোভ ডেকে এনেছিল। সম্প্রতি ইরানি মুদ্রা রিয়াল মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১০ লাখের ওপরে পৌঁছেছিল। আলোচনার খবরে রিয়ালের মান কিছুটা বেড়েছে, যেটি তেহরান ধরে রাখতে চায়।

এছাড়া, সম্প্রতি চীনের হাইনান এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন দুটি এয়ারবাস এ৩৩০-২০০ বিমান তেহরানে পৌঁছেছে, যেগুলো মাসকট হয়ে রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন করে ইরানে আনা হয়। এসব বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি রোলস-রয়েসের তৈরি ইঞ্জিন রয়েছে, যার জন্য মার্কিন ট্রেজারির অনুমোদন প্রয়োজন। যদিও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে ইরান নতুন বিমান কেনার সুযোগ পেয়েছিল এবং সে সময় তারা এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের হুমকির কারণে নির্মাতারা সেই চুক্তি থেকে সরে যায়।

ইরান পরমাণু কর্মসূচি রোম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম