পশুর হাটে যাওয়ার আগে ও পরে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
ডা. তাওমীদ কামাল
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুরবানির ঈদে ধর্মীয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি পশু কেনার জন্য সবাইকে হাটে যেতে হয়। কিন্তু হাটে যাওয়া মানেই শুধু পশু কেনা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ঝুঁকি। তাছাড়া গরুর হাটে সংক্রমণ ছড়ানো বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে জুনোটিক ডিজিজ (জানোয়ার থেকে মানুষের মাঝে সংক্রমণ)-এর ঝুঁকিও থাকে।
* হাটে যাওয়ার আগের প্রস্তুতি
▶ শারীরিক প্রস্তুতি : শরীর সুস্থ আছে কিনা পরীক্ষা করুন। জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, চোখের সমস্যা থাকলে হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ও স্যানিটাইজার সঙ্গে নিন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখুন।
▶ মানসিক প্রস্তুতি : ভিড়, গরম, পশুর শব্দ এবং বিক্রেতাদের আচরণে ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ অযথা তর্কে জড়ালে শান্ত থাকুন এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন।
▶ পোশাক ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি : সাধারণ ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। ট্রাউজার ও টিশার্ট বা পাঞ্জাবি পরা ভালো, যাতে ভিড়ে স্বাচ্ছন্দ্য থাকে। স্যান্ডেল বা ট্রেকিং স্যান্ডেল, যা কাদা ও গোবরযুক্ত জায়গায় ফেলা যাবে না এমনটা ব্যবহার করুন। বৃষ্টির মৌসুমে ছাতা এবং গরমে পানি থাকা জরুরি।
* হাটে অবস্থানকালে করণীয়
▶ সংক্রমণ প্রতিরোধ : মাস্ক পরিধান অব্যাহত রাখুন এবং ভিড়ের মাঝে মাস্ক না খুলে কথা বলবেন না। হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করবেন না। পশু স্পর্শ করার পর বা টাকা লেনদেনের পর অবশ্যই স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন।
▶ পশু নির্বাচনে সতর্কতা : সুস্থ পশু নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। রোগাক্রান্ত পশু যেমন, অতিরিক্ত লালা ঝরা, পা ভাঙা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থাকলে কিনবেন না। অতিরিক্ত বাহারি পশুতে লোভে পড়বেন না, যেমন- রং করা, দাঁতের সমস্যা থাকা বা ওষুধ খাইয়ে মোটা করা পশু দেখলে এড়িয়ে চলুন।
* হাট থেকে ফেরার পরে করণীয়
নিজেকে পরিষ্কার করুন : বাড়িতে ফেরার পর প্রথমেই পোশাক খুলে ফেলুন এবং ভালোভাবে গোসল করুন। গরু স্পর্শ করার কারণে জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলুন।
* পশুর জন্য প্রস্তুতি
পশুর বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, ছায়া ও পানি নিশ্চিত করুন। পশুকে দুই তিন দিনের মধ্যে পশু চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন যদি অসুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখা দেয়।
* সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতা অব্যাহত রাখা
পরিবারের ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ বা রোগপ্রবণ ব্যক্তিদের পশুর খুব কাছাকাছি যেতে না দেওয়া ভালো। পশুর মলমূত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করুন।
* সম্ভাব্য রোগ
▶ অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) : গরু বা ছাগলের দেহে ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত ইত্যাদি।
▶ ব্রসেলোসিস : পশু থেকে মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয়, জ্বর ও ক্লান্তির সৃষ্টি করে।
▶ রিংওয়ার্ম, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ : সংক্রামক রোগ যা গৃহপালিত পশুদের মধ্যে সাধারণ সমস্যা।
* সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ
▶ পশুকে হাত লাগানোর পরপরই হাত ধোয়া।
▶ পশুর ক্ষত, রক্ত, বা অন্য শারীরিক তরল পদার্থ থেকে দূরে থাকা।
▶ গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করে পশু পরিষ্কার ও যত্ন নিন।
* সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা
▶ ভিড়ের মাঝে ঠেলাঠেলি না করা, অন্যদের সহনশীলভাবে চলতে দেওয়া।
▶ যত্রতত্র পশু জবাই না করে নির্দিষ্ট স্থান ও সময় অনুসরণ করুন।
* বিকল্প ব্যবস্থা
করোনা মহামারির সময় থেকেই অনেকে অনলাইন পশুর হাট ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছেন। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে কুরবানির পশু কেনা অনেক সহজ ও নিরাপদ। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে-ঘরে বসে পশু দেখা ও অর্ডার দেওয়া যায়, প্রতারণার আশঙ্কা কম, যদি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন, পশু ডেলিভারি ও জবাই সার্ভিসও অনেক ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়।
হাটে গিয়ে সঠিকভাবে পশু নির্বাচন এবং তা ঘরে নিয়ে এসে যত্নের সঙ্গে কুরবানি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে হাটে গিয়ে একটু অবহেলা করলেই আপনি অথবা আপনার পরিবার বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন-স্বাস্থ্য, আর্থিক বা সামাজিকভাবে। তাই নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে হাটে যাওয়ার আগে ও পরে যথাযথ সতর্কতা গ্রহণ করা আবশ্যক।
লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ।
