Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নাকি সাধারণ ভাইরাল ফিভার

Icon

ডা. এএসএম মাহমুদুজ্জামান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নাকি সাধারণ ভাইরাল ফিভার

এখন ঘরে ঘরে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। শিশুর জ্বর-ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নাকি কেবল সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর, তা কীভাবে বুঝবেন? প্রথমেই জানা দরকার ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। তাই অন্য ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে এগুলোর পার্থক্য সব সময় স্পষ্ট নয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় হয় উপসর্গ ও শারীরিক পরীক্ষা করে। পরীক্ষার ফলের ওপর রোগ শনাক্ত করা যায়, তবে কেবল নেগেটিভ রিপোর্ট দেখে নিশ্চিন্ত হওয়া ঠিক নয়।

* কীভাবে আলাদা করবেন

ডেঙ্গুতে জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখের চারপাশ ব্যথা এবং পেশিতে ব্যথা দেখা দেয়। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ত্বকে লালচে র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় নাক দিয়ে বা চোখের কনজাংটিভা থেকে সামান্য রক্তক্ষরণ হয়, রক্তচাপ কমে আসে। রক্ত পরীক্ষায় ডাবলিওবিসি (শ্বেতরক্তকণিকা) ও প্লেটলেট কমে যাওয়া, হিমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়া-এসব ডেঙ্গুর গুরুতর লক্ষণ।

চিকুনগুনিয়ায় জ্বরের সঙ্গে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়, কখনো জয়েন্ট ফুলেও যায়। এ রোগের শুরুতেই ত্বকে লালচে র‌্যাশ দেখা দিতে পারে, যা ডেঙ্গুর তুলনায় দ্রুত আসে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় লিম্ফোসাইট কমে যেতে পারে। তবে রক্তক্ষরণ বা প্লাজমা লিকেজের মতো জটিলতা হয় না।

চিকিৎসকরা উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ চিহ্নিত করেন। সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, চিকুনগুনিয়ায় লিম্ফোসাইটের (এক ধরনের শ্বেতরক্তকণিকা) সংখ্যা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, ডেঙ্গুতে মোট ডাবলিওবিসি (শ্বেতরক্তকণিকা) ও প্লেটলেট (অণুচক্রিকা) হ্রাস পায়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আরও গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন-শরীরে প্লাজমা লিকেজ, হিমাটোক্রিটের পরিবর্তন। কেবল পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হয় রোগীর অবস্থা ও জটিলতার লক্ষণের ওপর।

* চিকিৎসা ও করণীয়

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসার পদ্ধতি প্রায় একই-

▶ যথেষ্ট বিশ্রাম নিশ্চিত করা।

▶ জ্বর কমাতে কেবল প্যারাসিটামল ব্যবহার করা।

▶ পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়ানো।

▶ সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া।

▶ শিশু মায়ের দুধ খেলে তা অব্যাহত রাখা।

শিশু খেতে না চাইলে বারবার অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে। শরীর স্পঞ্জ করা বা ব্যথার স্থানে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। তবে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যাবে না। ভাইরাসজনিত রোগ বলে অ্যান্টিবায়োটিকেরও কোনো ভূমিকা নেই।

* যা খেয়াল রাখতে হবে

▶ শিশুর রক্তচাপ বা পালস হঠাৎ কমে যাওয়া।

▶ নিস্তেজ বা অচেতন হয়ে পড়া।

▶ পানিশূন্যতা।

▶ শরীরের ভেতরে বা বাইরে রক্তক্ষরণ।

▶ বমি বা পেটে ব্যথা।

এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে অধিকাংশ শিশুই জটিলতা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে।

* মনে রাখবেন

এ মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ফ্লু জাতীয় অন্য ভাইরাল জ্বরও ছড়াচ্ছে। যদি জ্বরের সঙ্গে নাক বন্ধ, সর্দিকাশি বা গলাব্যথা থাকে তবে তা সাধারণ ফ্লু হতে পারে। তাই শিশুর জ্বর হলে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকুন। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ফ্লু যেটাই হোক না কেন, প্রাথমিক পরিচর্যার নিয়ম প্রায় একই। জটিলতা না থাকলে বাড়িতেই সঠিক যত্নে শিশুকে সুস্থ করা সম্ভব। তবে রক্তচাপ, পানিশূন্যতা ও জটিলতার লক্ষণগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে অথবা কাছের কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসতে হবে। শিশুর জ্বর মানেই আতঙ্ক নয়, সচেতনতা আর যত্নই হলো সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। চেম্বার : হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., শ্যামলী, মিরপুর রোড, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম