Logo
Logo
×

মধ্যপ্রাচ্য

হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বের কী ক্ষতি হবে?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম

হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বের কী ক্ষতি হবে?

হরমুজ প্রণালি পাড়ি দিচ্ছে একটি তেল ট্যাংকার। ছবি: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় সরাসরি বোমা হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অভ্যন্তরে সামরিক হামলা চালাল। তেহরান পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দেওয়ার পর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে।

হরমুজ প্রণালি কি পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র?

রোববার ইস্তান্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে।

তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরান প্রতিশোধের অংশ হিসেবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে — এমন একটি সমুদ্র পথ যা দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের মোট তেলের ২০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ব্যারেল পরিবাহিত হয়।

এই প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম দ্রুত বেড়ে যাবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইরান কি সত্যিই প্রণালি বন্ধ করতে পারবে?

হরমুজ প্রণালি ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত, এবং এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানেও প্রণালিটির প্রস্থ ৩৩ কিমি।

ইরান অতীতে বহুবার এ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু কখনোই তা কার্যকর করেনি। ইরানের সংসদীয় জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কোসারি বলেছেন, আমরা প্রণালি বন্ধের প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি, শুধু বলেন, ইরানের হাতে বিকল্পের অভাব নেই।

বন্ধ হলে বাস্তবে কী ঘটবে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি প্রণালি বন্ধ করে তাহলে: 

  • তারা হয়তো সমুদ্র মাইন বসাতে পারে;
  • বিপজ্জনকভাবে নৌপথে আক্রমণ বা জাহাজ আটক করতে পারে;
  • ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’-এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 


বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেন, ‘এটি ইরানের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার শামিল হবে।’ তিনি চীনের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ইরানকে প্রণালি বন্ধ করা থেকে বিরত রাখে। চীন বর্তমানে ইরানের ৯০ শতাংশ তেল রপ্তানি গ্রহণ করে (প্রায় ১৬ লাখ ব্যারেল প্রতিদিন)।

গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে, যদি হরমুজ বন্ধ হয়, তেলের দাম ১০০ ডলারের ওপরে চলে যেতে পারে। এর ফলে:

  • খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকসহ জ্বালানি-নির্ভর পণ্যের দাম বাড়বে;
  • আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে; 
  •  কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাতে বিলম্ব করতে পারে;

ইতিহাস কী বলে?

যুদ্ধ বা বড় আকারের সংঘর্ষের সময় তেলের দাম কিছু সময়ের জন্য বেড়ে গেলেও, পরে তা আবার স্থিতিশীল হয়ে যায়। ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ শুরুর আগে তেলের দাম ৪৬% বেড়ে যায়, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পরপরই কমতে থাকে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে দাম ১৩০ ডলারে পৌঁছালেও কিছু মাসের মধ্যে তা ৯৫ ডলারে নেমে আসে।

ইরান যদি সত্যিই হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলো এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন বাড়তি চাপের মুখে রয়েছে।

এই প্রণালি এখন পরিণত হয়েছে কেবল একটি ভূগোলিক প্যাসেজ নয়, বরং একটি ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু।

আল-জাজিরা থেকে অনূদিত।  

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান-ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম