এবারও নজর কম শেয়ারবাজারে
মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমল * পুঁজিবাজার এবং বাইরের কোম্পানির করের পার্থক্য বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ
মনির হোসেন
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের সম্ভাবনাময় শেয়ারবাজার এখন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিরক্তির কারণ, অর্থনীতির ক্ষত এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে আতঙ্কের। সবকিছু মিলে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে বাজার। টানা পতনে বিনিয়োগকারীরা বিপর্যস্ত। বছরের বেশির ভাগ সময়ই লেনদেনে খরা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ভরসা ছিল বাজেট। ধারণা ছিল সরকার বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রাখবে। কিন্তু ফলাফল মোটামুটি শূন্য। এ বার্তার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের খুব বেশি ভাববার সময় কোথায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক নানা বিষয় মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারের কাছে অনেক আগেই শেয়ারবাজারের গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে বাজেটেও তেমন গুরুত্ব পায়নি এ বাজার।
করপোরেট করে এমন গোঁজামিল দেওয়া হয়েছে, যা শেয়ারবাজারের জন্য অশনিসংকেত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে মূলত তিন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সরাসরি বরাদ্দ, কর কমানো কিংবা বাড়ানো এবং সংস্কারের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরের মতো এবারও বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াবে, এমন কোনো পদক্ষেপ আসেনি।
পুঁজিবাজারে সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির করের পার্থক্য ৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে তা সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেনের ওপর কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে ব্রোকারেজগুলো শেয়ার লেনদেন করলে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে ১ লাখ টাকা লেনদেন করলে ৫০ টাকা কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ১০০ টাকা মুনাফার বিপরীতে সাড়ে ৩৭ টাকা কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা কাউকে শেয়ার দিতে চাইলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে কেউ ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের শেয়ার দিতে চাইলে কর দিতে হবে না। এ বছর সেখানে আপন ভাই ও বোন যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাই এবং বোনকে শেয়ার হস্তান্তর করলে তাকে কর দিতে হবে না। চলতি অর্থবছরে কেবল তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে এ নিয়ম ছিল। এ বছর মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার হস্তান্তর করলেও ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফা (ক্যাপিটাল গেইন) করলে কোনো কর দিতে হয় না। ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে বাকি টাকার জন্য কর দিতে হয়। আগে টাকা আয়করের স্তরে ফেলে কর দিতে হতো। কিন্তু নতুন নিয়মে বাকি সব টাকার জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এর মানে হলো, এ খাতে করের হার বেড়েছে। চলতি অর্থবছর থেকেই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স কার্যকর করা হয়। আর বাজারে দরপতনের অনেক কারণের মধ্যে এটাও অন্যতম। কেননা অনেক বড় বিনিয়োগকারী বাজার থেকে বেশি মুনাফা করেন। এর মধ্যে অনেকে নিজের নামে নয়, বেনামে শেয়ার কেনাবেচা করেন। তাই তাদের কর দিতে হয় না। কিন্তু নতুন করে করারোপ করা হলে পর্দার আড়ালে থাকা রাঘববোয়ালরা চিহ্নিত হয়ে যাবে। তবে এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
সিডিবিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬৩২টি। আর কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৪ হাজার। অর্থাৎ বর্তমানে মোট সক্রিয় বিনিয়োগকারীর ১ শতাংশ কোটিপতি। এসব কোটিপতির অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক। তারা বিভিন্ন সময়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা নেন। তারাই কেবল ৫০ লাখ টাকার ওপরে মুনাফা করেন। ফলে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে আতঙ্ক অন্য জায়গায়। মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপের মাধ্যমে বিও অ্যাকাউন্টে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
