Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ০১:২৮ পিএম

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব

দীর্ঘ ২০ মাসের যুদ্ধে গাজা বর্তমানে এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। ফাইল ছবি

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত করেছে।একই সঙ্গে এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুরূপ একটি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে অনানুষ্ঠানিক (বাধ্যতামূলক নয়) এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ১৪৯টি দেশের পক্ষে ভোটে। বিপক্ষে ভোট দেয় ১২টি দেশ এবং ১৯টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। একই সঙ্গে, সকল বন্দিকে অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। তবে এই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোপ্রাপ্ত প্রস্তাবটির চেয়েও বেশি কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছে—বিশেষ করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে ইসরায়েলের বাধার বিষয়ে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলকে অবিলম্বে অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং গাজার সমগ্র ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিতে হবে।  দীর্ঘ ২০ মাসের যুদ্ধে গাজা বর্তমানে এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।  


এছাড়া এতে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পৃথকভাবে ও সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইসরাইলকে তার দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে।

ভোটের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘে ইসরাইলের স্থায়ী প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন এই প্রস্তাবকে প্রহসন, নৈতিক দেউলিয়াত্ব ও রাজনৈতিক নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

অপরদিকে, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ভোটকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন চালাতে যেন কোনো অস্ত্র, অর্থ বা বাণিজ্য না যায়।

প্রস্তাবটিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দেওয়াকে কঠোরভাবে নিন্দা জানানো হয়।

জিএইএফ পুরোপুরি ব্যর্থ: জাতিসংঘ

সম্প্রতি ইসরাইল তার পূর্ণাঙ্গ অবরোধ কিছুটা শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন ( জিএইএফ)-এর মাধ্যমে সীমিত সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়।

তবে জাতিসংঘ বলেছে, জিএইচএফ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএর মুখপাত্র জেন্স লারকে জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জিএইএফ মানবিক সহায়তা কর্মসূচির মতো কাজ করছে না। মানবিক সহায়তার মূলনীতি হচ্ছে—মানুষ যেখানে আছে, সেখানে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তারা সেটা করছে না।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের সহায়তা—খাদ্য ও অন্যান্য জিনিস—প্রস্তুত আছে। সেগুলো অঞ্চলেই আছে, এমনকি ইসরাইল কর্তৃপক্ষ সেগুলোর জন্য প্রাক-অনুমোদনও দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সীমান্ত খুলে দিতে হবে এবং গাজার ভেতরে সহায়তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে।

জিএইচএফ একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে ২৬ মে, যখন ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই মাসের সম্পূর্ণ অবরোধ শেষে কিছুটা ঢিল দেয়। এই ফাউন্ডেশন দাবি করেছে, তারা বৃহস্পতিবার একদিনেই প্রায় ২৬ লক্ষ খাবার বিতরণ করেছে এবং এখন পর্যন্ত মোট বিতরণ হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লক্ষেরও বেশি।

তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা গাজা হিউমানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এই সংস্থা ইসরায়েলের সামরিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এর কার্যক্রম নিরপেক্ষ নয়।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মানবিক কাজ স্থবির

এদিকে, গাজার শেষ ফাইবার অপটিক ক্যাবলে হামলার ফলে বৃহস্পতিবার অঞ্চলটিতে ইন্টারনেট এবং ল্যান্ডলাইন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

জেন্স লারকে বলেন, গাজায় বর্তমানে এক ভয়াবহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, যখন যোগাযোগ থাকে না, তখন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম কার্যত থমকে যায়।

তিনি জানান, এই সমস্যার সমাধানে সকলে কাজ করছে। কারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সবকিছুই কার্যত স্থবির হয়ে যায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম