Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

মা ও শিশুস্বাস্থ্যে টিকার গুরুত্ব

Icon

ডা. মালিহা শিফা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মা ও শিশুস্বাস্থ্যে টিকার গুরুত্ব

টিকা মূলত আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। শিশু জন্মের পরপরই সংক্রামক রোগ যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাম, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদির শিকার হতে পারে। এসব রোগ অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়। আবার গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে টিটেনাস টিকা জরুরি, কারণ এটি মা ও নবজাতককে মারাত্মক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই টিকা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রথম ঢাল।

* বাংলাদেশে সরকারি টিকাদান কর্মসূচি কতটা সফলভাবে চলছে

বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি (EPI) এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সফল একটি কর্মসূচি। এখানে শিশুদের ১২টি প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। বর্তমানে শিশুদের টিকাদান কভারেজ ৯০ শতাংশেরও বেশি, যা একটি বিশাল অর্জন। টিকাদানের কারণে বাংলাদেশে হাম ও ডিপথেরিয়ার মতো রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

* টিকা দিলে কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়

অনেক অভিভাবকের এ নিয়ে ভয় আছে। টিকা দেওয়ার পর কিছু সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে-যেমন হালকা জ্বর, ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা বা ফোলা। এগুলো খুবই স্বাভাবিক এবং কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়। এগুলো ক্ষতিকর নয়, বরং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে তারই প্রমাণ। কিন্তু টিকা না নিলে শিশুটি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত ভয় না পেয়ে শিশুদের সময়মতো সব টিকা দেওয়া।

* গর্ভবতী মায়েদের জন্য টিকার গুরুত্ব কতটা

গর্ভবতী মায়েদের জন্য টিকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে টিটেনাস টিকা মা ও নবজাতককে মারাত্মক টিটেনাস রোগ থেকে বাঁচায়। আগে বাংলাদেশে অনেক নবজাতক টিটেনাসে মারা যেত, কিন্তু এখন টিকাদানের কারণে প্রায় নির্মূল হয়েছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা নিয়মিত টিকা নিলে তার শরীরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, যা শিশুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* বাংলাদেশে টিকা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী কী

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো-প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় টিকা পৌঁছে দেওয়া। পাহাড়ি বা চরাঞ্চলে অনেক সময় স্বাস্থ্যকর্মী সময়মতো পৌঁছাতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, কিছু অভিভাবকের মধ্যে এখনো টিকা নিয়ে গুজব ও ভুল ধারণা আছে। তৃতীয়ত, কিছু বিশেষ পরিস্থিতি যেমন মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, এনজিও এবং স্থানীয় জনগণ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

* শিশুর টিকাদানের পাশাপাশি কি কিশোর-কিশোরীদের জন্যও টিকা জরুরি

অবশ্যই। কিশোর-কিশোরীদের জন্যও কিছু টিকা জরুরি। যেমন-HPV ভ্যাকসিন কিশোরীদের জন্য জরুরি, কারণ এটি ভবিষ্যতে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। একইভাবে হেপাটাইটিস-বি টিকা যুব সমাজকে লিভারের মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই শুধু শিশু নয়, কৈশোর ও যৌবনকালেও টিকা গুরুত্বপূর্ণ।

* টিকা নেওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে মা ও শিশু কী ধরনের সুফল পায়

টিকা নেওয়ার ফলে মা ও শিশু রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে, ফলে হাসপাতাল ভর্তি ও চিকিৎসার খরচ কমে যায়। পরিবার আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচে। শিশুর পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা ব্যাহত হয় না। দীর্ঘমেয়াদে টিকা একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম প্রজন্ম গড়ে তোলে, যারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

* সম্প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এ অভিজ্ঞতা আমাদের নিয়মিত টিকাদানে কী প্রভাব ফেলতে পারে

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আমাদের দেখিয়েছে, জরুরি সময়ে মানুষ একসঙ্গে কীভাবে টিকা নিতে পারে। এটি টিকা বিষয়ে আস্থা বাড়িয়েছে। তবে নিয়মিত শিশুর টিকা যেন বাদ না যায়, সেটি আরও বেশি নজরদারির প্রয়োজন। কোভিড টিকাদান অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখেছি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন ও মনিটরিং করলে অনেক সহজ হয়। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের টিকাদান কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করবে।

* অভিভাবক ও সমাজের করণীয় কী

প্রথমত, অভিভাবকদের উচিত শিশুকে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সব টিকা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতা করা। তৃতীয়ত, গুজবে কান না দিয়ে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে সচেতনতা বাড়াতে।

আমরা যদি সবাই টিকা বিষয়ে সচেতন হই এবং সরকারের দেওয়া টিকা কর্মসূচিকে সমর্থন করি, তবে বাংলাদেশকে টিকা প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে মুক্ত করা সম্ভব।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম